১৫ জানুয়ারীতে বিরাট কোহলি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি আর টেস্ট দলের অধিনায়ক থাকতে চান না। তার আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ভারতীয় দল ১-২ ম্যাচে টেস্ট সিরিজ হেরে গিয়েছিল। অভিজ্ঞ ক্রিকেট মহল আঁচ করছে বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আর দেশের অন্যতম তারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলির মধ্যে কোনো ইগোর লড়াই চলছে। তাতে দেশের দলটির ক্ষতি – এটা দুজনে যত তাড়াতাড়ি অনুভব করেন, ততোই ভালো।
দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে প্রেস কনফারেন্স করে অনেক কথা বলেছিলেন বিরাট। কিন্তু তাতে বেশি করা চর্চা হয়, বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবিতে সায় দেন নি কোহলি। উল্টে, অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দেন। তারপর বোর্ডের সভাপতি সৌরভ নাকি চেয়েছিলেন, বিরাট কেন এমন সব কথা বলেছেন – তারজন্য জবাবদিহি চাওয়া হোক। সৌরভের দাবি এমন খবর অসত্য। মিথ্যে।
কিন্তু তাতে এই বিতর্কের যবনিকা পাত হচ্ছে না। বরঞ্চ, কোহলি ইস্যুতে বোর্ডের অভ্যন্তরে বিস্তর জলঘোলা শুরু হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সেই এককথা – কে ঠিক আর কে বেঠিক। সাদা কে সাদা, আর কালো কে কালো বলছেন না কে? সৌরভ? নাকি কোহলি?
ঘটনার দিকে তাকালে বোঝাই যাচ্ছে, বিরাট কোহলি মনে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছেন। প্রেস কনফারেন্স বোর্ড সভাপতির মন্তব্যের পক্ষে বলেননি। সৌরভ বলেছিলেন, টি টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন্সি না ছাড়তে অনুরোধ করেছিল বোর্ড ( সৌরভ ভাল করতেন , আরও খোলাখুলি ভাবে যদি জানাতেন – বোর্ডের কে বা কারা এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন)। কোহলি বলেছেন, এমন কিছুই ঘটেনি। কে সত্যি?
উত্তর খোঁজা চলছিল প্রচার মাধ্যমে। তারই মাঝে দক্ষিণ আফ্রিকায় একদিনের সিরিজের জন্য দল ঘোষণায় বসে নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান চেতন শর্মা বোর্ড সভাপতির বক্তব্যকে সমর্থন করেন। বিরাট এর পাল্টা যাতে না দিতে পারেন, তাই কি আর তাঁকে প্রেস কনফারেন্স করতে দেওয়া হয়নি? কোচ রাহুল এসেছিলেন!
কিন্তু অস্বস্তি যে বেড়ে গেছে এটা টের পাওয়া গেছে। যাচ্ছেও। বোর্ড সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, কোহলির এই ‘দাদাগিরি’ , ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দাদা’ মেনে নিতে পারছেন না। আর ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়া এক বিশাল সম্মানের। ক্ষমতার জায়গাও বটে। দুটি ক্ষেত্রে তা হেলায় ছেড়ে দিয়েছেন কোহলি। টি টোয়েন্টি আর টেস্টে। আর একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব বোর্ড কেড়ে নিয়েছে। বোর্ডের এক অংশ বলছে, এই রদবদলে সৌরভের সঙ্গে ছিলেন সামিল ছিল চেতন। দিল্লির এই প্রাক্তন পেসারের চেয়ারম্যান হওয়ার পিছনে বোর্ড সভাপতির বড় ভূমিকা ছিল। এটা সকলের জানা।
কোহলি টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেবেন এটা দক্ষিণ আফ্রিকায় তৃতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনে ম্যাচের শেষে ভারতীয় ড্রেসিং রুমে বলেন। সকলে হতবাক হয়ে যায়। শুধু একটা অনুরোধ বিরাট করেছিলেন, টেস্টের পর তিনি সরকারী ঘোষণা করে দেবেন – তার আগে কেউ যেন এই কথা কাউকে না জানায়। দলের সকলে কথা রাখেননি। সানি গাভাস্কার তাই বলেছিলেন, ম্যাচে শেষেই কোহলি এই ঘোষণা করে দিতে পারে, আঁচ করেছিলেন। কিন্তু করেন পরেরদিন। ব্যবহার করেন টুইটার।
সেই নেতৃত্ব ছাড়ার লেখাটা পড়লেই বোঝা যায় বোর্ড সচিব জয় শাহকে ধন্যবাদ জানালেও, একবারও বোর্ড সভাপতির কথা লেখেননি। আর বোর্ড সভাপতি? ২৪ ঘণ্টা পরে শনিবার গভীর রাতে ( ০০.৪৭ মিনিটে, মধ্যরাত) টুইটারে প্রতিক্রিয়া জানান। কি কি লিখলেন? বোর্ড সভাপতি লিখেছেন, এটা বিরাটের ব্যক্তিগত সিধ্যান্ত। বোর্ড নাকি সম্মান জানায়। পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে, কাপ্তান কোহলি দলকে নিয়ে কি কি করেছে। আর কি কি পারেননি। কোহলি যেমন, আইসিসি ট্রফি জেতেন নি, নেতা সৌরভও তো তা পারেননি। বোর্ড সভাপতি লিখেছিলেন, দলের একজন হয়ে – দলকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাবেন কোহলি।
What exactly "brutal" is said? BCCI, led by Jay Shah and his doll Saurav Ganguly has ruined not just Virat's career but Indian cricket. Don't be surprised if we play like Pakistan for the next few years until we get rid of these guys and a new Dhoni and Kohli arrives.#factos
— Soumya Sarkar (@soumya_sarkar17) January 22, 2022
সৌরভ – গ্রেগ লড়াইয়ে রাহুল দ্রাবিড় জড়িয়ে ছিলেন ( দলের অধিনায়ক হয়ে) । এবারও কোহলি – সৌরভ লড়াইয়ে আবার রাহুল দ্রাবিড়ের উপস্থিতি। এবার তিনি কোচ। কঠিন চ্যালেঞ্জের কাজ হয়ে উঠেছে, রাহুলের। দলের মনটাই কি ভেঙে পড়ছে?
সৌরভ আর রাহুল – দুজনেই জাতীয় দলের নেতার আসনে বসেছিলেন। কোহলির মত সাফল্য পাননি। আর কোহলির দলের এখন এমন মানসিক অবস্থা কি ওরা টের পাচ্ছেন ?
আরও প্রশ্ন এখন বাইরে আসছে। যেমন শোনা যাচ্ছে, ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া সফরে চোট আঘাতে জর্জরিত দলে পরিবর্ত ক্রিকেটার চাওয়া হয়েছিল। বোর্ড সাড়া দেয় নি ( পড়ুন বোর্ড সভাপতি আর সচিব)।
বোর্ডের একাংশ মনে করছে, করোনা কালে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বায়ো বাবলে থেকে সারাক্ষণ সেরা খেলাটা খেলে যাওয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। সৌরভ – রাহুলরা এসবের মধ্যে পড়েননি। তাই দেশের স্টার ক্রিকেটারদের বাড়তি সহনাভূতি দিয়ে সামাল দেওয়া উচিত ছিল। সেটাতে সৌরভ – জয় জুটি ব্যর্থ।
কোচ রবি শাস্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া। বা পুরো সাপোর্ট স্টাফদের বদলে দিয়ে বোর্ড ক্যাপ্টেন কোহলিকে আরও চাপের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। আর পরিস্থিতি এতটাই অস্থির যে, কোহলির স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাটিং করাটাই জটিল হয়ে উঠেছে।
সৌরভ আর কোহলি কি দলের কথা ভাবেন না! নিজেদের ইগোতে আটকে আছেন। যে কোনও বিবাদ মিটতে পারে নিজেদের মধ্যে কথা বললে। তা কেন হচ্ছে না! নানান কথা / গুজব রটছে। কারা রটাচ্ছে! কেন?
— Gaurav (@Melbourne__82) January 21, 2022
ভুলে গেলে চলবে না, বিরাট কোহলি এখন বিশ্বের ক্রীড়া দুনিয়ায় অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। দেশে – বিদেশে একাধিক, কর্পোরেট বিরাটের ভালো মন্দের সঙ্গে জড়িয়ে। নেতা কোহলির ‘দ্য এন্ড’ অনেকে মেনে নিতেই পারছেনা। তাই নাকি নখ দাঁত বেড়িয়ে আসছে।
সৌরভ – কোহলি ইস্যু একটা কথা প্রমাণ করে দিচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান আর বোর্ডের প্রধানের মধ্যে খুব বেশি কথাবার্তা হত না ( হতে পারে তার কারণ কোনও তৃতীয় ব্যক্তি)। আর কোহলির যা ইমেজ তাতে এসব ঘটনার প্রভাব , তাঁর পারফরমেন্সে পড়া উচিত নয়। কিন্তু কোহলি নিজের ছন্দে নিজে ফিরতেই পারছেন না। একবার তাঁর ব্যাট কথা বলা শুরু করলে, কোহলিও আর অন্য দিকে সময়ই দেবেন না।
ছবি: সৌ টুইটার।