কলকাতা: ঠিক ৬ দিন আগে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandhyapadhay) নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) কাছে আবেদন রাখেন। বলেন, ‘আবারও কমিশনের কাছে আমাদের আবেদন, ইতিমধ্যেই চার মাস পেরিয়ে গিয়েছে, আমি মনে করি যত দ্রুত সম্ভব উপ-নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা উচিৎ নির্বাচন কমিশনের।’ রাজ্যে পাঁচটি উপ-নির্বাচন এবং দু’টি নির্বাচন বকেয়া পড়ে রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোর মধ্যে থেকে যে কোনও একটা আসন থেকে জিতে আসতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ডেডলাইন অর্থাৎ সময়সীমা শেষ হচ্ছে ৪ নভেম্বর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হলেও, রাজ্যে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের সদস্য নন তিনি। কারণ মমতা নন্দীগ্রামের আসনে পরাজিত হয়েছেন।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন মমতা
২৬ অগস্ট দুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে একই আবেদন জানিয়ে আসে। যত দ্রুত সম্ভব উপ-নির্বাচনের দাবি করা হয়। এর আগে ১৫ জুলাই একই দাবিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ৬ অগস্ট রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছেও একই দাবি জানিয়েছে তারা। শেষ বার কমিশনের কাছে বেশ কিছু নথিও পেশ করেছেন সৌগত রায়, সুখেন্দুশেখর রায়েরা। নথিতে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে রাজ্যে কোভিডে সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ ছাড়াও আলাদা আলাদা ভাবে যে সব কেন্দ্রে ভোট বাকি পড়ে আছে, সেখানকার কোভিড পরিস্থিতির পরিসংখ্যানও কমিশনে জমা করেছে তৃণমূল।
৬ অগস্ট নির্বাচন কমিশনে যায় তৃণমূলের পরিষদীয় দল
রাজ্যে ভোট বাকি পড়ে আছে কোচবিহারের দিনহাটা, নদিয়ার শান্তিপুর, কলকাতার ভবানীপুর, উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা কেন্দ্রে। এই সবক’টিই উপ-নির্বাচন। এ ছাড়াও ভোট করতে হবে মুর্শিদাবাদের দু’টি আসনে। সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর। পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোচবিহারে গত এক সপ্তাহে করোনায় এক জনেরও মৃত্যু হয়নি। নদিয়ায় কোনও দিন এক জন মারা গিয়েছেন আবার কোনও দিন তা হয়নি। মৃতের সংখ্যাও ওই এক বা দুই। ৩০ অগস্টের সরকারি বুলেটিন জানাচ্ছে, ওই দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কোভিডে মৃত্যু হয়নি কারও। কলকাতায় দৈনিক সংক্রমণ এখন একশ’র অনেকটাই নীচে নেমে এসেছে। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে পুজোর পর স্কুল-কলেজ খোলার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার।
রাজ্যের কোভিড গ্রাফ ক্রমশই নিম্নমুখী
কাজেই এখনই ভোট করার জন্য তৃণমূলের যে দাবি তা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্তত কোভিড পরিসংখ্যান তাই বলছে। কিন্তু রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি, তাদের মত কী? বিজেপি এখনই ভোট চাইছে না। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘স্কুল-কলেজ খোলা হয়নি। ট্রেন চালু করা হয়নি। তা হলে কেন ভোট করতে চাইছে রাজ্য?’ বিজেপি যে এখনই ভোট চাইছে না তা জানিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে নোটও পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: আগের মত ব্যাঙ্ক খোলা থাকবে পুরো সময়, ঘোষণা মমতার
এ বার প্রশ্ন এ রকম পরিস্থিতিতে কী কী রাস্তা খোলা রয়েছে? রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে। সংবিধানে ১৬৪(৪) ধারায় কী বলা আছে? বলা আছে, কোনও মন্ত্রী যদি ৬ মাসের মধ্যে পরিষদীয় দলের সদস্য নির্বাচিত না হতে পারেন তা হলে তাঁর মন্ত্রিত্ব পদটি আর থাকবে না। তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও তাই। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ৫ মে। কাজেই তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৪ নভেম্বর। ওই দিনের মধ্যে ভোটে জিতে না আসতে পারলে তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী সপ্তাংশু বসু’র বক্তব্য, ‘সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে, মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইস্তফা দিতে হবে। বেছে নিতে হবে তাঁর পছন্দের বা দলের ঠিক করা কোনও এক জন বিধায়ককে। তাঁকেই আপাতত মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাতে হবে।’ আর এক আইনজীবী, সরকার পক্ষের প্রাক্তন আইনজীবী অশোককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় টেনে এনেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাবড়ি দেবীর শপথের ঘটনা। ১৯৯৭ সাল। সাংবিধানিক সঙ্কট এড়াতে একই রকম ভাবে লালুপ্রসাদ যাদব মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে বিহারের সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: জিডিপি বৃদ্ধির হার কি সত্যিই আশাপ্রদ, প্রশ্ন কৌশিক বসুর
উদাহরণ আরও আছে। বংশীলাল (১৯৮৭ সাল), বিজয়শেখর রেড্ডি (১৯৯৩), অশোক গেহলট (১৯৯৯)। নির্বাচন কমিশনের কাছেও রাস্তা আছে। সব চেয়ে সোজা যে রাস্তা তা হল, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ভোট ঘোষণা করে দেওয়া। আর না হলে, কেন্দ্রের সঙ্গে পরামর্শ করে জানিয়ে দেওয়া যে না, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করতে পারবে না কমিশন। আবার এটাও মনে রাখতে হবে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েই এ রাজ্যে ৮ দফায় ভোট করিয়েছে কমিশন। ভোট চলাকালীন এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের গোড়া থেকেই কোভিড সংক্রমণ রকেট গতিতে বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন: ‘দুই সন্তানের মা’, কোভিডের কারণ দেখিয়ে ইডি-র ডাকে দিল্লি গেলেন না রুজিরা