কলকাতা: রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাসে হিংসা, দুর্নীতি নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সি ভি আনন্দ বোস। শুক্রবার রাজভবন সূত্রে এক্স হ্যান্ডেলে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট কিংবা কলকাতা হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে তার তদন্ত করতে হবে। রাজভবনের অভিযোগ, ক্যাম্পাসগুলিতে রাজনীতি হচ্ছে। সেগুলিকে ভোটের কাজে লাগানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাজভবনের এই ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানান রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, একটা সরকার এক্স হ্যান্ডেল, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে চলে না। রাজ্যপালের ওই নির্দেশ সরকারের কাছে পৌঁছনো উচিত। তিনি আরও লেখেন, আচার্য তথা রাজ্যপাল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজ্যপাল যা করতে পারেন, আচার্য কি সেটা করতে পারেন?
আরও পড়ুন: ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আলিপুর
শিক্ষা মহল মনে করছে, রাজ্যপালের এই ঘোষণায় রাজভবন এবং নবান্নের মধ্যে সংঘাত একেবারে চরমে উঠল। বৃহস্পতিবার রাতেই রাজ্যপাল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে শিক্ষামন্ত্রীকে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের সুপারিশ করেন। ব্রাত্য রাজ্যপালের ওই সুপারিশকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রাজ্যপাল সাংবিধানিক নিয়ম মানছেন না। তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী কাজকর্ম করছেন। রাজভবনের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। ব্রাত্য বলেন, আমি যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন করি, তাহলে কমিশন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। রাজ্যপালের আমাকে অপসারণের সুপারিশ করার কোনও এক্তিয়ার নেই।
রাজভবন এবং নবান্নের মধ্যে চলতি বিরোধের সূত্রপাত গত শনিবার। ওইদিন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তৃণমূলপন্থী অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার একটি কনভেনশন ছিল। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী কনভেনশনে হাজির ছিলেন। রাজ্যের আরও জনাদুয়েক মন্ত্রী ছিলেন, ছিলেন তৃণমূলের কয়েকজন প্রার্থীও। রাজভবনের যুক্তি, নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু হওয়ার পর কোনও সরকারি জায়গায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো যায় না। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী সেখানে হাজির থেকে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। ব্রাত্য প্রশ্ন তোলেন, ওই কনভেনশনে আরও মন্ত্রী হাজির ছিলেন। তাছাড়া এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, রাজ্যপাল তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করে ফেললেন এই ঘটনায়।
রাজ্যপালের এই এক্তিয়ার আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত রাজ্যপালের এই ধরনের পরিস্থিতিতে। রাজ্যপাল এককভাবে কোনও মন্ত্রীকে অপসারণের সুপারিশ করতে পারেন না। তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলেন, রাজ্যপাল বিজেপির দালালি করছেন।
শিক্ষামন্ত্রীকে অপসারণের সুপারিশের জের কাটতে না কাটতেই রাজভবন এদিন অভিযোগ তুলল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কার্যত রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠছে। সেখানে দুর্নীতি এবং হিংসা চলছে। শিক্ষা মহল বলছে, রাজ্যপাল ফের একটি নতুন বিতর্ক উসকে দিলেন।