বসিরহাট: এ যেন থ্রিলার মুভির প্রেক্ষাপট। আমেদাবাদ অপহরণের ডেরা থেকে কোনও রকম প্রাণে বেঁচে ফিরল সুন্দরবনের আইটিআই ইঞ্জিনিয়ার। টানা ১২ দিন অপহৃত থেকে মগজাস্ত্রের ব্যবহার করে অবশেষে ২০ দিন পর, সুন্দরবনের নিজের বাড়িতে ফিরল তপোব্রত মণ্ডল।
পরিবার সূত্রের খবর, বসিরহাটের সন্দেশখালি থানার কোড়াকাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কোড়াকাটি গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত মন্ডল ও তপতী মন্ডলের একমাত্র ছেলে তপোব্রত মণ্ডল কর্মসূত্রে ১৮ জুলাই বাড়ি থেকে রওনা দেয় চাকরির উদ্দেশ্যে গুজরাটের আমদাবাদে। ২০ তারিখ পৌঁছানোর পর থেকে বাড়ির সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। বাড়ির লোক একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও সেটি সুইচঅফ থাকে বলে জানায় তাঁর বাড়ির লোক। এছাড়াও পরিবারের আরও অভিযোগ, ওই বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সেখান থেকেও কোনও সদুত্তর মেলে না।
আরও পড়ুন: পুকুর থেকে উদ্ধার যুবতীর অর্ধনগ্ন দেহ, শুরু তদন্ত
এরপর তপোব্রতর দাদা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সন্দেশখালি থেকে প্রথমে আহমেদাবাদ যান। সেখানে একাধিক বার ওই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা তপোব্রতর ব্যাপারে কোন খোঁজ দিতে পারেননি। অবশেষে তারা আমেদাবাদের গুজরাট পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, একটার পর একটা থানা ঘোরালেও তাদের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি তাঁদের কাছে মোটা অর্থ দাবি করা হয়। অবশেষে তারা পুনরায় সন্দেশখালিতে ফিরে আসে। তারপর সন্দেশখালি থানায় তপোব্রতর নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছিল সন্দেশখালি থানার পুলিশ। ইতিমধ্যে চলতি মাসের ২ তারিখে কোরাকাটির স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রণব রায়ের কাছে একটি অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ফোন আসে। সেই সেই ফোনের ওপারে গলা ভেসে ওঠে তপোব্রতর। তারপরে অনেক যুদ্ধের পর ৫ই আগস্ট শনিবার রাতে কোড়াকাটিতে নিজের বাড়ি ফিরে আসে ওই আইটিআই ইঞ্জিনিয়ার।
অভিযোগ, তারপরে বাড়ি এসে জানায় আমেদাবাদ স্টেশনে নামমাত্রই স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে এক অটোওয়ালা সহ তিন যুবক তাকে অপহরণ করে। তারপরে তাকে আমেদাবাদের বানসারার একটি চালের মিলে নিয়ে যাওয়া হয়। টানা ১২ দিন ওখানে থাকার পরে কোনও রকমে সে ওই গ্রামেরই প্রণব রায় সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। তারপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রণব রায় তার আমেদাবাদের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এবং একটি গাড়ির নাম্বার তপোব্রতকে দেয়। তপোব্রত তার সর্বস্ব হারিয়ে কোনও রকমে প্রাণ রক্ষা করে ওই গাড়ির নাম্বারটি কোম্পানির সামনে থেকে ফলো করতে থাকে। গাড়ি আসা মাত্রই সে গাড়িতে চেপে বসে এবং সোজা চলে আসে আমেদাবাদ স্টেশনে। সেখান থেকে একেবারে সন্দেশখালি বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
কি করে সে অপহৃত হলো হল তপোব্রত? এর সঙ্গে কি বড়সড়ো অপহরণ চক্রের কোনও যোগ আছে? এই নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। এদিকে পুরও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সন্দেশখালি থানার পুলিশ।