নিঃশব্দ ঘাতকেরা বুঝি এমনই হয়! অতর্কিতে হানা দেয়। সব লন্ডভন্ড, তছনছ করে, যখন ফিরে যায়, আক্ষেপ, হতাশা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। কোভিড-১৯ এ ভাবেই চুপিসারে হানা দিয়েছিল। গুপ্ত-ঘাতকের শক্তি তখন কেউ বোঝেনি। বহিরাঙ্গে সাধারণ ফ্লু। ভিতরে যে অযুত মারণশক্তি কে জানত!
অবহেলার মাশুল দিতে হয়েছে। বরিস জনসন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। এখন-তখন অবস্থা হয়েছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর। ডোনাল্ড ট্রাম্প মাস্ক না-পরে বাহাদুরি দেখাতে গিয়েছিলেন। তিনিও নিস্তার পাননি।
একটা ঢেউয়ের মতো প্রথম শক্তির বিচ্ছুরণ যখন ঘটেছিল, গোটা বিশ্বে হইহই। দুনিয়া দেখল অগুনতি মানুষের মৃত্যু-মিছিল। বিজ্ঞানীরা বুঁদ হলেন গবেষণাগারে। বিশ্ব নেতারা পারস্পরিক দোষারোপে। অতিমারি এমন ভয়াল রূপে আগে কখনও এসেছিল কি না, তারও কাটাছেঁড়া হল। ভ্যাকসিনও চলে এল। পিছু-পিছু আরও কয়েক’টা ভ্যাকসিন। বাজার দখলের লড়াইয়ের মধ্যেও আশান্বিত হল বিশ্ব। যাক বাবা, শ্বাসকষ্টে ছটফট করে আর অন্তত কাউকে মরতে হবে না।
কিন্তু কোথায় কী! একটা ভ্যাকসিনে কাজ হল না, দ্বিতীয় ভ্যাকসিন। দ্বিতীয় ভ্যাকসিনেও প্রতিহত করা গেল না। এ বার বুস্টার ডোজ। তার পর, হয়তো আরও একটা বুস্টার ডোজ…! ঢেউয়ের পিছে ঢেউ এসেছে। প্রথম ঢেউ… সামাল দিতে না দিতেই দ্বিতীয় ঢেউ! করোনাভাইরাস নিজেকে দ্রুত বদলেছে। এত দ্রুত ভোলবদল জীবাণু-বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করেছে। একের পর এক ভ্যারিয়েন্ট। শক্তিক্ষয় দূর অস্ত, ভাইরাস আরও শক্তি বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: Year Ender 2021: পেগাসাসের টিকটিকি, নিশানায় কেন্দ্র
বিদায়ী বছর লোকে মনে রাখবে ডেল্টা, ডেল্টা প্লাসের তাণ্ডবে। চোখের সামনে কত পরিবার ভেঙেছে, কত শিশু অনাথ হয়েছে, স্বজনসঙ্গ-হারা কত মানুষ, সে হিসেবে নেই। হিসেব রাখার কেউ নেই। হিসেব অবশ্য একটা আছে। কোভিডের দিনলিপি। যেন খেরোর খাতা! সংক্রমণ-মৃত্যুর সংখ্যার ভারে ক্রমশ ভারী হচ্ছে। কিন্তু সেই হিসেব শেষ কথা নয়। তার বাইরেও আরও কত যে মৃত্যু হয়েছে, হিসেব নেই! পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরতে গিয়ে মরেছেন। লাগাতার লকডাউনে কাজ হারিয়ে সপরিবার মরেছেন। কেউ তা নিয়ে মাথাও ঘামায়নি।
জন্ম থাকলে, মৃত্যু হবে। কিন্তু, অতিমারির মৃত্যু শ্রেণিবিভাজনের ভেদাভেদ রাখেনি। বেওয়ারিশ লাশের মতো পুড়ছে অগুনতি মৃতদেহ। নদীতে ভেসেছে অজ্ঞাত, পরিচয়হীন হয়ে…। করোনার দলিলপঞ্জিতে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হয়, আমেরিকা-ব্রিটেনের মতো শক্তিধর দেশগুলোর যাবতীয় অহং চূর্ণ হয়েছে কোভিড-১৯ নামে এক ভাইরাসের কাছে।
বাইশের মাঝামাঝি এসে তেজ হারিয়েছিল কোভিড। দু-বছরের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে চেনা ছন্দে ফিরছিল বিশ্ব। ভাঙছিল বিধিনিষেধের গণ্ডি। কিন্তু বছর শেষের আগেই আর এক হোঁচট। ওমিক্রন। আপাত নির্বিষ। কিন্তু ডেল্টার থেকে তিন গুণ বেশি সংক্রামক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তৃতীয় ঢেউ আনবে ওমিক্রন। ফলে, বর্ষবরণের উদযাপনেও থাকবে উদ্বেগ। লকডাউনের উৎকণ্ঠা। অতিমারির এই ওলোটপালোট জীবনের শেষ কোথায়!
আরও পড়ুন: Year Ender 2021: একই বছরে জয় এবং পরাজয়ে রেকর্ড মমতার