বাঁকুড়া : গ্রামের মাঝে সাদামাটা একটি মাটির বাড়ি৷ মাথায় অ্যাসবেস্টসের ছাদ৷ বাড়িতে থেকে ইলেকট্রনিক্স জিনিস সারানোর কাজ করে দুই ভাই৷ বাঁকুড়ার ধোবা গ্রামের মানুষ এমনটাই জানতেন৷ হঠাৎই সেই বাড়ির দুই ভাই গ্রেফতার হল৷ জানা গেল ই-ওয়ালেট বানিয়ে প্রতারণার আন্তর্জাতিক চক্র চালাত দুই ভাই৷
প্রতারণা কাণ্ডে ধৃত মূল পাণ্ডা অভিজিৎ মন্ডল এবং অভিষেক মন্ডলকে জিজ্ঞেস করে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিমি দূরের একটি গ্রামে এই মাটির বাড়িতেই চলত প্রতারণা চক্র। বাঁকুড়া সদর থানার ধোবার গ্রামে সাদামাটা এই মাটির বাড়ি থেকেই সাইবারের অন্ধকার দুনিয়াতে প্রবেশ করেছিল অভিজিৎ মন্ডল এবং অভিষেক মন্ডল নামের দুই ভাই।
আরও পড়ুন- হাজার হাজার ফেক সিম, ই-ওয়ালেট প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস বাঁকুড়ায়
অভিজিৎ মন্ডল শুনুকপাহাড়ি মোড়ে একটি ঔষুধ দোকানে কাজ করতো। অভিষেক ইলেক্ট্রিক ওয়েরিং করার কাজ করতো। লক ডাউনে বাড়ির মধ্যে থেকেই সাইবারের অন্ধকার জগতের যাবতীয় খুটিনাটি রপ্ত করে অভিষেক। মেধাবী না হলেও ইন্টারনেট জগতকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছিল।
পুলিশ মনে করছে ডার্ক ওয়েব থেকেই সাইবার ক্রাইমের যাবতীয় খুটিনাটি রপ্ত করে অভিষেক। এইভাবেই প্রতারণা করে মোটা টাকা উপার্জনের পথ বেছে নেয় দুই ভাই। যে বিষয় কারোর নজর পড়েনি। পুলিশ ওই বাড়ির থেকেই উদ্ধার করেছে বিপুল পরিমান ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী।
আরও পড়ুন-চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েক লক্ষ টাকা প্রতারণা, গ্রেফতার ভুয়ো সাংবাদিক
মঙ্গলবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এই প্রতারকেরা। তাঁদের কাছ থেকে ৮২৮২ টি ভুয়ো প্রি আক্টিভেটেড সিম, ৭ টি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের পাসবই, ২৩ টি মোবাইল, ১ টি ল্যাপটপ, একটি ডেস্কটপ, ১ টি ক্যামেরা ও ১ লক্ষ ১৫ হাজার নগদ টাকা ও ১৫ টি ডেবিট কার্ড উদ্ধার করেছে। এছাড়াও দশ হাজারের বেশি ভুয়ো ই ওয়ালেটের হদিশ পাওয়া গিয়েছে।
এরপর তদন্ত করে জানা যায় ভুয়ো কাস্টমার সার্ভিস ফর্ম দিয়ে তাঁরা সংগ্রহ করত সিম। সেগুলি এক্টিভেশন করে সরাসরি পৌছে যেত অভিষেকের বাড়িতে। বাড়িতে বসেই সাইবার দুনিয়ার ক্রাইম করা শুরু করতো অভিষেক। ওই সিম থেকেই ই ওয়ালেট বানিয়ে সেগুলি বিক্রি করা হতো বড় বড় সাইবার প্রতারকদের। একাধিক টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত ছিল অভিষেক। সেই গ্রুপ থেকেই ওয়ালেট এবং বিভিন্ন সিমের ওটিপি শেয়ার করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করত।
আরও পড়ুন- ভুয়ো আধার কার্ড চক্রের পর্দা ফাঁস, গ্রেফতার ৩
বাঁকুড়া সাইবার চক্রে বুধবার রাতে নতুন করে গ্রেফতার হয়েছে আরও তিনজন। বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছিল ৬ জনকে। তাঁদের জিজ্ঞেস করতেই উঠে আসে আরও তিন জনের নাম। বাঁকুড়ার বেলাডি গ্রাম থেকে মানস সাহানা, কৃপাসিন্ধু সাহানা নামে দুই সিমের ডিলার কে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে জয়পুর থেকে দীপক গুঁই নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এই জাল কতদূর বিস্তৃত তা জানতে মূল মাস্টার মাইন্ডকে পাখির চোখ করে তদন্তের অগ্রগতি চাইছে পুলিশ। গুরুত্বপূ্র্ণ তথ্য উদঘাটন করতে মূল মাস্টার মাইন্ড অভিষেকের মোবাইল ফরেন্সিক টেস্ট করার কথা ভাবছে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা। পাশাপাশি এই ঘটনায় ধৃতদের কার কী ভুমিকা ছিল সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।