কলকাতা: বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে আনার জন্য শেষ পর্যন্ত অডিন্যান্সই আনছে রাজ্য সরকার। এখন যেহেতু বিধানসভার অধিবেশন নেই, তাই অডিন্যান্সই আনা হচ্ছে। ক’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ব্যাপারে ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিধানসভার অধিবেশন যখন চলছে না, তখন অডিন্যান্সই আনা যেতেই পারে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকে সরকারি বেসরকারি সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে বসানোর ব্যাপারে গত বছরই উদ্যোগ নেয় রাজ্য সরকার। এই উদ্যোগের প্রেক্ষাপট ছিল প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনধড়ের সঙ্গে তৃণমূল সরকারের সংঘাত। বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে ধনধড়ের অতি সক্রিয়তাকে মেনে নিতে পারেনি সরকার। রাজ্য সরকারের অভিযোগ ছিল, উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে জগদীপ ধনধড় অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন। যখন তখন তিনি উপাচার্যদের ডেকে পাঠাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেই রাজ্য পাল একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এই অভিযোগেই মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য পদে বসানোর চিন্তা ভাবনা করে সরকার।
আরও পড়ুন: নীতীশ-মমতা কথা মঙ্গলে, বিজেপির অমঙ্গলের অশনি সংকেত?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু গত বছর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকেই সাহার্য পদে বসানো যায়কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার কিছুদিন পরেই ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি সংশোধনী বিল আনা হয় বিধানসভায়। তাতে বলা হয়, রাজ্যপাল নন মুখ্যমন্ত্রীই হবেন সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। সেই বিল বিধানসভায় পাশ হয়ে রাজ্য পালের কাছে যায়। কিন্তু রাজ্যপাল ধনধড় সেই বিলে অনুমতি দেননি। পরবর্তীকালে ধনধড় উপরাষ্ট্রপতি হন। রাজ্যপাল হয়ে আসেন দুঁদে আমলা সি ভি আনন্দ বোস। তাঁর কাছেও ওই বিল আটকে থাকে। সম্প্রতি তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন শিখ্যমন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, রাজ্যপাল হয় ওই বিল ছেড়ে দিন নতুবা আবার ফেরত পাঠিয়ে দিন। আমরা আবার তা বিধানসভায় আনব। তার পরেও অবশ রাজভবন সেই বিল অনুমোদন যায়নি। এই ইস্যুতে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সংঘাতও এখন তুঙ্গে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাজ্যপালকে সরিয়ে আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে আনার জন্য অডিন্যান্স আনছে রাজ্য সরকার। রাজনৈতিক মহল মনে করছে এই ফলে রাজভবন-নবান্ন সংঘাত আরও বাড়বে। প্রসঙ্গত মঙ্গলবারই সুপ্রিমকোর্ট রাজ্যপালদের বিল আটকে না রেখে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি পি এস নরসীমহার বেঞ্চ রাজ্যপালদের এ ব্যাপারে সংবিধাধানের ২০০ ধারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যপালকে বিল ছেড়ে দিতে হবে।