জয়জ্যোতি ঘোষ, বেঙ্গালুরু: দৃশ্য-১, মধ্যাহ্ন বিরতি চলছে। ভারতের স্কোর ৩৪/৬। প্রেসবক্স জুড়ে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা! প্রেসবক্সের ঠিক উপরে কমেন্ট্রি বক্স থেকে নেমে আসছেন সুনীল গাভাসকর। লাঞ্চ ডিশ হাতে জনা কয়েক ক্রিকেট করেসপনডেন্টের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। মুড হয়ত একটু হাল্কা করার চেষ্টা করলেন। পশ্চিম ভারতের এক প্রবীণ সাংবাদিক বললেন, ‘আপনার এখনও হাসি পাচ্ছে সানি ভাই? টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়াটাই কি বড় ফ্যাক্টর হয়ে গেল না?’ আবারও হাসলেন লিটল মাস্টার। বললেন, ‘’উইকেট যতই আপনাকে সমস্যায় ফেলুক, শট- সিলেকশন সঠিক হওয়া প্রয়োজন।” কারও নাম না করে বললেন, “ব্যাটারদের ফ্রন্টফুটে খেলার প্রবণতা বেশি। ব্যাকফুটে কম। নাহলে হয়ত কয়েকটা উইকেট কম পড়ত।” প্রথম সেশনেই তো ম্যাচ নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। এখান থেকে কি কামব্যাক সম্ভব কিনা জানতে চাইলে বললেন, “এটা ক্রিকেট, কখন কী হয় বলা মুশকিল। ১৯৯৯ এর মোহালি মনে করে দেখুন। ডিওন ন্যাশের নিউজিল্যান্ডের সামনে ৮৩-তে শেষ ভারত। এরপরও কিন্তু কামব্যাক করেছিল টিম ইন্ডিয়া!”
দৃশ্য-২, ভারতের ইনিংস ৪৬-এ শেষ তখন। স্টেডিয়ামের থার্ড ফ্লোরে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার সাবা করিমের সঙ্গে গল্প করছি। হঠাৎ পিছনে ফিরে দেখি প্রাক্তন কিউয়ি ফাস্ট বোলার সাইমন ডুল। কিছুটা খোঁচা দিয়ে বললেন, “যাই বলুন, ভারতীয় তারকা ব্যাটারদের কিন্তু লম্বা কিউয়ি বোলারদের বিরুদ্ধে খেলতে যথেষ্ট অসুবিধা হয়। এর আগে কাইল জেমিসনের বিরুদ্ধেও দেখেছি। এবার এখানেও এই তরুণ উইলিয়ামের বিরুদ্ধে দেখলাম। আরও দু’জন তরুণ বোলার তৈরি হচ্ছে নিউজিল্যান্ডে। এবার বোধহয় আরও বেশি করে ভারতীয় তারকা ব্যাটারদের অনুশীলন প্রয়োজন লম্বা বোলারদের বিরুদ্ধে।”(মুখে হাসি) ডুল চলে যেতে সাবা বললেন, “কে বলল মাইন্ডগেম বা স্লেজিং শুধু মাঠে হয়?”
দৃশ্য-৩, দিনের খেলা শেষ হতে আর আধ ঘন্টা বাকি। ডিশে সামোসা আর চাটনি হাতে PP (পার্থিব প্যাটেল)। ভারতের ৪৬-এ অল আউট হওয়ার থেকে বেশি চিন্তায় ঋষভ পন্থকে নিয়ে। বললেন, “দেখুন অ্যাডিলেডে ৩৬ অল আউটের পরও ভারত সিরিজ জিতেছে। তাই কামব্যাক করবে আশা করাই যায়। চিন্তার বিষয় ঋষভ পন্থকে নিয়ে। যে হাঁটুতে সার্জারি হয়েছে, সেই হাঁটুতেই চোট পেয়েছেন। সামনে বর্ডার-গাভাসকর সিরিজ। পন্থের ফিট থাকাটা ভীষণ প্রয়োজন।”
দৃশ্য-৪, দিনের খেলা শেষ। KSCA-এর মিডিয়া ম্যানেজার হন্ত দন্ত হয়ে এসে বললেন, “তাড়াতাড়ি আসুন, ক্যাপ্টেন আসছেন প্রেস কনফারেন্স করতে।” এমন দিনে রোহিত শর্মা প্রেস কনফারেন্স করবেন ভাবেননি অনেকেই। তবে হিটম্যানের এই সাহসের জন্য কুর্নিশ দিতেই হবে। প্রেস কনফারেন্স রুম জুড়ে প্রায় পিনড্রপ সাইলেন্স। স্মাইলিং ফেসে প্রবেশ করলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এসেই সরল স্বীকারোক্তি “টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়াটা আমার সিদ্ধান্ত। পিচ রিড করতে ভুল হয়েছে। উইকেটে ঘাস ছিল না। কিছু জায়গায় ক্র্যাকস। তাই তিন পেসারের জায়গায় তিন স্পিনার খেলাই। তবে একটা দিনের খেলা দেখে সার্বিক মূল্যায়নে না আসাই ভালো। অফিসে একটা দিন খারাপ যেতেই পারে।” একইসঙ্গে ব্যাট ধরলেন বিরাটের হয়েও। বললেন, “বিরাটকে তিন নম্বরে ব্যাট করার প্রস্তাব টিম ম্যানেজমেন্ট দেয়। আর তাতে বিরাট একবারেই রাজি হয়ে যায়। এটা অবশ্যই আমি ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখছি”।
দৃশ্য-৫, ঘড়ির কাটা বিকেল ৫টা ৪০ ছাড়িয়েছে। এক এক করে টিমবাসে উঠছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। কুলদীপ যাদবের পিঠে হাত দিয়ে খুড়িয়ে হাটছেন ঋষভ পন্থ। এমন অবস্থায় পরের দিন মাঠে নামবেন কী করে? অন্যদিকে গম্ভীর এদিন সত্যিই গম্ভীর! দু’দিন আগেই বলেছিলেন, ‘’আমাদের দলে সবধরনের ক্রিকেটার রয়েছে। যারা ঝোড়ো ব্যাটিং করতে পারে, আবার প্রয়োজন পড়লে দু’দিন উইকেট আঁকড়ে পড়েও থাকতে পারে।”
স্টেডিয়াম থেকে হোটেলে ফেরার পথে সেটাই ভাবছিলাম তাঁরা কারা যাঁরা উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারেন? ম্যাচ বাঁচাতে হলে কাউকে না কাউকে তো ২০০১ -এর ‘’লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়” হতেই হবে!
৭০ দশকের ভিলেন অজিতকে মনে আছে? তাঁকে অনুকরণ করে বেঙ্গালুরুর উপরপেট পুলিশ স্টেশনের সংলগ্ন ন্যাশনাল মার্কেট অঞ্চলে একটা সংলাপ চলছে রাতের দিকে – ‘’মো-না ডা-র্লিং! ম্যাচ কিতনে বাজে খতম হোগা? বারিশ আনে সে পেহলে ইয়া বারিশ আনে কে বাদ…….”