পুরুলিয়া: ঘরের ভিতর মাটিতে পড়ে বাবা-ছেলের মৃতদেহ৷ মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে৷ সোমবার সাত সকালে পুরুলিয়ার বেলগুমার হোমগার্ডের কোয়ার্টার থেকে বাবা ও ছেলের দেহ উদ্ধার করে পুলিস৷ জানা গিয়েছে, স্পেশাল হোমগার্ড কর্মী হেমন্ত হেমব্রত তাঁর ছ’বছরের সন্তান সোমজিৎকে খুন করে আত্মঘাতী হন৷ স্ত্রী চম্পাকেও খুন করতে গিয়েছিলেন হেমন্ত৷ কিন্তু কোনওমতে তিনি পালিয়ে বাঁচেন৷ পুলিস চম্পাকে আটক করেছে৷ তাঁকে জেরা করে খুনের ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিস৷
হেমন্ত এবং চম্পা আগে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ ২০০৮ সালে মাওবাদী দলে যোগ করার পর অযোধ্যা স্কোয়াডের সদস্য হয়ে ওঠেন হেমন্ত৷ তিন বছর পর স্কোয়াড ভেঙে যায়৷ হেমন্ত পালিয়ে চলে আসেন ঝাড়খণ্ডের সারেন্ডার জঙ্গলে৷ ২০১৩ সালে তিনি আত্মসমর্পণ করেন এবং মাওবাদী কোটায় হোমগার্ডের চাকরি পান৷ মাওবাদী দলে থাকা সময় চম্পা হেমব্রমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ ২০১৩ সালে চম্পা গ্রেফতার হন৷
তবে প্রণয়ের সম্পর্ককে পরিণতি দিতে তাঁরা বেশি সময় নেননি৷ বাড়ির লোকের সম্মতিতে পুলিস লাইনে বিয়ে হয় দু’জনের৷ বিয়ের পর বেলগুমার আট নম্বর কোয়ার্টারে চম্পাকে নিয়ে নতুন সংসার পাতেন হেমন্ত৷ দু’জনের একটি ছেলে সন্তানও হয়৷ প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস জানতে পেরেছে, বিয়ের কয়েকবছর পরই তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্কে চিড় ধরে৷ মাঝেমধ্যেই স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হত৷ সেই অশান্তি সোমবার ভোররাতে চরমে ওঠে৷ স্ত্রীকে খুন করার চেষ্টা করেন হেমন্ত৷ কিন্তু চম্পা পালিয়ে যান৷ ঘরেই ছিল ছেলে৷ তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হন৷ দেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিস৷
আরও পড়ুন: Mumbai: কাজের টোপ দিয়ে তরুণীকে গণধর্ষণ, নাবালক-সহ ধৃত ৪
চম্পাকে জেরা করে পুলিস জানিয়েছে, ছেলেকে খুন করার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার নলি কেটে আত্মঘাতী হন হেমন্ত৷ চম্পা তখন পালিয়ে তাঁর ভাই প্রাক্তন মাওবাদী নেতা স্পেশ্যাল হোমগার্ড হাজারি হেমব্রমের কাছে যায়৷ সেই সময় হাজারি বেলগুমা পুলিস লাইনের গেটে ডিউটিতে ছিলেন৷ তাই আশেপাশের বাসিন্দাদের নিয়ে চম্পা ঘরে ঢুকে দেখেন মেঝেয় পড়ে স্বামী ও ছেলের নিথর দেহ৷ স্পেশ্যাল হোমগার্ড লক্ষ্মীরাম মাঝি জানিয়েছেন, হেমন্ত অস্বাভাবিক জীবন যাপন করত৷ মাঝেমধ্যেই কাউকে কিছু না বলে চলে যেতেন৷ দিনের অধিকাংশ সময় মদ্যপ অবস্থায় থাকতেন৷ যে কারণে পারিবারিক অশান্তি লেগেই থাকত৷