কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক : চলে গেলেন বুদ্ধদেব গুহ (buddhadeb guha)এভাবেই সাহিত্যকে অন্ধকারে ভাসিয়ে এক ২৩শে চলে গিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।(shakti chatterjee)। আর এক ২৩শে অক্টোবর চলে গেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তারপর আমাদের সাহিত্যে নির্জন সাধনার অন্যতম আশ্রয়স্থল বুদ্ধদেব গুহ। তার প্রয়াণে বুঝি শেষ হল বাঙালির বোহেমিয়ানিজম এর। মৃত্যু বুঝি সব শেষ করে দেয়। শ্মশানের চুল্লিতে ছাই হয়ে গেল সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর দেহ। কিন্তু সত্যিই কি সব শেষ? আসলে বুদ্ধদেব গুহদের মৃত্যু হয় না। তাঁরা বেঁচে থাকেন অরণ্যের নাম না-জানা পাখির শিসে।
আরও পড়ুন শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে আর আড্ডা মারার বাধা রইল না বুদ্ধদেব গুহের
সুনীল ছিলেন সম্রাট। সাহিত্যের মঞ্চে প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সুচিন্তিত, রাজকীয়। শক্তি ছিলেন শরতের আকাশে বর্ষার মেঘের মতন। কোথায় কখন , বর্ষাবে তা বুঝি কেউ জানে না। নটরাজের নৃত্যছন্দেই ছিল সৃষ্টির উল্লাস। আর বুদ্ধদেব ছিলেন আলাদা। তিনি ছিলেন প্রকৃতঅর্থেই বোহেমিয়ান. মাল্টিটাস্কিং। তিনি বোধহয় নিজেও জানতেন না তাঁর মনের ঘরে বসত করে কয়জনা। খেলা, শিকার, অরণ্য প্রেম, রঙিন সুরাপাত্রে চুমুক দিতে দিতেই একের পর এক রবীন্দ্রসংগীত, চার্টার্ড ফার্মের জটিল হিসেবনিকেশ মেলাতে মেলাতেই তিনি নিঝুম অক্ষরের বাদশা। এক হাতে থাকতো সুরাপাত্র, অন্যহাতে তুলি, ছবি আঁকতেন পাগলের মতো।
প্রকৃতি, প্রেম এবং যৌনতাকে নিয়ে তিনি অদ্ভুত আলাপ বিস্তার করতে পারতেন। তার একের পর এক প্রজন্ম কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের গন্ধ উপভোগ করেন তার সাহিত্যকে .আঁকড়ে ধরে। কত না বলা প্রেম, কান্না হয়ে হাতির শূরের মতো ভালোবাসা হয়ে পেঁচিয়ে ধরে টিটি, টুই, কুর্চিদের।
আরও পড়ুন সাহিত্য জগতে নক্ষত্রপতন, চলে গেলেন বুদ্ধদেব গুহ
আজকের দিনে যখন বেশিরভাগ সাহিত্যিক দোটানায় ভোগেন যে ঠিক কতটা যৌনতা উল্লেখ করলে নিরামিষ বাঙালির নাকে আমিষ গন্ধ লাগবে না, তখন বুদ্ধদেব যৌনতাকে শিল্পের চূড়ান্ত আসনে উত্তীর্ণ করেছেন। প্রকৃতি প্রেম এবং যৌনতা তাঁর কাছে ছিল জীবনের স্বাভাবিক উপকরণ। চরিত্রের বয়স, সমাজ, বিবাহ এবং বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক – কোনোটাই কোনোভাবে বাধা সৃষ্টি করেনি তার এই সৃজনে। এখানেই শিল্পীর সার্থকতা, শিল্পের সার্থকতা। তাই নশ্বর দেহটা হয়তো আজ বিলীন হয়ে গেল। কিন্তু আগামী দিনে যত কিশোর কিশোরী যুবক যুবতী বা মাঝবয়সীরা প্রেমে পড়বেন। জঙ্গল, প্রকৃতি এবং যৌনতা যতবার তাদের আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলবে। ততবার হয়তো নেতারহাটে এক বনবাংলোয় বসে মিচকি হেসে উঠবেন লালাদা।