Placeholder canvas
কলকাতা শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
চতুর্থ স্তম্ভ: বাবা রামদেবের নয়া ঘাপলা
সম্পাদক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১, ১০:৪৫:৫৩ পিএম
  • / ৭০৬ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

আমাদের দেশে বড় চোর হবার সহজ উপায় হল সাধু, মুনি, ঋষির ভেক ধরা, একটা গেরুয়া পরে নিন, দাড়ি বাড়ান, কয়েকটা কায়দা কৌশল জানলে তো আর কথাই নেই, মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করবে, করবেই। আজ নয়, বহু প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের দেশে এটাই স্বাভাবিক। এমন কি পুরাণ কাহিনীতেও তাই, রাবণকে সাধুর পোষাক পরে যেতে হয়েছিল সীতার কাছে, ভিক্ষাং দেহি বলে দাঁড়িয়েছিল দরজায়, কর্ণের কবজ কুণ্ডল হাসিল করার জন্য ব্রাহ্মণ মুনির বেশ ধরেছিলেন কৃষ্ণ, মোদ্দা কথা কাউকে ঠকাতে হলে গেরুয়া পরে নাও দাড়ি বাড়াও, সোজা উপায়।

আসুন, এবার রামদেব নিয়ে দুটো কথা বলা যাক। হঠাৎ তো আবির্ভূত হননি, ছিলেন এ দেশেই, কপালভাতি, অনুলোম, বিলোমের পাশাপাশি রাজনীতিতে নামলেন ২০১২-২০১৩ থেকে, আন্না হাজারের আন্দোলনে দেখা গেলো তাঁকে, এক্কেবারে পাক্কা রাজনীতিবিদের মতো, কিন্তু শরীরে গেরুয়া, বড় দাড়ি আর যোগ ব্যায়াম এক অন্য মাত্রা দিল, প্রচার পেলেন। রামলীলা ময়দানে আন্দোলনের সময়, পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে শালোয়ার কামিজ পরলেন, আরও প্রচার পেলেন। যে সরকার মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী, যে সরকার পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়ায়, যে সরকারের সময়ে ধর্ষণ হচ্ছে খোদ রাজধানীতে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে সরব বাবা রামদেব একাধারে সন্ন্যাসী, অন্যধারে যোগ শিক্ষক, এবং সরাসরি রাজনীতিতে নেই, দারুণ কম্বিনেশন। মানুষের নজর আর সমীহ দুই কাড়লেন, জনপ্রিয় হল তাঁর আমলকির রস থেকে অ্যালোভেরার টনিক, পতঞ্জলি ছড়িয়ে পড়ল দেশে, এবং মোদিজির সরকার আসার পরে তো আর কথাই নেই, হিন্দিতে বলে দিন দুনি রাত চৌগুনি, শ্রীবৃদ্ধি দেখার মত।

রামদেব আর পতঞ্জলির কথায় আসব আবার, তার আগে রুচি সোয়া ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নিয়ে দুটো কথা বলা যাক, এবং তারপর মূল কথায় আসব। রুচি সোয়া ইন্ডাস্ট্রিজের শুরুয়াত, শিল্পপতি দীনেশ সাহারার হাত ধরে। সোয়া মিল্ক, সোয়া অয়েল, পাম অয়েল, বাদাম তেল, নিউট্রিলা ইত্যাদি বেশ কিছু প্রডাক্ট নিয়ে, বিরাট ভাবে তারা বাজারে নামে। ২০১২ থেকে এই বৃদ্ধি শুরু হয়, সারা দেশে প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখা যায়, এবং কিছুদিনের মধ্যেই এই কোম্পানি শেয়ার বাজারেও নজর কাড়ে। কিন্তু বছর ৩ এর মধ্যেই রুচি সোয়া কোম্পানির অবস্থা খারাপ হতে থাকে, যখন সবাই বুঝতে পারছে যে রুচি সোয়া একটি ফাটকা কোম্পানি। ততদিনে ব্যাঙ্কের কাছে রুচি সোয়ার ধার ১২০০০ কোটি টাকারও বেশি। কোম্পানির ডিরেক্টররা হাত তুলে দেয়, ব্যাঙ্ক কোম্পানিকে দেউলিয়া ঘোষণা করে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নেতৃত্বে এক কনসোর্টিয়ামের কাছে রুচি সোয়ার ধার, ১২১৪৬ কোটি টাকা। দেউলিয়া ঘোষণা করার কাজ শুরু হবার কিছুদিন পরে, ওই ধরুন ৩/৪ মাস পরেই শুরু হল নতুন গল্প। আসরে নামলেন বাবা রামদেব আর তাঁর কোম্পানি পতঞ্জলি, আলোচনা শুরু হল, চলতে থাকল।

 ইতিমধ্যে ২০১৯ এ মে মাসে নরেন্দ্র ভাই দামোদরদাস মোদি দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে গেছেন। যিনি আবার বলেছেন, না খায়েঙ্গে, না খানে দেঙ্গে। তো সেই ২০১৯ এর ডিসেম্বরে পতঞ্জলি টেকওভার করল রুচি সোয়া ইন্ডাস্ট্রিজকে, কত দামে? কারণ ধারই তো ১২১৪৬ কোটি টাকা। না, বাবা রামদেবকে অত টাকা দিতে হয়নি, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নেতৃত্বে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে রফা হল, পতঞ্জলি দেবে ৪৩৫০ কোটি টাকা, বাকিটা? মানে আমার আপনার আরও প্রায় ৮০০০ কোটি টাকা উবে গেলো, কিন্তু এখানেই গল্প শেষ নয়, সবে শুরু। কারণ ওই ৪৩৫০ কোটি টাকার মধ্যে ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচার হবে ১১৫ কোটি টাকা, আর ৪২৩৫ কোটি টাকা দিয়ে ধার মেটানো হবে। টেক ওভার প্রক্রিয়াতে এটাই সিদ্ধান্ত হল। কে কে পাবে এই টাকা? সিকিওরড ফিনান্সিয়াল ক্রেডিটররা, মানে ব্যাঙ্ক ইত্যাদিরা পাবে ৪০৫৩ কোটি টাকা। আন সিকিওরড ফিনান্সিয়াল ক্রেডিটর রা পাবে ৪০ কোটি টাকা। অপারেশনাল ক্রেডিটররা পাবে ৯০কোটি টাকা। নিয়মমাফিক বাকি, স্টাটিওটারি ডিউস, ওই পিএফ, বিভিন্ন ট্যাক্স যা বাকি ছিল, তা মেটাতে খরচ হবে ২৫ কোটি টাকা। আগেকার কর্মাচারীদের বেতন যা বাকি ছিল, তার এক ছোট্ট ভগ্নাংশ দেওয়া হবে, তার পরিমাণ ১৪.৯২ টাকা আর একটা কাউন্টার ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির জন্য খরচ হবে ১১.৮৯ কোটি টাকা। বেশ, তো টাকাটা কি পতঞ্জলি দিল? না, পতঞ্জলি দিল ১১৫০ কোটি টাকা। তাহলে বাকিটা? বাকি ৩২০০ কোটি টাকা ধার নেওয়া হল, কে ধার দিল? ওই স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নেতৃত্বে যে কনসোর্টিয়াম ছিল, তারাই সেই ধার দিল। কি দারুণ ব্যাপার তাই না? একজন মানুষ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ১০০০ টাকা ধার নিয়ে একটা গরু কিনল, সে শোধ দিতে পারবে না, ব্যাঙ্ক তখন গরুটা বিক্রি করল বাবা রামদেবের কাছে ৪০০ টাকায়। বাবা রামদেব ১০০ টাকা নিজের পকেট থেকে দিল, আর বাকি ৩০০ টাকা ওই ব্যাঙ্ক থেকেই আবার ধার করে সেই ব্যাঙ্ককেই ফেরত দিল। মাছের তেলে মাছ ভেজে, বাবা রামদেব আপনাকে কপালভাতি শেখাতে বসলেন, এদিকে আপনার কপাল পুড়েছে। আর মজার কথা দেখুন ওই দু হাজার ঊনিশ থেকে হু হু করে বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম, এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রুচি সোয়া ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম, তারা তাদের শেয়ার হোল্ডারদের ৯৬% রিটার্ণ দিয়েছে। হ্যাঁ  ৯৬% রিটার্ন, ২০২১ থেকে ৮৫.৮৫ % রিটার্ন দিয়েছে, এই প্যান্ডেমিক এর মধ্যেও। আপনি যদি পয়লা ফেব্রুয়ারি ২০২০ তে, ১০০০টা শেয়ার কিনতেন, তাহলে আপনার শেয়ারের বর্তমান দাম হত ১২ লক্ষ ৯ হাজার টাকা, একেই বলে ছপ্পড় ফাড়কে আমদানি, তাই না?

এদিকে গত কয়েক বছরে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ১৩৩%, এবং আরও ইন্টারেস্টিং ঘটনা হল, এদেশে কয়েকটা বড় কোম্পানি, যারা ভোজ্য তেল বিক্রি করে তারা কারা? প্রথমেই আছে আদানির ফরচুন, তারপর সোয়া রুচি, মালিক বাবা রামদেব তারপর গোকুল অ্যাগ্রো রিসোর্সেস,  মালিক কানুভাই ঠক্কর, আহমেদাবাদ, গুজরাটের মানুষ, তারপর গুজরাট অম্বুজা। যা বুঝে নেবার বুঝুন, এবং এখানেই গল্পের শেষ নয়, মাত্র ক’দিন আগে মোদি সরকার ভোজ্য তেল নিয়ে আত্মনির্ভর হবার জন্য ন্যাশনাল এডিবল অয়েল মিশন তৈরি করেছে। ঘোষণা হয়েছে দেশের ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে পাম গাছের চাষ করা হবে, যাতে করে দেশে ভোজ্য তেলের উৎপাদন বাড়ানো যায়। তারজন্য ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের এলাকাতে এই চাষ হবে। এই ঘোষণা কবে? অগস্ট মাসের ২০ তারিখ ইউনিয়ন ক্যাবিনেট এই ঘোষণা করল, মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এই তথ্য জানালেন, তার আগেই নরেন্দ্র মোদি ভোজ্য তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলেছেন। মজার কথা হল, এইসব ঘোষণার আগেই বাবা রামদেব, তাঁর কোম্পানি পতঞ্জলি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছে যে তারা অসম, ত্রিপুরা এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলে সার্ভে চালিয়েছেন। বেশ কিছুদিন ধরে সার্ভে করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সব এলাকায় পাম কাল্টিভেশনের কাজ শুরু করা হবে। অর্থাৎ পতঞ্জলি কোম্পানি, অন্তত মাস চারেক আগে থেকে যে এলাকাতে পাম কাল্টিভেশনের সিদ্ধান্ত নিল, সেই এলাকাগুলোতে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করল, মোদি সরকার। কে, কারা দেশ চালাচ্ছে? চারমাস আগে কোম্পানি রেজিস্টার করার পরেই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বিমানবন্দর, যাদের অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও রকম অভিজ্ঞতা নেই, কোনও ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই, তাদের হাতে দেওয়া হচ্ছে রাফালের দেখভাল! পতঞ্জলি আগে সার্ভে করছে, তাদের কোম্পানি আগে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারপর সরকারের সিদ্ধান্ত আসছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বিএসএনএল শুকিয়ে মরছে, জিও ব্যবসা করছে। এই দেশের মহান প্রধানমন্ত্রী এর আগে বলেছেন না খায়েঙ্গে, না খানে দেঙ্গে। এদিকে খাচ্ছে কারা? তা আজ পরিস্কার।

দুর্নীতির পাহাড়ে চেপে বসেছে এই সরকার, অথচ গেরুয়া পরে, দাড়ি বাড়িয়ে সাধুর ভেক ধরেছে তারা। সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের পয়সা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছে, এই মুহূর্তে এই খেলা বন্ধ করার জন্য সরব হতে হবে আমাদের, এই অতিমারি আমাদের রোজগার কেড়েছে, দেশের অর্থনীতিকে তলানিতে এনে ফেলেছে, জিডিপি কমছে, বেকারত্ব বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আদানি, আম্বানি, বাবা রামদেবের পুঁজি, এই সত্য প্রত্যেকের কাছে তুলে ধরাটাই এই সময়ের দাবি, আমরা বলছি, আপনারাও বলুন।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

বাতিল গানের কনসার্ট, অসুস্থ প্রিয়ঙ্কার স্বামী নিক!
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী, কবে, জানুন
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
ভোটের দুদিন আগে সন্ত্রাস চালাতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী, দাবি অধীরের
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
ধোনি আমার ক্রিকেটের ‘পিতা’, বললেন লঙ্কান পেসার
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
৮ দিন পর বাড়ি পৌঁছল নিহত বিজেপি কর্মীর মৃত দেহ
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
তীব্র তাপের ঝলসে যাচ্ছে চা গাছের কচি পাতা
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
রাজনীতির ময়দানে বাবার সঙ্গে বিভাজন রেখা টানলেন সোনাক্ষী!
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
কুণালের মান ভঞ্জন, বিশেষ উদ্যোগ ব্রাত্যের
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
মোহনবাগানকে ফাইনালের জন্য শুভেচ্ছা জানালেন সনি নর্ডি
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
তাপপ্রবাহের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের পটল চাষিরা
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
হাইভোল্টেজ ঘাটালে ভোট বয়কটের ডাক
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
কমছে তাপমাত্রা, রবিবার থেকে বৃষ্টি কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
দীর্ঘদিন ধরে পানীয় জলের সমস্যায় খোকলাবস্তির বাসিন্দারা
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
লাগামহীন ভূর্গভস্থ জল ব্যবহারে অভিযুক্ত দেশের ১৩ ক্রিকেট স্টেডিয়াম  
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
কীভাবে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে মামলা? সুপ্রিম প্রশ্নের মুখে ইডি
শনিবার, ৪ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team