বসিরহাট: সন্দেশখালি (Sandeshkhali) নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায় রাজ্য বিজেপি (BJP)। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই রাজ্যের বিজেপি নেতারা নিত্য নতুন কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাইছে। আগামী ২৭ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলকাতায় ধরনায় বসছে বিজেপি। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ওই ধরনা মঞ্চে একদিন সন্দেশখালির কিছু মহিলাকেও উপস্থিত করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সন্দেশখালিতে যখন তখন ১৪৪ ধারা জারি করছে। বিজেপির দাবি, বিরোধীদের আটকাতেই প্রশাসনের এই কৌশল। ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও বিজেপি নেতারা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সন্দেশখালি থানার সামনে অবস্থানে বসেন। তাঁর দাবি ছিল, যতক্ষণ না শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হচ্ছেন, ততক্ষণ তিনি ধরনা ছেড়ে উঠবেন না। রাজ্য সভাপতির সঙ্গে দলের আরও কয়েকজন নেতা-নেত্রী ছিলেন, ছিলেন সাধারণ কর্মীরাও। পুলিশ অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই লাঠি চালিয়ে সেই ধরনা তুলে দেয়। সুকান্ত এবং দলের বর্ষীয়ান নেত্রী অর্চনা মজুমদারকে টেনে হিঁচড়ে পুলিশ তাদের লঞ্চে তুলে দেয়। তাঁদের গ্রেফতার করে পরে লঞ্চেই ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় মহিলা নেত্রীদের নিয়ে সন্দেশখালি যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাঁদেরও আটকে দেয়। সুকান্ত, লকেটদের আটকানো নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভাড়া না দেওয়ায় গেটে তালা লাগিয়ে দিল ঘর মালিক
রাজনীতির কারবারিরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম পর্বে এবং জঙ্গলমহলে মাওবাদী কার্যকলাপের সময় তখনকার বাম সরকার বিরোধীদের আটকাতে যখন তখন ওই সব এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করত। বিরোধীদের ১৪৪ ধারার অজুহাতে উপদ্রুত এলাকাগুলিতে ঢুকতে দেওয়া হত না। তখন অবশ্য এখনকার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু ছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সঙ্গী। অনেক সময় পুলিশের চোখ এড়িয়ে, আবার কখনও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে মমতা সঙ্গীদের নিয়ে কিংবা একা ভিতরে ঢুকে পড়তেন। এখন সেই কায়দাতেই বিজেপি সন্দেশখালিকে তাদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র করে তুলতে চাইছে।
বিজেপির অন্দরের খবর, লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত তারা সন্দেশখালি ইস্যু জিইয়ে রাখতে চায়। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে চাপে রাখতে চায়। এই ব্যাপারে জাতীয় মহিলা কমিশন, জাতীয় এসসি কমিশন, জাতীয় আদিবাসী কমিশন, জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের মতো সংস্থাগুলির রিপোর্ট এবং মতামতও বিজেপির বড় হাতিয়ার হয়ে গিয়েছে। যদিও তৃণমূলের দাবি, বিজেপি রাজনৈতিক কারণে সন্দেশখালিতে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। শান্ত বাংলাকে অশান্ত করার চক্রান্ত চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য কয়েকদিন আগেই বিধানসভায় বলেন, সন্দেশখালিতে তেমন কিছু হয়নি। তিলকে তাল করা হচ্ছে।
এই অবস্থার মধ্যেই আগামী মাসের প্রথমেই এক সপ্তাহের মধ্যে তিনবার রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১ মার্চ মোদি জনসভা করবেন আরামবাগে, পরের দিন তাঁর সভা রয়েছে কৃষ্ণনগরে। ৬ মার্চ মোদির সভা বারাসতে। তিন সভাতেই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে অবধারিতভাবে উঠে আসবে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। কয়েকদিন আগে দিল্লিতে দলের জাতীয় কনভেনশনে সন্দেশখালি নিয়ে পৃথক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছ। সেই প্রস্তাব এনেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সন্দেশখালি নিয়ে লোকসভা ভোটে ফয়দা তুলতে সক্রিয়। সেই ফয়দা কতটা তোলা যাবে, তা বলবে সময়।
আরও খবর দেখুন