কলকাতা: দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে এজলাসে বসে জানিয়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর ঘোষণা, দুর্নীতি দেখলে আমি রুখে দাঁড়াবই। মাথায় বন্দুক ঠেকালেও আমি থামব না। তিনি বলেন, সব আমলেই দুর্নীতি হয়। আমি কোনও রাজনীতি করছি না। আইনজীবীরা রাজনীতি করতে পারেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালত বিচার করছে। তাতে সমস্যা কোথায়? এই দুর্নীতি বন্ধ করতে তিনি প্রবীণ আইনজীবীদেরও সাহায্য চান।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এজলাস বয়কট নিয়ে বুধবার সকাল থেকেই হাইকোর্টে ঘটনার ঘনঘটা। তাঁর এজলাসে বাইরে ও ভিতরে বয়কটপন্থী এবং বয়কটবিরোধী আইনজীবীদের মধ্যে চলে বচসা, মারামারি। তাতে কয়েকজন আইনজীবী জখমও হন বলে অভিযোগ। তুমুল উত্তেজক পরিস্থিতির মধ্যে তিনি বলেন, যাঁরা মামলা শুনতে ইচ্ছুক নন, তাঁরা আদালত ছেড়ে দিন। আমি ইচ্ছুক আইনজীবীদের নিয়ে অন্য মামলা শুনব। যদি আমার নির্দেশ পছন্দ না হয়, তাহলে উচ্চতর বেঞ্চে যান। কিন্তু বেঞ্চ বদল না হলে কোর্ট বয়কট, এটা কী?
আরও পড়ুন: Behala TMC Clash: রাতে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ বেহালার চড়কতলায়, আতঙ্কিত এলাকাবাসী
পরে এজলাসে বসেই প্রবীণ আইনজীবী চণ্ডীচরণ দে-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, বার অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে গতকাল আমার বিরুদ্ধে আপনার সই দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে। জবাবে চণ্ডীচরণ বলেন, আপনার বিচার প্রক্রিয়ায় আমি ক্ষুব্ধ নই। আমার আপত্তি সিবিআই তদন্ত নিয়ে। বিচারপতি বলেন, কেন সিবিআই তদন্ত, তার বিস্তারিত বিবরণ তো আমি নির্দেশিকাতেই দিয়েছি। আপনারা রাজনীতি করছেন করুন। আমি কিন্তু রাজনীতি করছি না। আদালতে বসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিচার করছি।
একইভাবে অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে অশোক দেবের সই দেখেও তিনি দুঃখিত বলে জানান বিচারপতি। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে অশোক দেবের সঙ্গেও আমার দেখা হয়েছিল। চা খেতে খেতে অনেক কথা হয়। আমি তাঁকে বলি, আপনি আমার বিরুদ্ধে যা বলছেন, তা কি মন থেকে মেনে নিতে পারছেন? অশোক দা আমাকে অনেক কথা বললেন। জানি না, আজ নবান্নে গিয়ে তিনি কী বলবেন। বিচারপতির আরও মন্তব্য, কিছুদিন আগে প্রধান বিচারপতিকে অশোক দেব যে চিঠি দিয়েছেন, সেই চিঠি কে লিখেছেন আমি জানি। তিনি আমার কাছে নমস্য। তিনি হাইকোর্টের কাছেও নমস্য।
আরও পড়ুন: Jhalda Murder CBI: ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন খুনে গ্রেফতার হোটেল মালিক সত্যবান
এর আগে তাঁর এজলাসের ভিতরেই তৃণমূলপন্থী এবং বিজেপি ও কংগ্রেসপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে রীতিমতো হাতাহাতি হয়। ওই পরিস্থিতিতেও তিনি বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যান। তবে বিচারপতি জানিয়ে দেন, দুই পক্ষ উপস্থিত না থাকলে কোনও নির্দেশ জারি করা হবে না।এজলাসে বসেই তিনি ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীকে ডেকে নির্দেশ দেন, বাইরে কোনও আইনজীবীকে হেনস্তা করা হচ্ছে কি না, তা দেখুন। তাঁকে জানানো হয়, বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতিকে হেনস্তাও করা হয়েছে। বিচারপতি তাঁকেও এজলাসে ডেকে পাছিয়ে বিস্তারিত জানেন।