শনিবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে নটায় আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে ডেনমার্কের মুখোমুখি হবে চেক প্রজাতন্ত্র। দুই দলই আগের চারটি ম্যাচে এমন পারফর্ম করেছে যে শনিবার কারা ফেভারিট বলা মুশকিল।
ডেনমার্কের কথাই ধরা যাক। ইউরোয় তাদের ইতিহাস বেশ ভাল। ১৯৯২ সালে মাত্র দশ দিনের প্রস্তুতিতে তাদের মাঠে নামতে হয়েছিল। এবং ডেনমার্ক মাঠ ছেড়েছিল চ্যাম্পিয়ন হয়েই। এবারেও যেমন ফিনল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন যখন মাঠের পাশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে গেলেন এবং পৌনে দু ঘণ্টা ম্যাচ বন্ধ থাকার পর ম্যাচ আবার শুরু হলে ডেনমার্ক ম্যাচটা হেরে গেল। সেদিনের হারটা অবধারিতই ছিল। কিন্তু ডেনমার্ক যে সেখান থেকে ফিরে এসে টুর্নামেন্টে টিকে থাকবে তা কেউ ভাবেনি। বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচে তারা যখন বেলজিয়ামের কাছেও হেরে গেল তখন তাদের বিদায় নিশ্চিতই ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ডেনিসরা অন্যরকম ভেবেছিল। তাই শেষ ম্যাচে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চার গোল করার পর তারা যখন প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে যখন ওয়েলসকেও চার গোলে হারাল তখন একটু নড়েচড়ে বসেছে ফুটবল দুনিয়া। অনেকেই তাই চেকদের বিরুদ্ধে ডেনিসদের ফেভারিট ভাবতে শুরু করেছেন।
কিন্তু সেটা বাস্তবে রূপায়িত করায় একটু হলেও অসুবিধে আছে। চেক প্রজাতন্ত্র প্রিকোয়ার্টার ফাইনালেও একটা বড় অঘটন ঘটিয়েছে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে। দুটো গোলের মধ্যে একটা করেছেন তাদের স্ট্রাইকার প্যাট্রিক সিক। বেয়ার লেভারকুসেনের এই স্ট্রাইকারটির এবারের ইউরোতে চারটি গোল হয়ে গেল। তার মধ্যে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর জোড়া গোলের দ্বিতীয়টি এবারের টুর্নামেন্টের সেরা। মাঝ মাঠ পেরিয়েই সিক দেখতে পান স্কটিশ গোলকিপার গোল লাইন ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে এসেছেন। কালবিলম্ব না করে সিক সেন্টার সার্কল থেকেই বাঁ পায়ের একটা উঁচু শট করলেন। প্রায় পঞ্চাশ মিটার অতিক্রম করে বলটা স্কটিশ নেটে আশ্রয় নিল। সিক শনিবারও মাঠে থাকবেন। তাঁর উপর কড়া নজর রাখতে হবে ডেনিস ডিফেন্সকে। তবে ভরসার কথা ডেনমার্কের গোলে থাকবেন কাসপার স্কিমিশেল। ই পি এল-এ লেস্টার সিটির গোলকিপারটি কিন্তু তাঁর দক্ষতায় অনেকের চেয়ে এগিয়ে। সিক বা তাঁর সতীর্থদের কাজটা তাই সহজ নয়।
দুটো টিমের বৈশিষ্ঠ্য হল তারা কেউই তারকানির্ভর নয়। অবশ্য ডেনমার্কের ক্রিশ্চিয়ান এরিকসনকে তারকা তকমা দেওয়া যায়। ইন্টার মিলানের মিডফিল্ডার তিনি। রোমেলো লুকাকুর সঙ্গে খেলেন। কিন্তু ডেনমার্কের দুর্ভাগ্য প্রথম ম্যাচের বিরতির আগেই তিনি টুর্নামেন্টের বাইরে। বাকিদের মধ্যে বার্সেলোনার স্ট্রাইকার মার্টিন ব্রেথওয়েট, ফরোয়ার্ড কাসপার ডলবার্গ, মিডফিল্ডার টমাস ডেলানি কিংবা ইউসুফ পলসেন কিন্তু ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। উল্টো দিকে চেকদের টিমেও টমাস হোলস, আন্তোনিন বারাক কিংবা লুকাস মাসোপুস্তদের মতো প্লেয়ার আছেন যাঁরা বিপক্ষের সমীহের কারণ। আর প্যাট্রিক সিকের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। তবে তিনি তো লুকাকু কিংবা রহিম স্টার্লিং নন।
আসলে হেভিওয়েট লড়াইয়ের ফাঁকে এই ম্যাচটা মূলত আন্ডারডগদের লড়াই। সেমিফাইনালে যেই যাক বিপক্ষ তাদের সহজ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই গণ্য করবে। সেটা দুই দলের পক্ষেই ভাল। তাদের উপর ফেভারিটের তকমা নেই। খোলা মনে খেলতে পারবে তারা। ডেনিসরা এখনও ডিনামাইট হয়ে ওঠেনি। চেকরা সেই ১৯৯৬ সালের ফাইনালিস্ট। অতীত দুটো টিমেরই বেশ ঝলমলে। এখন দেখার সেমিফাইনালে কারা উঠে সেই উজ্জ্বল অতীতকে ঝলমলে বর্তমান করে।