Placeholder canvas
কলকাতা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
চতুর্থ স্তম্ভ: হিন্দুত্ববাদী গুন্ডারা বন্ধ করে দিল স্কুল
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  • | Edited By:
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২, ১০:৪৫:৪০ পিএম
  • / ৩৮৮ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • • | Edited By:

সবসময় মাথায় রাখবেন আমরা আপাতত অমৃতকালে প্রবেশ করে গিয়েছি এবং এই অমৃতকালের ঢোকার রাস্তা ওয়ান ওয়ে, ঢুকে পড়েছেন মানে ঢুকে পড়েছেন৷ এবার আপাতত ওই অমৃতকালেই থাকতে হবে৷ নানান তামাশা দেখতে থাকুন, শুদ্ধ নিরামিষ খান, দেশের সংবিধান, সংবিধানের প্রস্তাবনা ভুলে যান, আগস্ট মাস, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব চলছে, জয় শ্রী রাম, জয় মোদিজীর জয়। পেটে গামছা বেঁধে রাজার জয়গান করতে থাকুন। রেল মানে ভারতীয় রেলে নিরামিষ খাবার, কেবল নিরামিষ খাবার দেওয়া শুরু হয়েছে৷ আপাতত কয়েকটা ট্রেনে, সয়ে গেলে সব ট্রেনেই আলু পটল কি সবজি আর রুটি পাবেন। যে দু-এক পিস ছিবড়ের মতো মুরগি পাওয়া যেত, ছুঁড়ে মারলে মাথা ফেটে যাবে সেদ্ধ করার পর এতটাই শক্ত ডিম দিত, এবার তাও বন্ধ হয়ে যাবে৷ ওই যে অমৃতকাল। বিবেকানন্দ বেঁচে থাকলে ট্রেনে চড়াই ছেড়ে দিতেন৷ নিরামিষ ওনার রুচত না৷ দক্ষিণ ভারত থেকে বেলুড় মঠের এক গুরুভাইকে চিঠিতে লিখেছিলেন, অমুকের বাড়ি থেকে চলে এসেছি, ওসব ঘাস পাতা আমার সহ্য হয় না। চলে এসেছিলেন এক বাঙালির বাড়িতে।

কিন্তু মোদিজী নিরামিষ খান এবং আমরা তো তাঁরই নেতৃত্বে অমৃতকালের গহ্বরে ঢুকে পড়েছি৷ অতএব নিরামিষই ভরসা। এরকম রোজ নানান নাটক চলছে দেশের সর্বত্র। এই হিন্দুত্ববাদীদের চাপে স্কুল সার্কুলার দিতে বাধ্য হচ্ছে, হিজাব পরে আসলে ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না, টিকি থাকলে আপত্তি নেই, চওড়া কপালে তার চেয়েও বড় তিলক কাটা থাকলে আপত্তি নেই, মাথায় পাগড়ি, কোমরে কৃপাণ থাকলেও আপত্তি নেই, নাক থেকে ব্রহ্মতালু অবধি সিঁদুর থাকলে আপত্তি নেই, হিজাব থাকলে আছে। হিজাব নহি চলে গা। অন্য রাজ্যে যেতে হবে না৷ কলকাতা জুড়েও এই পান পরাগ কালচার, সিনেমা হলে মাল্টিপ্লেক্সে কোথাও এগ রোল নেই, নন ভেজ মোমো নেই, এরকম নয় যে ওগুলো নেই, ওগুলো নেই কারণ আমিষ খাওয়া বারণ। কেন? কোনও উত্তর নেই। বাংলা পক্ষের ও মুখে কুলুপ, সরকারেরও মাথা ব্যাথা নেই।

এসব ছিল না, আমাদের রাজ্যে নয়, কোথাও ছিল না৷ হরিদ্বারে আমিষ ছিল না, পুরীতে ছিল, পারশে মাছের ঝাল ছিল। বৃন্দাবনে আমিষ ছিল না, কিন্তু কামাখ্যায় আমিষ ছিল। এরকমই তো ছিল, কিন্তু নিরামিষ খাবারে সঙ্গে হিন্দু হওয়ার কোনও সম্পর্ক ছিল না, উত্তরভারতের হিন্দুরা বেশিরভাগ নিরামিষ খেতেন, পূর্ব ভারতের হিন্দুরা ঘোর আমিষ, এ নিয়ে কোনও টেনশন ছিল না। এখন রাস্তায় মাথায় ফেট্টি বেঁধে গেরুয়া ঝান্ডা নিয়ে গুন্ডারা বের হচ্ছে, নবরাত্রির সময় আমিষ রেস্তরাঁ বন্ধ করার জন্য, শ্রাবণ মাসে তীর্থযাত্রীদের যাতায়াতের পথে মাংসের দোকান, আমিষ রেস্তরাঁ নির্দেশ দিয়ে বন্ধ করেছে উত্তর প্রদেশ সরকার। আগে ছিল গরু, গোমাংস নিয়ে আপত্তি, এখন আমিষ নিয়ে। বৈদিক যুগে যজ্ঞ হয়েছে, ঋষি মুনিরা যজ্ঞে শয়ে শয়ে পশু আহুতি দিয়েছেন, সেই মাংস খেয়েছেন, তার বর্ণনা আছে, এমন কি রামায়নে রাম সীতা লক্ষণের বনবাসের সময় খাবারের বর্ণনা আছে, সুপক্ক হরিণের মাংস, সঙ্গে সোমরস।

রামায়ণ বাদই দিন এই বিজেপির অটল বিহারি বাজপাই চেটেপুটে মাছ এবং মাংস খেতেন, আদবানি পাক্কা নিরামিষ। মহাত্মা গান্ধী হত্যায় ফাঁসি হয়েছিল দুজনের, দুজনেই চিৎপাবন ব্রাহ্মণ, অগ্নি শুদ্ধ ব্রাহ্মণ, নাথুরাম ভিনায়ক গডসে আর নারায়ণ আপ্তে। নাথুরাম কঠোর নিরামিষাসি, অন্যদিকে আপ্তে আমিষই পছন্দ করতেন, হুইস্কি খেতেন। এরকম কত কিছুই ছিল আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের পরম্পরা, আজ এই হিন্দুত্ববাদী আর এস এস, বিজেপি, হিন্দু জাগরণ সমিতি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সেসব বৈচিত্র কে কালাপাহাড়ের মত ভেঙে চুরমার করতে চাইছে। শুরুর দিকে ছিল না, কিন্তু গান্ধিজী ৪৫ সাল থেকে নিয়মিত তাঁর প্রার্থনা সভায় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের রীতি চালু করেছিলেন, শেষদিন পাঠ শুরু হবার আগেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয় ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁর সান্ধ্য প্রার্থনা সভায় কোরান, বাইবেল, গীতা থেকে পাঠ করে শোনানো হত, হিন্দু মহাসভার লোকজন, আরএসএসের লোকজন বহুবার এই প্রার্থনা সভা ভন্ডুল করার চেষ্টা করেছে, পারেনি। গান্ধী হত্যার পর তো এই রীতি বহু জায়গায়, বহু প্রতিষ্ঠানে, বহু স্কুলে চালু হয়েছিল। তারপর তা বন্ধও হয়েছে, আমরা নজর দিই নি, আমরা গুরুত্বও দিই নি। ২০০৩ এ কানপুরে ফ্লোরেটস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল চালু হয়, হতেই পারে প্রতিষ্ঠাতা যিনি ছিলেন, তিনি গান্ধিজীর প্রার্থনা সভায় কোনওদিন গিয়েছিলেন, বা শুনেছেন অমনটা হত, যে কোনও কারণেই হোক ওই ফ্লোরেটস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রার্থনা সভায় হিন্দু,খ্রিস্ট, ইসলাম আর শিখ ধর্মের কিছু প্রার্থনা পাঠ করা হত, ছাত্ররা গলা মেলাতো। হ্যাঁ এটাই চলে আসছিল সেই ২০০৩ সাল থেকে, কেউ কোনও প্রশ্ন করেনি।

কিন্তু আজাদি কা অমৃত মহোৎসব চলছে, আগস্ট মাসের এক তারিখে লোকাল থানায় এফআইআর করা হল, হিন্দুত্ববাদী বেশ কিছু সংগঠন মিছিল করে থানায় গেলেন, থানা থেকে এসে স্কুল সিল করে দেওয়া হল ২ অগাস্ট, প্রিন্সিপাল আর কর্তৃপক্ষের নামে মামলা হয়েছে সেকশন ২৯৫-এ ধারায়, সাম্প্রদায়িক হিংসায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে এবং উত্তরপ্রদেশ প্রহিভিশন অফ আনলফুল কনভারসন অফ রিলিজিয়ন অ্যাক্ট ২০২১ এর আওতায়। দোষীদের বছর আষ্টেক সশ্রম কারাদন্ড হতেই পারে। যে কাজ করা জন্য ওই স্কুলের অধ্যক্ষ, পরিচালন সমিতির পুরস্কার প্রাপ্য ছিল, সেই কাজের জন্য এবার জেলে যাবেন তাঁরা। আমরা অমৃতকালে ঢুকে পড়েছি। জুলাই এর শেষের দিকে কানপুরে বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী গীতা নিগমের কাছে খবর আসে, ফ্লোরেটস স্কুলে প্রার্থনা সভায় ইসলাম ধর্মগ্রন্থে পাঠ হয়, তিনি এ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন, স্কুল জানায় কেবল ইসলাম নয় হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থ থেকেও প্রার্থনা পাঠ করানো হয়, এরপর হিন্দুত্ববাদী বেশ কিছু সংগঠন, হিন্দু জাগরণ মঞ্চের শিভম দিক্ষিতের নেতৃত্বে বিজেপির যুব ও মহিলা সংগঠন স্কুলে চড়াও হয়, স্কুল থেকে বলা হয় বেশ, তাহলে আগামী কাল থেকে প্রার্থনা সভায় কেবল জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে, কিন্তু তারপরের দিন ওই হিন্দুত্ববাদী মানুষজন মিছিল করে থানায় যায়, স্কুল প্রিন্সিপাল, পরিচালন সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়, ২ তারিখ স্কুলে তালা মেরে দেওয়া হয়। এখনও সেই স্কুল বন্ধ। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ওসব সর্বধর্ম প্রার্থনা সভা চলবে না।

এখবর কোথায়? ন্যাশনাল মিডিয়া? দ্য নেশন ওয়ান্টস টু নো, দেখতে রহিয়ে আজতক, এগিয়ে থাকে যারা, কোথায়? কোথাও নেই। এবং মজার কথা হল দেশের বিরোধীরা কোথায়? উত্তরপ্রদেশের সমাজতন্ত্রী অখিলেশ যাদব কোথায়? ন্যায় দিলায়েঙ্গে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, হম লড়কি হ্যাঁয়, হম লড় সকতে হ্যাঁয় তো বুঝলাম, কিন্তু লড়াইটা কই? এই ছোট ছোট লড়াইগুলো মিলেই হতে পারত এক যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক, ফাসিস্ট আরএসএস – বিজেপির বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ, কিন্তু এই লড়াই গুলো পড়ে থাকছে অবহেলায়, যেন কোনও এক নীতীশ কুমারের দল বদলানো দিয়েই বিজেপিকে হারানো যাবে, যেন দিল্লিতে এক কনক্লেভে হাত ধরাধরি করে ছবি তুললেই ফাসিস্ট শক্তিকে প্রতিহত করা যাবে। যারা এরকম ভাবছেন তাঁদের বলি ধর্মীয় ফাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই বড্ড শক্ত, কারণ তারা এক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে তাদের দিকে এই ছোট ছোট ইস্যুতে কাছে নিয়ে আসছে, কাজে লাগাচ্ছে। এবং এইভাবেই সারা দেশ জুড়ে তাদের ধর্মীয় উন্মাদনার ছাতার তলায় জড় হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। কানপুরে ফ্লোরেটস স্কুলে আজ যা হল কাল সেটাই ছড়িয়ে যাবে। প্রচার এক, ইসলামিক শক্তি দেশের মধ্যে তাদের ধর্মপ্রচার, ধর্মান্তরণ চালাচ্ছে, কাজেই হিন্দু খতরে মে হ্যায়। প্রচার দুই, আমরা ছিলাম বলেই স্কুলে ইসলাম ধর্মের প্রার্থনা বন্ধ করতে পেরেছি, আমাদের সমর্থন করুন। ৪৮ এর ৩০ শে জানুয়ারি সাভারকার, নাথুরাম, নারায়ন আপ্তেরা এক সর্বধর্ম প্রার্থনা সভা বন্ধ করেছিল, আজ স্বাধীনতার ৭৫ বছর অমৃতমহোৎসব চলাকালীন বিজেপি, হিন্দু জাগরণ সমিতি, আর এস এস কানপুরে আরেক সর্বধর্ম প্রারথনা সভা বন্ধ করলো। সেই কানপুর যেখানে ১৯২৫ এ কমিউনিস্ট পার্টির শুরুয়াত হয়েছিল, সেই কানপুর যেখানে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁতিয়া টোপি।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২ ১৩
১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০
২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬২৭
২৮ ২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

নাম না করে বিজেপির দেবাশিসকে খোঁচা তৃণমূলের শতাব্দীর
শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
আজ থেকে আরও বাড়বে শহরের তাপমাত্রা, দক্ষিণবঙ্গে লাল সতর্কতা জারি
শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
শনিবার ভাগ্য খুলবে ৫ রাশির জাতকের
শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
পশ্চিমবঙ্গে এনএসজি কমান্ডো ও রোবট দিয়ে সার্চ করা উচিৎ’ সন্দেশখালি নিয়ে সরব মিঠুন থেকে সুকান্ত
শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
সন্দেশখালিতে দিনভর তল্লাশি, গুলি-বন্দুক, উদ্ধার শাহজাহানের নথিপত্র
শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
দ্বিতীয় দফায় কোন কোন হেভিওয়েটদের ‘ভাগ্য পরীক্ষা’ ?
শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
২৬১ রান করেও লজ্জার হার কলকাতার
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
পাপারাজ্জিদের উপর রেগে লাল জুনিয়ার এনটিআর, কিন্তু কেন?
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
বাংলার তিন কেন্দ্রে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটের হার ৭০ শতাংশ
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার আঁকড়ে থাকার অধিকার নেই, মন্তব্য শুভেন্দুর
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
৬ বছরে গুগলে ১০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বিজেপির
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
গরমে বাংলায় ভোটের নামে কমিশন অত্যাচার করছে, অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
শাসক দলের ভয়ে বুথ ছেড়ে পালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী!
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
সন্দেশখালিতে বিস্ফোরকের সন্ধানে রোবট দিয়ে তল্লাশি এনএসজির
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team