ইস্ট বেঙ্গল এবং শ্রী সিমেন্টের চুক্তিজট মেটাতে এবার নিজেদের প্রাক্তন ফুটবলাদের মাঠে নামাল ইস্ট বেঙ্গল। শুক্রবার ক্লাব তাঁবুতে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাষ্কর গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এগারোজনের একটি কমিটি হয়েছে এবং এই কমিটিকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসে জট কাটানোর জন্য। পাশাপাশি ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল চুক্তিজট কাটানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের। সেই ব্যাপারে ক্লাব থেকে ইতিমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সময় চেয়ে। প্রাক্তনদের সঙ্গে শ্রী সিমেন্টের কর্তাদের আলোচনার আগেই যদি মুখ্যমন্ত্রীর ডাক আসে এবং তাঁর হস্তক্ষেপে সমস্যা মিটে যায় তাহলে তো সমাধান হয়েই গেল। পাশাপাশি চলতে থাকবে প্রাক্তন ফুটবলারদের প্রচেষ্টা। ক্লাব কর্তাদের আশা যে কোনও ভাবেই হোক জট কাটলেই হল। তাঁরা শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই আই এস এল-এ খেলতে চান।
গত ২৯ জুলাই ইস্ট বেঙ্গল তাঁবুতে ৫৭জন প্রাক্তন লাল হলুদ ফুটবলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জট কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে। গত মঙ্গলবার ক্লাবের কার্যকরী কমিটিও সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এবং সেই অনুযায়ী ক্লাবের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সময় চেয়ে আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সময় এখনও মেলেনি। এর মধ্যে প্রাক্তনদের সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তার প্রেক্ষিতে এদিন ক্লাব তাঁবুতে বসেছিল আবার একটি সভা। সেখানে এগারোজনের একটি কমিটি হয়েছে, যারা জট কাটাতে শ্রী সিমেন্টের কর্তাদের সঙ্গে বসতে চায়। ওই কমিটিতে মনোরঞ্জন-ভাষ্কর-প্রশান্ত ছাড়া আছেন মিহির বসু, অলক মুখার্জি, অতনু ভট্টাচার্য, কৃষ্ণেন্দু রায়, রহিম নবি, মেহতাব হোসেন, বিকাশ পাঁজি ও সুমিত মুখোপাধ্যায়। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, শ্রী সিমেন্টের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানোর। প্রাক্তনদের সভার পর ক্লাবের কার্যকরী কমিটিও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সমস্যা মেটানোর জন্য প্রাক্তনদের এই দলটিকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে। এখন দেখার শেষ পর্যন্ত সমস্যা কবে মেটে।
লক্ষ্য করার বিষয় একটাই যে, প্রাক্তনদের আগের সভা এবং এদিনের সভায় শ্রী সিমেন্টের দেওয়া এগ্রিমেন্ট মেনে না নেওয়ারই সিদ্ধান্ত বজায় থাকল। ক্লাবের কার্যকরী কমিটি তো আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনও ভাবেই তারা শ্রী সিমেন্টের দেওয়া এগ্রিমেন্ট মেনে নেবে না। মাঝখানে ক্লাবের প্রাক্তন সচিব পার্থসারথি সেনগুপ্তকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সমস্যা মেটানোর। কলকাতা হাই কোর্টের লব্ধপ্রতিষ্ঠ আইনজীবী পার্থ শ্রী সিমেন্টের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে বেশ কয়েকটি সংশোধনী এনেছিলেন যা ক্লাব মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু শ্রী সিমেন্টের পক্ষ থেকে সেই সংশোধনীগুলো যে তারা মেনে নিচ্ছে তা নিয়ে ক্লাবের কাছে কোনও বার্তা পৌছয়নি। তাই ক্লাবও মনে করছে সমস্যা যেখানে ছিল সেখানেই আছে। সে জন্য আবার প্রাক্তনদের মাঠে নামানো হল। এখন এক দিকে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আরেক দিকে প্রাক্তনদের প্রচেষ্টা দুটো পথই খোলা রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু চুক্তি তো ক্লাবের সঙ্গে হয়েছে শ্রী সিমেন্টের। তারা যে প্রাক্তনদের সঙ্গে আলোচনার টেবলে বসবেন তার গ্যারান্টি কে দেবে? মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে তারা সাড়া দিতেই পারে। দেবেও হয়তো। ইতিমধ্যে কলকাতা লিগের ক্রীড়াসূচি ঘোষিত। ইস্ট বেঙ্গলের খেলা দেওয়া হয়েছে ২৪ আগস্ট। এখনও টিম গড়ার কাজ শুরু হয়নি। নিয়োগ করা হয়নি কোচও। কবে সে সব হবে কেউ জানে না।
সব মিলিয়ে ১০২ বছর অতিক্রান্ত ইস্ট বেঙ্গলে এখন শুধুই অন্ধকার।