কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: রাজ্য বিজেপিতে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই সরতে হল ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে। বিজেপির অন্দরের খবর, বিপ্লবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। দু’দিন ধরে তিনি দিল্লিতেই ছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে দেখাও করেন তিনি। তাঁকে দ্রুত ইস্তফা দিতে বলা হয়। সেইমতোই বিপ্লব আগরতলায় ফিরে শনিবার রাজ্যপালের হাতে ইস্তফা পত্র তুলে দেন।
বিজেপি সূত্রের খবর, ত্রিপুরায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজেই অনেকটা দায়ী বলে দিল্লির নেতারা মনে করেন। তাঁদের মতে, বিপ্লব দেবের একরোখা মনোভাবের জন্যই সুদীপ রায় বর্মন এবং আশিস সাহার মতো দুই পোড় খাওয়া বিধায়ক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তাঁরা শুধু বিধায়ক পদই ছাড়েননি, দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। গত এক বছর ধরেই সুদীপ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর কাছে বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন। এমনকি প্রকাশ্যেও সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্মের সমালোচনা করেছেন।
এত সবের পরও বিপ্লবকে সময় দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু তারপরও ত্রিপুরা বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমার বদলে আরও বেড়ে গিয়েছে। আরও অনেক বিধায়ক তলে তলে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলেও দিল্লির নেতাদের কাছে ফিডব্যাক গিয়েছে। তার থেকেও বড় কথা, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। গত এক বছর ধরে তৃণমূল, কংগ্রেস এবং সিপিএমের মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা শাসকদলের হামলার শিকার হয়েছেন। এরকম কিছু কিছু ঘটনা দিল্লির বিজেপি নেতারা ভালো চোখে দেখেননি। মুখ্যমন্ত্রী ওইসব ঘটনার সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আরও পড়ুন: Tripura CPM: ব্যর্থতার কারণেই মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, এটা প্রমাণিত হল, ত্রিপুরা সিপিএম
আগামী বছরই ত্রিপুরায় বিধানসভার ভোট। দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জন্য সরকারি কাজকর্মেরও ক্ষতি হচ্ছে বলে দিল্লি মনে করছে। এই অবস্থায় বিপ্লবকে মুখ্যমন্ত্রী রেখে বিধানসভার ভোটে গেলে ভরাডুবি ঘটতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা অমিত শাহ-নাড্ডাদের। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট নিয়ে শাহ-নাড্ডারা খুব বেশি চিন্তিত নন। কারণ, ত্রিপুরার লোকসভার আসন মাত্র দু’টি। কিন্তু তার আগে ২০২৩-এর বিধানসভা ভোটে যদি ক্ষমতা হারাতে হয়, তার ফল হবে সুদূরপ্রসারী। দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক পর কমিউনিস্টদের হাত থেকে ত্রিপুরা দখলকে বিজেপি বড় সাফল্য হিসেবেই দেখছে। এখন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে যদি ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যায়, সেই আশঙ্কা থেকেই তড়িঘড়ি বিপ্লবকে সরানোর সিদ্ধান্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।
একই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা দল শাসিত আরও অনেক রাজ্যের উপর চালিয়েছেন। উত্তরাখণ্ডে পাঁচ বছরে তিনবার মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে বিজেপি। অসমে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরও সর্বানন্দ সোনওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি। ওই পদে বসানো হয়েছে হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে। শনিবারের মধ্যেই ত্রিপুরায় পরিষদীয় দলের বৈঠকে নতুন নেতা নির্বাচিত হয়ে যেতে পারে। কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী ভুপেন্দ্র যাদব এবং দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিনোদ তাওড়েকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক করে আগরতলায় পাঠানো হয়েছে।