শনিবার রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডকে অনেকটাই এগিয়ে রাখতে হবে। তবে গ্যারেথ সাউথগেটের ছেলেরা এই প্রথম নিরপেক্ষ ভেনুতে খেলবে। ইংল্যান্ডই একমাত্র টিম যারা চারটি ম্যাচই নিজেদের মাঠে খেলেছে। এবং এই চারটি ম্যাচের মধ্যে তারা বিশ্বের সেরা দুটো টিমকে হারিয়েছে। প্রথম ম্যাচেই তাদের কাছে হারতে হয়েছে গত বিশ্ব কাপের রানার্স ক্রোয়েশিয়াকে। স্কটল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করলেও ইংল্যান্ড জয়ের সরণিতে ফেরে গ্রূপের শেষ ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্রকে এক গোলে হারিয়ে। তিনটে ম্যাচে মাত্র দুটো গোল করার পর ইংল্যান্ডকে যখন গোলকানা ধরা হচ্ছিল, তখনই ইংল্যান্ড দুর্দান্ত ফুটবল খেলে প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে গোটা বিশ্ব ফুটবলকে ভাবিয়ে তুলেছে। বলাবলি শুরু হয়েছে তাহলে কি এত দিনের অধরা ইউরো ট্রফিটা কি এবার ইংল্যান্ডের ঘরে উঠবে?
কী হবে সেটা সময়ের কথা। কিন্তু আপাতত যেটা বলার কথা তা হল, ইংল্যান্ডই এই টুর্নামেন্টের একমাত্র দল যারা এখনও কোনও গোল খায়নি। এর পিছনে ইংলিশ ডিফেন্সের প্রশংসা করতেই হবে। বিশেষ করে প্রথম তিনটি ম্যাচে ব্যাক ফোরে খেলার পর ইংল্যান্ড যখন জার্মানির বিরুদ্ধে তিন ব্যাকে খেলতে শুরু করল তখন অনেকেই একটু অবাক হয়েছিল। কিন্তু জন স্টোন্সের নেতৃত্বে ইংলিশ ডিফেন্স খুব ভালভাবেই সামলে দিয়েছে জার্মানদের। তবে ইউক্রেন ম্যাচে আবার ব্যাক ফোরে ফিরতে চলেছে ইংল্যান্ড কাইল ওয়াকার এবং লুকা শ-য়ের সঙ্গে দুই সেন্টার ব্যাকে খেলবেন জন স্টোন্স এবং হ্যারি ম্যাগুয়ের। ইউক্রেন আক্রমণ নিশ্চিতভাবেই জার্মানদের মতো নয়। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে চার ব্যাকে খেলবে কেন ইংল্যান্ড?
এর একটাই উত্তরখ মাঝ মাঠে লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডন হ্যান্ডারসনের প্রত্যাবর্তন। চোট আঘাতে জর্জরিত হ্যান্ডারসন প্রথম চারটে ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি। তাঁকে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই স্কোয়াডে রেখেছেন সাউথগেট। এখন তিনি ফিট। তাই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাঁকে নামাতে চান কোচ। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মাঝ মাঠে ব্লকিংয়ের কাজটা ভালভাবেই সামলাবেন বলে সাউথগেটের বিশ্বাস। তাঁর পাশে থাকবেন ড্যানি রাইস, ফিল ফডেন এবং ম্যাসন মাউন্ট। অসুস্থতা কাটিয়ে মাউন্ট এখন সুপারফিট। চেলসি মিডফিল্ডার এবং ফিল ফডেনের উপর থাকবে দুই ফরোয়ার্ড হ্যারি কেন এবং রহিম স্টার্লিংকে বল জোগানোর দায়িত্ব। ইংল্যান্ড যে তিনটি ম্যাচ জিতেছে সেই তিনটি ম্যাচেই গোল করেছেন ম্যান সিটির রহিম স্টার্লিং। চেলসির কাছে হেরে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া হয়নি স্টার্লিং-এর। ইউরো কাপ জিতে তিনি সেই আক্ষেপ মেটাতে চান।
জার্মানির কাছে জয়ে ইংল্যান্ডের উপরি পাওনা অধিনায়ক হ্যারি কেনের গোল। রাশিয়া বিশ্ব কাপের টপ স্কোরার কেন প্রথম তিনটি ম্যাচে গোল পাননি। কিন্তু অধিনায়কের উপর আস্থা হারাননি কোচ। কোচের আস্থার মর্যাদা দিয়েছেন অধিনায়ক। একেবারে অন্তিম লগ্নে গোল করেছেন তিনি। ইংল্যান্ড সমর্থকদের আশা এবার কেনের কাছ থেকে নিয়মিত গোল পাওয়া যাবে। জার্মানি ম্যাচে দুটো গোলই হয়েছিল পরিবর্ত ফুটবলার জ্যাক গ্রিয়েলিশের পাস থেকে। তবে শনিবার তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে মাঠে নামার জন্য।
ইউক্রেনের কোচ আন্দ্রেই শেভচেঙ্কো ইউরোপের মহাতারকাদের মধ্যে একজন। তাঁর আমলে ২০০৬ সালের বিশ্ব কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল ইউক্রেন। সে ম্যাচে তারা ০-৩ গোলে হেরে যায় শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হওয়া ইতালির কাছে। তারপর এবার আবার তাঁর কোচিংয়ে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে তাঁর দেশ। তবে রোমের এই ম্যাচে ইউক্রেনের কোনও দর্শকের প্রবেশাধিকার নেই। কারণ ইতালি সরকারের কাছে ইউক্রেন রেড জোন। তবে ইতালিতে বসবাসকারী ইউক্রেনের বাসিন্দাদের মাঠে ঢুকতে বাঁধা নেই। একই অবস্থা ইংল্যান্ড দর্শকদের। তাদেরও প্রবেশ নিষেধ। প্রথম চারটি ম্যাচ নিজেদের দর্শকদের সামনে খেলার পর ইংল্যান্ডকে তাই সমর্থকদের চিৎকার ছাড়াই খেলতে হবে।
ইউক্রেন সরকার তাদের টিমকে অভূতপূর্ব ভাবে সমর্থন জানাল। বৃহস্পতিবার ক্যাবিনেট মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী সহ সব মন্ত্রীই ইউক্রেনের কচি কলাপাতা রঙয়ের জার্সি পরে উপস্থিত ছিলেন। নিজেদের ফুটবল সৈনিকদের এভাবেই সম্মানিত করল সে দেশের সরকার। সেই সভায় বিশেষভাবে প্রশংসিত হলেন সুইডেনের বিরুদ্ধে শেষ দিকে গোল করে টিমকে জেতানো আন্দ্রেই ইয়ারমোলেঙ্কো। তাঁর সঙ্গী স্ট্রাইকার রোমান ইয়ারেমচুকও গোলের মধ্যে। ইংল্যান্ডের চিন্তা এই দুজনকেই নিয়ে। তবে দু দলের শক্তির বিচারে ইংল্যান্ড অনেক এগিয়ে। এখন দেখার শেভচেঙ্কোর টিমের ছেলেরা তাঁদের জেদ এবং প্রতিজ্ঞা দিয়ে কতটা লড়াই করে।