নয়াদিল্লি: প্রায় সাতশো কৃষকের প্রাণের বিনিময়ে বড় জয় পেল কৃষক আন্দোলন। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে ৫৬ ইঞ্চি ছাতির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করলেন, বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিল করা হচ্ছে। তিনি ভারতবাসীর কাছে এর জন্য ক্ষমাও চাইলেন। মোদি বললেন, আমরা কৃষকদের ঠিকমতো বোঝাতে পারিনি এই আইনের উদ্দেশ্য। তার দায় আমাদের। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধীদের কোনও আলোচনার সুযোগ না দিয়ে আইন প্রত্যাহারের বিল পাশ করিয়ে নেওয়া হল।
ঠিক এই ভাবেই বিরোধীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই সংসদে কৃষি বিল পাশ করিয়েছিল এই সরকার। প্রতিবাদে একেবারে প্রথম থেকে উত্তাল হয়েছিল সংসদের দুই কক্ষ। প্রতিবাদের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছিল সংসদের বাইরেও, প্রায় গোটা দেশে। দেড় বছর ধরে সংযুক্ত কিসান মোর্চা দিল্লির সীমানায় শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়েছে। আন্দোলনরত কৃষকদের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নেমে এসেছে, তাঁদের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের খলিস্তানি, দেশদ্রোহী বলেও দাগানো হয়েছে। তবু চিড় ধরেনি আন্দোলনে। চাপের মুখে কেন্দ্র পিছু হটেছে। তবু মোর্চা হাল ছাড়েনি। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করা, আন্দোলনকারীদের উপর থেকে মামলা তুলে নেওয়া, মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে তারা অনড়। ১৫ জানুয়ারি ফের বৈঠকে বসছে মোর্চা পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করতে। স্বাধীনতার পর এরকম কৃষক আন্দোলন আর দেখা যায়নি বলে দাবি মোর্চার। তারা দেখিয়ে দিল, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের শক্তি কতটা।
তিন কৃষি আইন কী কী? এক, ‘অত্যাবশ্যক পণ্য (সংশোধনী) আইন’ বা ‘দ্য এসেনশিয়াল কমোডিটিজ (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট’। দুই, ‘কৃষি পণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন আইন’ বা ‘ফারমার্স প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রমোশন অ্যান্ড ফ্যাসিলিয়েশন) অ্যাক্ট’। এবং তৃতীয়টি ‘কৃষক সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন (মূল্য এবং কৃষি পরিষেবাসংক্রান্ত) আইন’ বা ‘ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রোটেকশন) অ্যাগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস অ্যাক্ট’।
এই আইন তৈরির পরপরই প্রতিবাদে দেশজুড়ে আন্দোলন সংগঠিত করে কৃষকরা৷ আন্দোলন প্রতিরোধে হাড় কাপানো ঠান্ডায় জল কামান, লাঠির আঘাত সরকারের৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলের গাড়ি নীচে চাপা পড়ে মৃত্যু প্রতিবাদী কৃষকদের৷ তারপরও পিছু হটেনি প্রতিবাদীরা। বরং, দাবি আদায়ে অনড় থাকেন। ২০২২ সালে দেশের একাধিক রাজ্যে নির্বাচনের আগে কৃষকদের জেদের কাছে হার মানে কেন্দ্র। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আইন প্রত্যাহার করে কেন্দ্র। এবারও আলোচনা ছাড়াই এক তরফা সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের।
কেন কৃষকরা আইনের বিরোধিতা করে? কৃষকদের অভিযোগ, এই আইন সরকারি সহায়ক মূল্য তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা। উৎপাদিত কৃষিপণ্য কেনার দায় সরকার নিজেদের ঘাড় রাখতে চাই না। ফলে, বর্তমানে কৃষকরা যে পরিমাণ সহায়ক মূল্য পান, তা বেসরকারি সংস্থা বা কোনও ব্যবসায়ী দেবেন না। সরকার চাল, ডাল, গম, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য মজুতের ঊর্ধ্বসীমার নিয়ন্ত্রণ থাকবে না৷ ঘুরপথে বড় ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো করে মূল্য নির্ধারণ করবে। তাই বিরোধিতা।