রাজু দাস: মাথায় মাটির হাঁড়ি, তার গায়ে লেখা জয়নগরের মোয়া৷ মোয়া নিয়ে শহরে-গঞ্জে বিক্রি করতেন জয়নগরের মোয়া ব্যবসায়ীরা। আর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পকেটে জয়নগর স্টেশন থেকে কাটা টিকিট৷ সময়ের সঙ্গে বদলে গিয়েছে মোয়া ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকা। কারণ এখন বাজার দখল করে নিয়েছে ভেজাল মোয়া৷ সাধারণ খই, ভেজাল নলেন গুড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে সেই মোয়া৷ ফলে, জয়নগরের ব্যবসায়ীরা চাইছেন নকল মোয়ার বদলে মানুষের মুখে আসল মোয়ার স্বাদ দিতে৷ কামড় দিলেই যা নিমেষে জিভেই মিলিয়ে যায়৷
২০০৭ সাল থেকে জিআই স্বীকৃতির জন্য বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেছিলেন জয়নগরের মোয়া ব্যবসায়ীরা। অবশেষে সেই স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও পরিকাঠামোগত উন্নতির অভাবে ধুঁকছে মোয়া শিল্প। জিআই স্বীকৃতি নিয়ে মোয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ কয়েক বছর টানাপোড়েন চলছিল। নতুন করে ১১৫ জন মোয়া ব্যবসায়ী স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। স্থানীয় এমপির উদ্যোগে শুরু হয়েছিল মোয়া হাব তৈরির পরিকল্পনা। আধুনিক প্যাকেজিং মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। অজানা কারণে আজও তা সম্ভব হয়নি, জানালেন প্রাক্তন পুরপিতা সুজিত সরখেল।
একদিকে ক্রমাগত প্রাকৃতিক বিপর্যয়। অপরদিকে খেজুর রস সংগ্রহকারী শিউলির অভাব। ক্রমাগত কমছে খেজুর গাছও৷ খেজুর রস সংগ্রহকারী শিউলি পেশাই পরিত্যাগ করেছেন অনেকে৷ তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশায় আসতে চাইছেন না। মোয়া তৈরি ক্ষেত্রে অন্যতম একটি উপকরণ কণকচূড় ধানের খই । কণকচূড় ধানের চাষও এখন কমে গিয়েছে৷ মূলত শীতের সময় এই ধানটি ওঠে। ক্রমাগত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধানের ফলন কমছে৷ চাষিদের মধ্যে এই ধান চাষ করতে অনীহা দেখা যাচ্ছে। ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে পড়ছে এই চাষ।
আরও পড়ুন- মুঠো মুঠো মৌমাছি মুখে পুরলেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি বিধায়ক, ভাইরাল ভিডিয়ো
মোয়া তৈরি করার পর তা বাজারজাত করার মতো আরেকটি বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন জয়নগরের ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাতে গেলে ভরসা কুরিয়ার সার্ভিস৷ আর সেখানেই সমস্যা৷ এই মোয়া তৈরি করে চার থেকে পাঁচ দিনে গ্রাহকের ঘরে পৌঁছাতে হয়, অন্যথায় মোয়ার মান নষ্ট হয়ে যায়। এই মান বজায় রাখতে গেলে প্রয়োজন আধুনিক মেশিনের প্যাকেজিং৷ আর সেই মেশিনের অভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মোয়া পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
মোয়া ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি, সরকারি উদ্যোগে তাঁদের এই শিল্পকে আধুনিকীকরণ করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হোক। জয়নগরের মোয়া ও মিষ্টান্ন উদ্যোগ সমিতির পক্ষ থেকে রাজেশ দাস জানান, জয়নগরের মোয়া তৈরি করা হোক সকল ব্যবসায়ীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে৷ আদি পদ্ধতি ও নতুন পদ্ধতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে। তাঁরও দাবি, উন্নত মানের প্যাকেজিং মেশিন বসানো হোক।