নয়াদিল্লি: ফের খবরের শিরোনামে পেগাসাস৷ ভারতের বহু মন্ত্রী, বিরোধী নেতা, সাংবাদিকের ফোন হ্যাক করেছে ইজরায়েলি সংস্থার স্পাইওয়্যার পেগাসাস৷ ফোন হ্যাকিংয়ের তালিকায় রয়েছেন বহু ব্যবসায়ী, সরকারি আধিকারিক, বিজ্ঞানী এবং সমাজকর্মী। বেশির ভাগ হ্যাক করা হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে৷ রবিবার এই বোমা ফাটায় দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য ওয়্যারের মতো দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম৷ এই খবর সামনে এল এমন দিনে, ঠিক যার পরের দিন সংসদে বাদল অধিবেশন শুরু হতে চলেছে৷ যদিও নরেন্দ্র মোদি সরকার হ্যাকিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ জানিয়েছে, অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই৷
আরও পড়ুন: পেগাসাস কেলেঙ্কারি: সাংবাদিক, মন্ত্রীদের ফোন ট্যাপিংয়ের অভিযোগ খারিজ করল মোদি সরকার
দু’বছর আগেও স্পাইওয়্যার দিয়ে তথ্য হাতানোর অভিযোগ উঠে ছিল৷ প্রশ্ন হল, পেগাসাস কী? কী ভাবে এর মাধ্যমে ফোনে হ্যাকিং হয়? কেনই বা পেগাসাসকে ‘সবচেয়ে আধুনিক’ হ্যাকিং টুল বলা হয়? তাহলে কি সাধারন মানুষের গোপনীয়তা সুরক্ষিত নয়?
পেগাসাস স্পাইওয়্যার কী?
একটি হ্যাকিং সফটওয়্যার৷ ইজরায়েলের সংস্থা এনএসও গ্রুপ তৈরি করে৷ অর্থের বিনিময়ে এই সফটওয়্যার বিভিন্ন দেশের সরকারকে ব্যবহারের লাইসেন্স দেয়৷ বিশেষজ্ঞরা একে সাইবার অস্ত্র বলে থাকে৷ ২০১৬ সালে প্রথম পেগাসাসের কথা জানা যায়৷ আরবের এক সমাজকর্মী ফোনে সন্দেহজনক মেসেজ পান৷ প্রথমে মনে করা হয়, আইফোন ব্যবহারকারীদের টার্গেট করছে পেগাসাস৷ কিন্তু এই ভুল ভাঙে পরের বছর৷ বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যানড্রোয়েড ফোনও হ্যাক করতে পারে পেগাসাস৷ ২০১৯ সালে এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে কেস করে ফেসবুক৷ তার পরই জানতে পারা যায়, পেগাসাস ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভারতের বহু সাংবাদিক ও সমাজকর্মীর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে৷
কীভাবে হ্যাকিং হয়?
যাঁর ফোন হ্যাকিং হবে সেই ফোনে একটি ওয়েবসাইট লিঙ্ক পাঠানো হয়৷ লিঙ্কে একবার ক্লিক করলেই পেগাসাস ফোনে ইনস্টল হয়ে যাবে৷ শুরু হয়ে যায় ফোনে নজরদারি৷ হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস মেসেজ অথবা মিসড কলের মাধ্যমেও সফটওয়্যারটি ফোনে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে৷ ইনস্টল হওয়ার পর কল লগ থেকে মুছে দেয় সফটওয়্যারটি৷ ফলে ব্যবহারকারী জানতেও পারেন না কোন নম্বর থেকে মিসড কল এসেছিল৷ এর পর ব্যবহারকারী কার সঙ্গে কথা বলছেন, কী মেসেজ আসছে, ফোনের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা সব নিয়ন্ত্রণ করে পেগাসাস৷ এমনকী এনক্রিপটেড হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের তথ্য পড়ে ফেলতে পারে পেগাসাস৷
কোনও কম্পিউটার বা ফোন হ্যাক-প্রুফ নয়৷ ফোনে আড়ি পাতার জন্য অনেক টুল ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মতো সবথেকে আধুনিক ফোন হ্যাকিং টুল সম্ভবত আর দ্বিতীয়টি নেই৷ নিঃশব্দে কাজ করে পেগাসাস৷ ব্যবহারকারী জানতেও পারেন না তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে৷ তবে এই টুল ব্যবহার করে সবার ফোনে আড়ি পাতা সম্ভব নয়৷ কারণ, এই স্পাইওয়্যারটি কিনতেই লাখ লাখ টাকা খরচ হয়৷ সরকার বা বড় কোনও সংস্থা ছাড়া পেগাসাস কেনা সম্ভব নয়৷
এনএসও গ্রুপ বরাবর দাবি করে এসেছে, সরকারি বরাত ছাড়া তারা কারও ফোনে আড়ি পাতে না৷ এর অপব্যবহারের জন্য সংস্থা দায়ী নয়৷ পেগাসাসের খবর সামনে আসার পর নাগরিকদের গোপনীয়তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে৷ তার প্রেক্ষিতে বলা যেতে পারে, সরকারের বিভিন্ন নীতি বা কাজের সমালোচনা করছেন এমন ব্যক্তিদের ফোনকেই টার্গেট করা হয়৷ ভারতের ৩০০ জনের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে৷ যাদের মধ্যে আছেন সাংবাদিক, বিরোধী নেতা, মন্ত্রী, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী, বিচারপতি প্রমুখ৷ সুতরাং কারও যদি মনে হয় সরকার বা কোনও প্রভাবশালী সংস্থার আপনার ওপর নজরদারি চালানোর কারণ নেই, সেক্ষেত্রে এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ারও কারণ নেই৷