বেশ কয়েক বছর ধরে একাধিক নিম্নচাপের জেরে তৈরি হওয়া ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে সুন্দরবন। আয়লা, বুলবুল, আম্ফান ও ইয়াশ সহ একাধিক ঝড় থেকে সুন্দরবনের শহর-গ্রাম সহ একাধিক জনজীবনকে বাঁচিয়ে রেখেছিল ম্যানগ্রোভ। যখন কোনও ঝড় আসে, ঝড়ের সেই শক্তিকে অনেকটাই প্রতিহত করে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ। যার ফলে রক্ষা পায় সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগঞ্জ এমনকী শহর কলকাতাও।
কিন্তু বিগত দু’বছরে আম্ফান, ইয়াশ ও জাওয়াদ ঝড়ে বসিরহাটের সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ও হাসনাবাদ সহ একাধিক ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় ম্যানগ্রোভ অরণ্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আর যার ফলে নদীপাড়ের একাধিক জায়গায় ভাঙন ক্রমশ ব্যাপক আকার নিচ্ছিল।
আরও পড়ুন: Bhadu Sheikh Murder CBI: ভাদু শেখ হত্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
আর কিছুদিনের মধ্যে কালবৈশাখী আসবে। রায়মঙ্গল, ডাঁসা, ইছামতী ও বিদ্যাধরী নদীর প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে সুন্দরবনের একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচাতে ম্যানগ্রোভের প্রাচীর তৈরি করার অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হল।
বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের সন্দেশখালি ১নং ব্লকের সেহেরা-রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঁসা ও বেতনী নদীর পাড়ে এক লক্ষ ম্যানগ্রোভ বসিয়ে ম্যানগ্রোভের প্রাচীর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ম্যানগ্রোভের এই প্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে নদী ও বাঁধের ঠিক মাঝখানে। যার ফলে ঝড়ের সময় প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূলগুলি একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকার ফলে প্রাচীর সৃষ্টি করে বাঁধকে রক্ষা করবে। তার ফলে প্লাবনের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যাবে।
আরও পড়ুন: WB Weather Forescast: তীব্র গরমে সুখবর দিল হাওয়া অফিস, আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা ৫ জেলায়
এক গ্রামবাসী জানান, তাঁরা যে ঝড় দেখেছিলেন এবং প্রবল জলোচ্ছ্বাসে গ্রাম ভেসে গিয়েছিল, এই ম্যানগ্রোভ থাকলে হয়তো সেই জলোচ্ছ্বাস অনেকটাই কম হতো। ন্যাজাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক শুভাশিস মণ্ডলের উদ্যোগে ও সেহেরা-রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কালীকিঙ্কর দাসের সহযোগিতায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা থেকে গেঁওয়া, বাণী, ক্যাওড়া ও হেতালের মতো একাধিক প্রজাতির ম্যানগ্রোভ এনে রোপণ করে সন্দেশখালির প্রত্যন্ত গ্রামগুলিকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Medinipur Dacoity: মানবিক ডাকাত, জ্ঞান হারানো গৃহকর্তাকে জল দিয়ে সুস্থ করে তুলল, রেখে গেল মোবাইলও
তাঁদের কথা অনুযায়ী, সুন্দরবনকে বাঁচাতে পারে একমাত্র ম্যানগ্রোভই। সুন্দরবন বাঁচলে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে। বাঁচবে শহর কলকাতাও। তাই ম্যানগ্রোভের এই প্রাচীর তৈরি করে আমরা সুন্দরবনকে বাঁচাতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি।