কলকাতা: আগামী সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (৫অগস্ট) পেগাসাস (Pegasus) মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে (Supreme court)। আগামী সাত দিনের মধ্যেই সম্ভবত দেশের শীর্ষ আদালতে এই সংক্রান্ত একাধিক আবেদন জমা পড়তে চলেছে। যার মধ্যে একটি আবেদন করতে পারেন সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা (Paranjoy Guha Thakurta)। সাংবাদিক এন রাম এবং শশী কুমারের আবেদনের ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি৷ প্রধান বিচারপতি এনভি রামানা-র নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি৷ ওই দুই সাংবাদিকের ফোন হ্যাক না হলেও পরঞ্জয় কিন্তু পেগাসাস কাণ্ডে সরাসরি ভুক্তভোগী৷ শুধু মাত্র সাংবাদিকরাই না, রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Bandyapadhya) মত রাজনীতিবিদ বা প্রাক্তন সিবিআই (CBI) প্রধান অলোক কুমার ভর্মার (Alok Kumar Verma) ফোনও ট্যাপ করা হয়েছিল পেগাসাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে।
https://twitter.com/FbdnStories/status/1416789869624430595?s=20
আরও পড়ুন- চতুর্থ স্তম্ভ: পেগাসাস ডেঞ্জারাস(30/07/2021)
সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা চার বছর আগে তাঁর আই ফোন সেভেন কেনেন। তারপর থেকেই অফিসের যাবতীয় কাজ তিনি ফোনেই করে থাকেন। ই-মেল, ফোন কল, ভিডিও চ্যাট, সিগন্যাল মেসেজ, টেলিগ্রাম মেসেজ, হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ, সমস্ত অফিসিয়াল এবং ব্যক্তিগত কাজ ফোনেই করেন। ফোনে রয়েছে কয়েক হাজার ফোন নম্বর। তাঁদের নাম। ঠিকানা। ই-মেল। অফিসের ঠিকানার সঙ্গে আরও অনেক খুঁটিনাটি তথ্য। রয়েছে অসংখ্য ছবি এবং ভিডিও। ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে পরঞ্জয়ের ফোনের এই সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক হয়েছে, তদন্তকারীরা যাকে বলছেন ‘কম্প্রোমাইজড’।
আরও পড়ুন- আগামী সপ্তাহেই পেগাসাস কাণ্ডের শুনানি, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
ফরাসি অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা ‘ফরবিডন স্টোরিজ’ এবং ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ যৌথভাবে পেগাসাস কেলেঙ্কারির তদন্ত করে। সব মিলিয়ে ৮০-র বেশি সাংবাদিক, দশ দেশের ১৭টি সংবাদ সংস্থা বা মিডিয়া হাউজ একসঙ্গে এই ষড়যন্ত্রের তদন্ত করেছে। ফাঁস হয়েছে এক নজিরবিহীন গুপ্তচরবৃত্তির চক্রান্ত। শুধু মাত্র আমাদের দেশই নয় পেগাসাস সফটওয়ারের অপ ব্যবহার ‘গণতন্ত্র’-এর উপর এক চরম সাইবার হানা বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন- ইজরায়েলে পেগাসাস নির্মাতা সংস্থায় তল্লাশি, ‘খেলা হবে’ ট্যাগ করে ট্যুইট ডেরেকের
চলতি বছরের ৮ মার্চ সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতার কাছে একটি ফোন আসে। ফোন করেন চেন্নাইয়ের ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার সন্ধ্যা রবিশংকর। সন্ধ্যা তামিলনাড়ুর বালি মাফিয়াদের নিয়ে ধারাবাহিক রিপোর্ট করেছেন। পরঞ্জয় এবং সন্ধ্যা, ফাউন্ডেশেন ফর মিডিয়া প্রফেশনালস নামের একটি সংস্থার সদস্য। সন্ধ্যা ফোনে পরঞ্জয়কে বলেন, তিনি ৮ মার্চ রাতে দিল্লি পৌঁছবেন। পরের দিন ৯ মার্চ পরঞ্জয়ের সঙ্গে দেখা করতে চান। বলেন, ‘খুব জরুরি দরকার।’ বলেন, ‘দেখা করেই বলবেন বিষয়টা কতটা জরুরি।’ পরঞ্জয়ের ৯ মার্চ তারিখেই কলকাতায় যাওয়ার ফ্লাইট বুকিং ছিল। ভোরবেলা ছাড়া দেখা করার কোনও সময় ছিল না। সন্ধ্যা ৮ মার্চ রাতে দিল্লি পৌঁছন এবং পরের দিন খুব ভোরবেলা পরঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন। পরঞ্জয়কে বলেন, তিনি ফরাসি সংস্থা ‘ফরবিডন স্টোরিজ’-এর হয়ে কাজ করছেন। সংস্থার হাতে একাধিক সাংবাদিকের নামের তালিকা এসেছে, যাঁদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে। তখনও সন্ধ্যা বলেননি এই তদন্তের আয়তন কত বড়। এবং কত জন লোক এর সঙ্গে জড়িয়ে। পরঞ্জয়কে তিনি ফোনের (আই ফোন সেভেন Apple7) যাবতীয় খুঁটিনাটি শেয়ার করতে অনুরোধ করেন। সন্ধ্যা বলেন, ফোনের ফরেনসিক অ্যানালিসিসের জন্য সমস্ত তথ্য হাতে পাওয়াটা জরুরি। প্রথমে খানিকটা নিমরাজি থাকলেও পরে সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা তথ্য শেয়ার করতে রাজি হন।
আরও পড়ুন- পেগাসাস নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একজোট বিরোধীরা
এর কয়েক সপ্তাহ পরেই ফরবিডন স্টোরিজ পরঞ্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বলা হয় তদন্ত শেষ হতে আরও এক মাস বা দেড় মাস সময় লেগে যাবে। এরপর ২০২১, মে মাসে পরঞ্জয়ের আই ফোনটি আবার ফরেনসিক পরীক্ষায় যায়। জুন মাসের শেষের দিকে ফরবিডন স্টোরিজ পরঞ্জয়কে ফের ফোন করে। জানায়, পরঞ্জয়ের আই ফোনে ইনফিলট্রেশন হয়েছে অর্থাৎ অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং ফোন কম্প্রোমাইজড হয়েছে। হ্যাক হয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চ, এপ্রিল এবং মে এই তিন মাস ফোনে আড়িপাতা হয়েছে।
আরও পড়ুন- পেগাসাসের নজরদারিতে ৬০ মহিলার নম্বর
পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতার ফোনে কেন পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হল? ২০১৮ সালের ওই তিন মাস কোন কোন স্টোরির উপর কাজ করছিলেন পরঞ্জয়? কী এমন তথ্য হাতে এসেছিল? কলকাতা টিভির ডিজিটাল টিমের কাছে সমস্ত তথ্য জানিয়েছেন সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা। সেই তথ্যের বিস্তারিত থাকবে kolkatatv.org -র পেজে।