আলিপুরদুয়ার: তা হলে কি গাফিলতির কারণেই ১৩ জানুয়ারি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের দোমহনির মোয়ামারি এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছিল আপ বিকানের-গুয়াহাটি (Bikaner Express Accident) এক্সপ্রেস কে? উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ‘অ্যাক্সিডেন্ট রিপোর্ট’-এ তার জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে (Maynaguri train accident investigation)।
ময়নাগুড়ি রেল দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, পটনা থেকে বিকানের এক্সপ্রেসকে গুয়াহাটির দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া ওয়াপ-‘৪’ ২২৩৭৫ নম্বর ইঞ্জিনটি শেষ বারের মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছিল ২০২১-এর ১১ নভেম্বর। পরবর্তীতে এই ইঞ্জিনটির দেখভাল হওয়ার কথা ছিল ২০২২-এর ৯ জানুয়ারি। কিন্তু, নির্দিষ্ট দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ঠিক কোন নির্দেশের প্রেক্ষিতে ইঞ্জিনটিকে ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল, সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: Mainaguri Train Accident: ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তে স্থানীয়দের বয়ান সংগ্রহ রেলের
রেলওয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ‘ঘটনাটি চমকে ওঠার মতো এবং এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। ওই চরম ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে রেল যদি শুধুই মুনাফার দিকে তাকিয়ে অচল ও অসুস্থ ঘোড়া নিয়ে যাত্রী পরিষেবা দেওয়া চালিয়ে যায়, তবে তার ফল হতে পারে মারাত্মক।’
এখানেই শেষ নয়, রেলের রুলবুক অনুসারে ২০০১ সালে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভে তৈরি ওই ইঞ্জিনটির প্রতি ১০ বছর অন্তর সার্বিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা(POH) হওয়ার কথা। অথচ, রেলের রেকর্ড অনুসারে ওই ইঞ্জিনটির শেষ বার ‘পিওএইচ’ হয়েছিল ২০২১ সালের ২৭ জুন। নিয়ম মেনে ইঞ্জিন তৈরির ঠিক ১০ বছর পরে বাস্তবে কোনও ‘পিওএইচ’ করা হয়নি। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রেও প্রায় দু’বছর সময় অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছে।
এর থেকেই পরিষ্কার যে, দুর্ঘটনার পরদিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ইঞ্জিনের স্বাস্থ্য নিয়ে যে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, তাই সম্ভবত শেষ পর্যন্ত মান্যতা পেতে চলেছে।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ইঞ্জিনটির সমস্যার কথা চালক জানানোর পরেও কেন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, তারও তুল্যমূল্য বিচার শুরু করেছে রেলওয়ে সেফটি কমিশন। বিকানের এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার প্রথমিক রিপোর্ট খতিয়ে দেখে রেলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার মন্তব্য করেছেন, ‘এ তো মারাত্মক অপরাধ! ওই গাফিলতির মাশুল গুনতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের, যা একেবারেই কাম্য নয়।দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বন্ধ থাকায় রেলের সুরক্ষার প্রশ্নে লোকবলের অভাব প্রকট হয়েছে। ফলে কম সময়ে সামান্য লোক দিয়ে দায়সারা ভাবে কাজ চালানো হচ্ছে। না হলে ‘পিওএইচ’ কেন করানো হবে না? কেনই বা বাৎসরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে না ইঞ্জিনের? যদি ইঞ্জিনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে গাফিলতির এই হাল হয়, তবে এটা তো স্পষ্ট যে কতটা চরম রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে কোচ ও রেকের ক্ষেত্রে।’
আরও পড়ুন: Bikaner Express Accident: ছয় বছর আগে গুয়াহাটির এক্সপ্রেসের স্মৃতি উস্কে দিল বিকানের দুর্ঘটনা
যদিও বুধবার রেল দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কর্তারা। তবে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক গুনীত কাউরের বক্তব্য, ‘যা আপনারা পেয়েছেন, তা নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করছি না। একমাত্র কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির রিপোর্ট হাতে পেলেই সঙ্গে সঙ্গে সরকারি ভাবে জানানো হবে।’