কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক : কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের ভোটে ৪০ শতাংশ আসনে মহিলা প্রার্থী দেবে। মঙ্গলবার লখনউতে এই ঘোষণা করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এই সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক ও এক নতুন অধ্যায় বলে ব্যাখ্যা করেছে কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশের মতো জাতপাতভিত্তিক রাজনীতির আঙিনায় এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী বলে দাবি কংগ্রেস নেতাদের। এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে, সেটা দেখার জন্য আমাদের আগামী বছরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিপর্যয়ের পর বিজেপির পাখির চোখ এখন উত্তরপ্রদেশ। মোদি-শাহ জুটি অনেক আগে থেকেই উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রস্তুতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। করোনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। বিজেপির অন্দরেও যোগীর বিরুদ্ধে চোরা স্রোত আছে। তবু নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ যোগীর উপরেই ভরসা করেন। আগামী ভোটেও যোগী আদিত্যনাথই সম্ভবত বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী-মুখ থাকবেন।
দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো উত্তরপ্রদেশেও বিজেপি মহিলা ভোট ব্যাঙ্কের উপর আস্থা রাখছে। মহিলাদের জন্য একাধিক সরকারি প্রকল্পের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক গুচ্ছ প্রকল্প চালু করবেন উত্তরপ্রদেশে। তার ২৪ ঘণ্টা আগে প্রিয়াঙ্কা মহিলা তাস বার করে বুঝিয়ে দিলেন, কংগ্রেস মহিলাদের বিশেষ গুরুত্ব দেবে আগামী বিধানসভা ভোটে। কংগ্রেস নেত্রীর অভিযোগ, এই রাজ্যে মহিলাদের জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন – উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে ৪০ শতাংশ আসনে মহিলা প্রার্থী দেবে কংগ্রেস: প্রিয়ঙ্কা
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই মহিলাদের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস ৪১ শতাংশ আসনে মহিলা প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল। জয়ী প্রার্থীদের মধ্যেও ৪১ শতাংশ মহিলা। মমতা পুরসভা, পঞ্চায়েত ভোটেও মহিলাদের প্রার্থী করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। সামনেই বিভিন্ন পুরসভার ভোট। সেখানেও যে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মহিলাদের অগ্রাধিকার দেবেন তৃনমূল নেত্রী, এটা বলাই বাহুল্য। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলের ২৯১জনের মধ্যে ৫০ জন ছিলেন মহিলা প্রার্থী। ওড়িশায় বিজু জনতা দলও ২১ টি লোকসভা আসনের মধ্যে সাতটিতে মহিলা প্রার্থী দিয়েছিল।
এবার দেখা যাক, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের হাল কেমন। পাঁচ বছর আগে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে ৪০৩ টির মধ্যে কংগ্রেস জিতেছিল মাত্র সাতটি আসনে। লোকসভা ভোটেও ২০১৯ সালে চরম বিপর্যয় হয় কংগ্রেসের। এককালে এই উত্তরপ্রদেশ ছিল কংগ্রেসের বড় ভোট ব্যাঙ্ক। অনেক কসরত, অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবারের ভোটে মহিলা তাসকে বাজি ধরেছেন। তার ফসল কতটা কংগ্রেসের ঘরে উঠবে, তা ভবিষ্যৎ বলবে।
আরও পড়ুন – আপাতত আস্থা সনিয়াতেই, ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে নতুন সভাপতি বাছতে পারে কংগ্রেস
মঙ্গলবার যখন লখনউতে বসে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ৪০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করছেন, তখনই আবার দল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের সহ সভাপতি পঙ্কজ মালিক। দল ছেড়েছেন পঙ্কজের বাবা হরেন্দ্র মালিকও। কংগ্রেসের অবস্থা খারাপ পঞ্জাবেও। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত পঞ্জাব কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা এবং পদচ্যুত মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিং মঙ্গলবারই ঘোষণা করলেন, তিনি নতুন দল তৈরি করে ২০২২ সালের ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধবেন। অন্যান্য রাজ্যেও কংগ্রেসের হাল খুব খারাপ। পশ্চিমবঙ্গেও একেবারে মুমূর্ষু রোগীর মতো ধুঁকছে কংগ্রেস। এই অবস্থায় উত্তরপ্রদেশে ৪০ শতাংশ মহিলা প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণায় কাজের কাজ কতটা হবে, তা সময় বলবে।