স্পেন–১, ৩ সুইৎজারল্যান্ড–১, ১
(জাকারিয়া–নিজ গোল) (জর্ডান সাকিরি)
(টাই ব্রেকারে–ড্যানি আলোমো, জেরার্ড মোরেনো, মিকেল ওইয়ারজাবাল) (টাই ব্রেকারে–মারিও গাভ্রানোভিচ)
আরও একটা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। আরও একবার মরণপণ লড়াই সুইৎজারল্যান্ডের। কিন্তু এবার তারা পরাজিত। আগের ম্যাচে ফ্রান্সের বিরুদ্ধেও যে লড়াই করে ম্যাচ জিতেছিল সুইসরা, শুক্রবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে তার চেয়েও অনেক বেশি লড়ল তারা। অনেক বেশি কেন? মাত্র আট মিনিটের মধ্যে আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে সুইসরা কিন্তু ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায়নি। বরং ৬৮ মিনিটে জর্ডান সাকিরি সমতা ফিরিয়ে ম্যাচটাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। কিন্তু ৭৭ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয় রজার ফ্রেউলারকে। জেরার্ড মোরেনোকে লাথি মেরেছিলেন তিনি। এর পর ম্যাচের ১৩ মিনিট তো বটেই অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিট এবং সংযুক্ত সময় ধরে প্রায় ৪৬ মিনিট দশ জনে খেলেও গোল খায়নি সুইৎজারল্যান্ড। এই সময় ম্যাচটা প্রায় একপেশে হয়ে গিয়েছিল। একটার পর একটা স্প্যানিশ মুভমেন্ট ভূমধ্য সাগরের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে সুইসদের উপর। তাদের ডিফেন্স তখন চেষ্টা করছে দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠার। কিন্তু স্পেন তখন মরিয়া। টাই ব্রেকারে ম্যাচ নিতে দেবে না। কিন্তু তারা হারাতে পারল না সুইস গোলকিপার ইয়ান সোমেরকে। ৩২ বছর বয়সী এই গোলকিপার খেলেন জার্মানির বুন্দেশলিগার বরুসিয়া মনচেনগ্ল্যাডবাখে। আগের ম্যাচে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে তাঁকে প্রচুর সেভ করতে হয়েছে। এদিন টিম দশ জনে নেমে যাওয়ায় সেভের সংখ্যা আরও বেশি। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে অতিরিক্ত চাপ দেয়েও সোমেরকে হার মানানো যায়নি।
শেষ পর্যন্ত তাঁকে হারতে হল টাই ব্রেকারে। তাও টাই ব্রেকারে তিনি রদ্রির শট বাঁচিয়েছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। সতীর্থদের শট স্প্যানিশ গোলকিপার উনাই সিমন বাঁচিয়ে দেওয়ায় সমারের আর জয়ী বীর হওয়া হল না। পরাজয়ের গ্লানি অবশ্য তাঁকে স্পর্শ করতে পারবে না। টাই ব্রেকারে তিনি এবং তাঁর দল পরাজিত। কিন্তু দর্শকদের হৃদয় জিতে গেলেন সুইস গোলকিপার সোমের। এর পর হাত ঘড়ির জন্য বিখ্যাত জুরিখের কোনও কোম্পানি যদি সোমেরের নামে হাত ঘড়ি বার করে তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এতদ্বারা স্পেনের জয়কে ছোট করা যাবে না। যোগ্য দল হিসেবেই তারা সেমিফাইনালে। টাই ব্রেকারে জিতলেও তারা এদিন টুর্নামেন্টে তাদের সেরা খেলা খেলেছে। পাস, পাস এবং পাস। পাসের ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছে লুই এনরিকের ছেলেরা। বল পজেশনে স্পেনের ৭০ শতাংশের পাশে সুইসদের শতাংশটা টিমটিম করে জ্বলছে। তারা দশ জনে নেমে যাওয়ার পর সঙ্গত কারণেই স্পেনের দাপট আরও বাড়ে। কিন্তু তাদের টিমে ছিল না কোনও পজিটিভ স্ট্রাইকার। একটা ফের্নান্দো টোরেস কিংবা একটা দাভিদ ভিয়া থাকলে স্পেন কখন জিতে যায়। তাদের তিন ফরোয়ার্ড ফেরান টোরেস, আলভারো মোরাতা এবং পাবলো সারাবিয়ার মধ্যে সেই সমঝোতা ছিল না যা দিয়ে তাঁরা গোল করতে বা করাতে পারেন। ভেদ শক্তির অভাব ছিল তাঁদের মধ্যে। আসলে একটা মেসি কিংবা একটা সুয়ারেজ কিংবা করিম বেঞ্জামার ক্যারিশ্মায় তারা লা লিগা জেতে এবং স্পেনের ঘরের ছেলেরা তার মাধ্যমে আলোকিত হন। তাদের স্বর্ণ যুগেও এই ঘাটতি ছিল। কিন্তু তখন তো টিমে জ্যাভি কিংবা ইনিয়েস্তা ছিলেন। স্পেনের স্বর্ণ যুগের সেই টিমের সের্গেই বুসকোয়েটস অবশ্য এই দলটার আধিনায়ক। তাঁর অপর দুই সঙ্গী কোকে এবং পেদ্রির মতো তিনিও ভালই খেললেন। না হলে স্পেন এত চাপ দিল কী করে? দুর্ভাগ্য স্প্যানিশ অধিনায়কের। টাই ব্রেকারে দলের প্রথম শটটা নিতে এসে সাইড পোস্টে মারলেন। পেদ্রির বদলে নামা রদ্রির শট বাঁচালেন সোমের। ড্যানি ওলমো, জেরার্ড মোরেনো এবং মিকেল গোল করায় ম্যাচ জিতে যায় স্পেন।
তাদের গোলকিপার উনাই সিমোনকে ম্যাচের মধ্যে তেমন উদ্বেগজনক মুহূর্ত কাটাতে না হলেও টাই ব্রেকারে ফাবিয়ান সাচার এবং আকাঞ্জির শট বাঁচিয়েছেন। তবে যে গোলটা তাঁকে খেতে হল তার জন্য তাঁকে দায়ী করা যাবে না। স্পেন তখন এক গোলে এগিয়ে। কিন্তু একটা সুইস মুভমেন্ট তাদের বক্সের সামনে এলে দুই সেন্টার ব্যাক পাউ টোরেস এবং আয়মেরিক লাপোর্তের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে বল চলে যায় স্টিফেন জুবেরের কাছে। তিনি আলতো টাচে বল দেন সাকিরিকে। বক্সের ঠিক মুখ থেকে ডান পায়ের জোরালো শটে গোল শোধ করেন লিভারপুলের সাকিরি।
স্পেন গোলটা করে ফেলেছিল ৮ মিনিটে। কোকের কর্নারে লেফট ব্যাক জোর্দি আলবা বাঁ পায়ে দুর্দান্ত শট নিলে ড্যানিশ জাকারিয়া আটকাতে গেলে বল তাঁর পায়ে লেগে গোলে ঢুকে যায়। শেষ পর্যন্ত স্পেন ম্যাচটা জিতে সেমিফাইনালে গেল। তাদের ইতিহাস বলছে, কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডি যে কবার তারা টপকেছে, ইউরো কাপটা তারাই দেশে নিয়ে গেছে। তাহলে কি এবার আবার স্প্যানিশ আর্মাডার বিপ্লব দেখবে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম?