নয়াদিল্লি: নেট বাজারে ভাইরাল হয়েছে ছবি। আর তা নিয়েই তুমুল চর্চা। ইতিহাসের পাতা উল্টানো। দিল্লি বিধানসভার (Delhi Legislative Assembly) ভিতর গোপন সুড়ঙ্গ (Tunnel) । যা নাকি চলে গিয়েছে লাল কেল্লার (Red Fort) দিকে। তা হলে কোনটা এর মুখ কোথায় আর লেজই বা কোন দিকে? তা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে মাইক্রো-ব্লগিং সোশাল মিডিয়া টুইটারে (Twitter)।
রহস্যময় এই সুড়ঙ্গের তির-চারটি স্টিল-ছবি সংবাদ সংস্থা এএনআই (ANI) প্রকাশ করেছে। বিধানসভা কক্ষের ভিতর যে সুড়ঙ্গপথ তাতে মেরে কেটে এক জন মানুষ নীচে নামতে পারেন। পরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে কংক্রিটের সুড়ঙ্গ পথ। তিন-চার ফুট মত চওড়া। মাথায় এক মানুষের মত উঁচু। পাশাপাশি ১\২ জন হেঁটে যাতে পারবেন। পরের ছবিতে সুড়ঙ্গ-পথ শেষ। ইটের গাঁথুনি দেখা যাচ্ছে। পথের শেষ প্রান্তেও ইটের পাঁচিল। বাঁ-দিকে একটা জানলা। মাটিতেও প্রচুর ভাঙা ইট-পাথর স্তূপ করে পড়ে রয়েছে। কেন এ রকম একটা সুড়ঙ্গ পথ? দিল্লির বিধানসভা ভবন থেকে কেনই বা মাটির তলায় এ রকম একটা গোপন পথ তৈরি করতে হয়েছিল? আর সেই সুড়ঙ্গ কেনই বা লালকেল্লা পর্যন্ত? উত্তর পেতে ইতিহাসের পাতা তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন নেটিজেনরা।
আরও পড়ুন: আচমকা বাতিল নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠক
সংবাদ সংস্থা এএনআই দিল্লির বিধানসভার স্পিকার রামনিবাস গোয়েলের বক্তব্য জানিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘সুড়ঙ্গ-পথ বিধানসভা আর লালকেল্লাকে জুড়ে দিয়েছে। এর ইতিহাস নিয়ে সে রকম কোনও লিখিত তথ্য নেই। অনেক রকম ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত এই সুড়ঙ্গ ব্রিটিশরা ব্যবহার করতেন। বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে যাওয়া হত এই পথেই। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সময় যাতে না কোনও গোলমাল হয়, সম্ভবত সে কারণেই এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করা হত।’ সুড়ঙ্গের মুখ কোথায় তা জানা গিয়েছে বলে গোয়েলের দাবি। ‘এখন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। খুব দ্রুতই সাধারণ মানুষের জন্য এই সুড়ঙ্গ-পথ খুলে দেওয়া হবে।’ সেটা কবে? জানা গিয়েছে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২-এর ১৫ অগস্টের মধ্যেই খুলে যাবে রহস্যময় এই সুড়ঙ্গ।
খবর বেরতেই পাঠক অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন। হাজার রকমের ধারনা। কল্পনা। আষাঢ়ে গপপো। এর আগে বিবিসি-ও এই একই খবর প্রকাশ করেছিল। ২০১৬ সালের একটি রিপোর্ট। বলা হয়েছিল, দিল্লি বিধানসভা ভবনের নীচে এক গোপন সুড়ঙ্গ পথ আছে। আছে একটা লুকনো প্রবেশ পথ। আর একটা গুপ্ত-ঘর। সে সময়ও রামনিবাস গোয়েলকে ‘কোট’ করেছিল বিবিসি। স্পিকারই নাকি ওই সুড়ঙ্গপথটি নতুন করে আবিষ্কারের করেন। বিবিসি-র সাংবাদিক জাস্টিন রাওলাট ওই সুড়ঙ্গপথে সরেজমিন ঘুরে দেখে রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন। ফটোগ্রাফও দিয়েছিলেন বেশ কয়েকটা। গোয়েলকে ‘কোট’ করে লিখেছিলেন, লাল কেল্লা থেকে বন্দিদের যাতায়াতের জন্যই ওই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করা হত। বন্দিরা লাল কেল্লা থেকে সুড়ঙ্গপথ ধরে আদালত বা কোর্ট রুমে এসে পৌঁছতেন। বিচারের পর তাঁদের অন্য আর একটি গুপ্ত ঘরে নিয়ে যাওয়া হত। সেখানেই বন্দিদের ফাঁসি দেওয়া হত।
A tunnel-like structure, that was discovered at Delhi Assembly in 2016, is being renovated.
"It connects to Red Fort. There's no clarity over its history, but it was used by Britishers to avoid reprisal while moving freedom fighters," said Assembly Speaker Ram Niwas Goel (2.09) pic.twitter.com/O78PBnfxIU
— ANI (@ANI) September 3, 2021
আরও পড়ুন: কাশ্মীরের মুসলিমদের জন্য কথা বলার ‘অধিকার’ রয়েছে, দাবি তালিবানের
ইন্ডিয়া টিভির রিপোর্ট বলছে, সুড়ঙ্গপথটিকে এখন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মারক হিসেবে সাজিয়ে তোলা হবে। সে কারণেই রক্ষণাবেক্ষণ চলছে। স্পিকার গোয়েল বলেন, ‘এখানে যে একটা গুপ্তঘর আছে আমার সবাই তা জানতাম। কিন্তু কোনও দিন তার দরজা খোলা হয়নি। এটা স্বাধীনতার ৭৫ বছর। তাই ঠিক হয়েছে এটাকে নতুন করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।’
এই সেই সুড়ঙ্গ
পাঠক আপনি ভাবুন, এমন এক সুড়ঙ্গপথ ধরে হাঁটছেন, যা প্রায় অন্ধকার আচ্ছন্ন। তখনও বিদ্যুতের চল হয়নি। দেওয়ালে গাঁথা মশাল বা গ্যাসের আলো। তার মধ্যে দিয়েই আঁকাবাঁকা একটা রাস্তা চলে গিয়েছে কেল্লার দিকে। কখনও কখনও সেই আঁধারের মধ্যেই ব্রিটিশ বুটের আওয়াজ ছাপিয়ে উচ্চারিত হচ্ছে বন্দেমাতরম ধ্বনি।