কলকাতা: জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আংটি-কাণ্ডে আদালতের চরম তোপের মুখে পড়লেন প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী। দিন কয়েক আগে আলিপুর আদালতে পার্থর হাতের আঙুলে আংটি দেখে বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। জেলবন্দির হাতে আংটি কী করে থাকে, তা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন বিচারক। সেদিনই প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সেই নির্দেশ মেনেই বুধবার আদালতে হাজিরা দেন প্রসিডেন্সি জেলের সুপার। বিচারকের একের পর এক প্রশ্নবাণে চূড়ান্ত বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন দেবাশিস। বিচারক জানতে চান জেলবন্দি পার্থর হাতের আঙুলে আংটি তিনি পরার অনুমতি দিলেন কী করে। সুপারের রিপোর্টে লেখা ছিল, পার্থর হাতের আঙুল ফোলা ছিল বলে আংটি খুলতে বলা হয়নি। বিচারক ফের জানতে চান, সুপার আংটি খোলার চেষ্টা করেননি কেন?
সুপার: অনেকবার চেষ্টা করেছি। উনি কথা শোনেননি।
বিচারক: সে কথা রিপোর্টে লেখা নেই কেন? আমি দেখছি রিপোর্টেও আঙুল ফোলার কথা লেখা নেই। শুধু তাঁর চেহারা ভারি বলে উল্লেখ রয়েছে। তাই যদি হয়, তাহলে প্রথমে আংটি দেখা গেল, আবার পরের মুহূর্তে সেই আংটি উনি খুলে ফেললেন কী করে।
সুপার: আংটি খুলতে গেলে তাঁর ত্বকের ক্ষতি হত। আমি তা চাইনি।
বিচারক: আপনাকে কেন এখানে ডাকা হয়েছে, নিশ্চয়ই জানেন। আমার সঙ্গে শব্দ নিয়ে খেলা করবেন না।
সুপার: আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার। ইয়েস স্যার।
বিচারক: আপনারা যা দেখাতে চান, আমরা সেটাই খালি দেখি। বাকিটা দেখি না। এটা ভাববেন না। আমরা অনেক কিছু দেখতে পাই। এবার বলুন আংটি কেন খোলা হল না?
আরও পড়ুন: নবান্নে পর্যালোচনা বৈঠক, ১০৯টি প্রকল্পের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা
সুপার: যখনই আংটি খোলার চেষ্টা করছি, তখনই আঙুল প্রায় ছিঁড়ে যাচ্ছিল।
বিচারক: সেদিন আংটির প্রসঙ্গ উঠতেই কোনও আর্তনাদ ছাড়া কী করে তা খুলে ফেলা গেল? যাই হোক, আমার অর্ডার শিটটা বের করুন। আপনার কাছে যে দুটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছিল তা পড়ুন।
এর পরই বিচারক জেল সুপারকে একটি লাইন পড়তে বলেন। তিনি জানতে চান, সেখানে কোথায় বিষ্যটির ব্যাখ্যা আছে। সুপার মাথা নিচু করে বলেন, সরি স্যার। আমার মনে হয়েছিল এটাই ঠিক।
বিচারক: একটি বাচ্চাকে একটি উত্তর লিখতে বলা হল, সে অন্য কথা লিখল। শিক্ষক কি সেটা মানবেন? তাহলে আপনি কেন উত্তর বদলে দিলেন। প্রথম অনুচ্ছেদটা আবার পড়ুন। জেল কর্তৃপক্ষের কোনও সুপ্রিম ক্ষমতা নেই। তাহলে কেন এই কথা লিখেছেন? আপনি কি শব্দের খেলা খেলছেন?
সুপার: আসলে স্যার আমি এই ভাবেই লিখতে অভ্যস্ত।
বিচারক: ১০ মিনিট সময় দিচ্ছি, নতুন কাগজ নিয়ে আমাকে হাতে লিখে দিন। এর পর আপনার কাছ থেকে আর কী আশা করতে পারি?
সুপার: সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করব।
বিচারক: আমার কাছে অনেক বন্দি অভিযোগ করেন, জেলে ঠিক মতো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। এই সব বিষয়েও জেলের অভিভাবক হিসেবে আপনাকেই মাথায় রাখতে হবে। আমার এর থেকে আর বেশি কিছু আপনাকে বলার নেই। আপনি আদালত ছাড়তে পারেন।
আদালত থেকে বেরিয়েই জেল সুপার এক পুলিশের বাইকে চেপে দ্রুত বেরিয়ে যান। সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের জবাব না দিয়েই তিনি চলে যান।