কলকাতা: ফের স্টোনম্যানের কায়দায় খুনের চেষ্টা। এ বার কলকাতার আহেরীটোলার বিকে পাল অ্যাভিনিউয়ে৷ বুধবার সকালে রাস্তার ধার থেকে রক্তাক্ত অচৈতন্য যুবককে উদ্ধার করা হয়েছে৷ তার কিছুটা দূরেই পড়ে ছিল রক্তমাখা পাথর। তাতেই ফিরে এসেছে ন’য়ের দশকের স্টোনম্যানের আতঙ্কের কাহিনি।
আরও পড়ুন- রাতের অন্ধকারে মাথা থেঁতলে খুনের চেষ্টা, শহরে স্টোনম্যান আতঙ্ক
১৯৮৯ সালের জুনে স্টোনম্যানের হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। একই কায়দায় পরের ছ’মাসে আরও ১২টা খুন। সকলেই গরিব ফুটপাতবাসী। সবাইকেই রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত অবস্থায় ভারী পাথর বা কংক্রিটের স্ল্যাবে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়। বাড়ে রাতপাহারা। কিন্তু মোটিভ? খুঁজে পায়নি পুলিশ। খুনী এক না একাধিক? তাও জানা যায়নি। নিশুতি রাতের ঘাতককে সংবাদমাধ্যম নাম দিয়েছিল স্টোনম্যান। সন্দেহের বশে পুলিস অনেক ধরপাকড় চালায়৷ কিন্তু, ৩০-৩১ বছর পরেও সেই সব খুনের কিনারা হয়নি। যা কলকাতা পুলিসের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত আনসলভড মিস্ট্রি।
আরও পড়ুন- ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে তুমুল বিতর্ক, বিবৃতি দিল পেগাসাস নির্মাতা এনএসও
১৯৮৯-এর পুজোর সময়ে স্টোনম্যানের ভয়ে কলকাতা স্তম্ভিত। জুন মাসে প্রথম খুনটা হয়। ঠিক এক মাস পরে ৪ জুলাই দ্বিতীয় খুন৷ অবিকল একই ভাবে। মাথা-থ্যাঁতলানো অবস্থায় রাস্তার পাশ থেকে ভিখারির দেহ উদ্ধার হয়৷ পাশে রক্তমাখা পাথর। পরের তিন মাসে আরও চারটে খুন৷ পাথুরিয়াঘাটা থেকে পদ্মপুকুর, হাড়কাটা গলি থেকে ধর্মতলা, ওয়েলিংটন স্কোয়্যার৷ বলা চলে, মধ্য কলকাতা বিভাগের সব ক’টা থানা এলাকায় সাত-আট দিন বাদে বাদেই নানান ফুটপাতবাসী ভবঘুরে খুন হতে লাগে। আতঙ্কে রাতের ফুটপাতে ভিখিরি বা ভবঘুরে মানুষদের শোওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- স্মৃতিকে নিয়ে ফেসবুকে অশালীন পোস্ট, উত্তরপ্রদেশে জেলে প্রফেসর
পুলিশ জানায়, প্রত্যেকটা খুনই হয় রাত তিনটে আর ভোর পাঁচটার মধ্যে। প্রত্যেক বার দশ-পনোরো কেজি ওজনের পাথর দিয়ে নৃশংস হত্যা। পুলিশের দৃঢ় ধারণা, এই খুনগুলো এক জন লোকেরই কাজ। ভারী পাথর দিয়ে খুনের পদ্ধতি দেখে অনুমান করা গেল, খুনি এক জন লম্বা, শক্তিশালী পুরুষ। সাতটা খুনের পরে তা কলকাতা পুলিশের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার রচপাল সিংহ স্বীকার করেও নিয়েছিলেন৷
আরও পড়ুন- স্পাইগিরি ঠেকাতে মমতার আইফোনের ক্যামেরায় লিউকোপ্লাস্ট
তবে, কোনও খুনের কোনও সাক্ষী নেই। মোটিভ পাওয়া যাচ্ছে না৷ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও ‘সোর্স’ মারফত সম্ভাব্য আততায়ীর সম্পর্কে কোনও খবর পেল না! তখনকার প্রায় প্রত্যেকটা খবরকাগজেই কলকাতা পুলিশের অপদার্থতার কথা ফলাও করে লেখা শুরু করে। বাধ্য হয়ে পুলিশ সন্ধেবেলা থেকে পাড়ার ক্রিকেট খেলার জন্য সাজিয়ে রাখা ইট সরাতে শুরু করে৷ অনেক পুলিশ আবার নকশাল আমলের মতো চাদর মুড়ি দিয়ে রিভলভার হাতে ঘাপটি মেরে রাস্তাঘাটে শুতে শুরু করে। গোয়েন্দা বিভাগ থেকে বহু সন্দেহভাজন লোক ধরা হয়৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
আরও পড়ুন- বাংলার ‘হিংসা’ নিয়ে দিল্লির রাজঘাটে বিজেপি’র ধর্না
মার্চ ১৯৯০ বন্ধ হয়ে গেল স্টোনম্যানের হত্যার পালা। তার পরপরই কানাঘুষো শোনা যায়, স্টোনম্যান কাণ্ড ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল। তখনকার মধ্য কলকাতার ডি.সি-র উঁচু পোস্টে যাওয়া ঠেকাতে বিরোধী লবি এ ভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু সেই বিতর্কের সত্যতা নেই৷ তবে, কলকাতা পুলিশের তরফে অফিসিয়ালি মেনে নেওয়া হয় যে, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ কলকাতা পুলিশকে অপদস্থ করতেই এই সব করেছে৷ যদিও এ বিষয়ে যথাযথ প্রমাণ নেই পুলিশের কাছে৷