অপেক্ষা করতে হল ২৮ বছর!
কোপা আমেরিকা জিতে দীর্ঘ এই কাপ খরা করতে পেরেছে আর্জেন্টিনা। অনেক ব্যর্থতা, হতাশা, দুঃখ, অভিমান আর অপেক্ষার দিন গলার পর তারা আজ আনন্দের প্লাবনে ভাসছে। তীব্র আকাঙ্ক্ষিত এই সাফল্য পাওয়ার লড়াইয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিওনেল মেসি।
বাঁধভাঙা উল্লাসে ভেসেই চলেছেন এম এল টেন। আর তা গোটা বিশ্বকে জানান দিতে, তিনি বেছে নিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইন্সটাগ্রামকে। সেখানে পরম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় তিনি স্মরণ করেছেন প্রয়াত কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনাকেও।
আরও পড়ুন – Copa America: মেসির স্বপ্ন পূরণ, কাপ আর্জেন্টিনার
এত লম্বা ইন্সটাগ্রাম বার্তা আগে কখনও মেসি লিখেছেন কিনা – মনে পড়ে না। বোঝা যাচ্ছে, দেশকে একটা খেতাব জেতানোর জন্য এতোদিন কিভাবে মুখিয়ে ছিলেন। স্বপ্ন পূরণে তাই মেসি আজ আনন্দে বাঁধন হারা।
১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রায় একার দক্ষতায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন বিশ্ব ফুটবলের যুবরাজ মারাদোনা । সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর সব মায়ার জাল ছিঁড়ে চলে যান দুনিয়ে থেকে। ডাক্তারি ভাষায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬০ বছর বয়সেই নিভে গিয়েছে তাঁর জীবনদীপ।
এবারের কোপা আমেরিকার শুরুতে মেসিরা মারাদোনাকে স্মরণ করেই খেলা শুরু করেছিল। মারাদোনা কোনোদিন কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্টটি খেলেননি। সেই টুর্নামেন্ট জিতে আবেগে ভাসছেন, মেসি।
আরও পড়ুন- বার্সার আর্থিক জটিলতাই বাড়াচ্ছে মেসি জট
মারাদোনার কথা এই পোস্টে উল্লেখ করার পাশাপাশি মেসি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাঁদের প্রতি, যাঁরা কঠিন সময়ে তাঁকে আর আর্জেন্টিনাকে সমর্থন জুগিয়ে গেছেন। সতীর্থদের নৈপুণ্য নিয়ে গর্বিত এই তারকা ফুটবলারটি আনন্দকে করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তিতে পরিণত করতেও ডাক দিয়েছেন ।
রবিবার মারাকানা স্টেডিয়ামে কোপার ফাইনালে স্বাগতিক ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। এরপর ইন্সটাগ্রামে তিনি লিখেছেন, ‘এটা ছিল অসাধারণ এক কোপা আমেরিকা। আমরা জানি, আরও অনেক উন্নতি করার কাজ বাকি । তবে অনুভূতি বলছে, নিজেদের নিংড়ে দিয়েছে দলের প্রত্যেকে। এমন দুর্দান্ত এক দলের অধিনায়ক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনের করে অনেক বেশি গর্বিত আমি।
এই সাফল্য আমি উৎসর্গ করতে চাই আমার পরিবারকে যারা আমাকে সবসময় এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দিয়েছে। আমার বন্ধুদেরকে যাদের আমি দারুণ ভালোবাসি । এবং সর্বোপরি আর্জেন্টিনার সাড়ে চার কোটি মানুষকে যারা (করোনা) ভাইরাসের কারণে কঠিন সময় দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে, তাদেরকে যারা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই কাপ আপনাদের সবার জন্য।’
এরপরই লেখেন সেই লাইন ক’টি: ‘আর অবশ্যই এটা দিয়েগোর জন্যও। উনি যেখানেই থাকুন না কেন আমাদের সমর্থন করেছেন।’
এই ট্রফি জয়ের উদযাপনের মাঝে সকলকে সচেতন থাকতে বলেছেন মেসি। মনে করিয়েছেন এই বলে যে, ‘স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে আরও অনেক সময় লাগবে। আশা করছি, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করার শক্তি অর্জন করতে আমরা এই কাপ জয়ের আনন্দের যথা যোগ্য ব্যবহার করতে পারব।’
আর্জেন্টিনায় মেসিরা, যেন ‘উৎসবের দেশ’
লিওনেল মেসির জীবনের উত্থান-পতন খুব কাছ থেকে দেখে চলেছেন স্ত্রী আন্তনেল্লা রোকুজ্জো। সবসময় আর্জেন্টাইন এই ফুটবল তারকার ছায়া হয়ে সঙ্গে মিশেই আছেন তিনি। ক্লাব ক্যারিয়ারে মেসির সাফল্য নিয়ে সময়ই গর্ব করেন রোকুজ্জো। তবে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির শূন্য হাতে থাকটা কখনোই পছন্দ করতেন না তিনি। অবশেষে তাঁরও সেই আক্ষেপ ঘুচল।
এবারের কোপা জিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আর্জেন্টিনার সমর্থকদের পাশাপাশি মেসি হাসি ফুটিয়েছেন নিজ পরিবারেও। মাঠে একদিকে সরে গিয়ে, মেসি হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কল করেছিলেন। নিজের গলায় ঝোলানো, কোপার চ্যাম্পিয়ন লেখা মডেলটা বারবার দেখাতে থাকেন স্ত্রী আর দুই বড় ছেলেকে।
আর দেশে ফিরতেই স্ত্রী রোকুজ্জোর তাঁকে যেভাবে অভিনন্দন জানান, বোঝাই যাচ্ছিল তাঁরও তর সইছিল না। ব্রাজিল থেকে রবিবারই দেশে ফেরেন মেসিরা। বিমানবন্দরে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন মেসির স্ত্রী রোকুজ্জো। মেসিকে সামনে পেয়ে দৌঁড়ে গিয়ে তাঁর কোলে উঠে যান। প্রিয় মানুষকে কাছে পেয়ে আত্মহারা রোকুজ্জো। একের পর এক চুমু এঁকে দেন জাতীয় বীরের শরীরে।
দীর্ঘ ২৮ বছরের কাপ বা ট্রফির খরা কেটে যাওয়াতেই আর্জেন্টিনায় মেতে উৎসবে। বিমানবন্দর থেকে মেসিদের তোলা হয় ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা দুটি বাসে। সেই বাসে করে পুরো বুয়েন্স আয়ার্স চক্কর মারেন মেসিরা। পথের ধারে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ অভিনন্দন জানালেন মেসিদের। তবে এমন আনন্দের দিনে তারা ভুলে যাননি দিয়েগোকে। ফুটবল ঈশ্বরের ছবি নিয়েই আনন্দ-উৎসব করছেন অনেক আর্জেন্টাইনরা। তাই আজ, ২৮ বছরেন দুঃখ ভুলে গিয়ে আর্জেন্টিনা এখন পরিণত হয়েছে এক উৎসবের দেশে।
ছবি: সৌ – ট্যুইটার।