চণ্ডীগড়: গত দু’দিন ধরে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার-সহ একাধিক প্লাটফর্মে একটি ভিডিও নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে৷ প্রশাসনকে সমালোচনা করছে সাধারণ মানুষ থেকে জনপ্রতিনিধিরা৷ কারণ, ভাইরাল হওয়া ভিডিও-তে কৃষকদের ‘মাথা ফাটানো’র নির্দেশ দিচ্ছেন জেলা শাসক! কিন্তু, ওই ভিডিও সঠিক নয় বলে দাবি করা হয়েছে।
কার্নালের জেলা শাসক জানিয়েছেন, সংবাদ মাধ্যমে এডিট করা ভিডিও দেখানো হচ্ছে। সোমবার হরিয়ানার কার্নালের অভিযুক্ত জেলা শাসক বলেন, ভিডিও-তে পুলিশি নির্দেশের পুরোটা নেই৷ যেমনটা তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, বিক্ষোভকারীদের থামাতে হবে। তারা বল প্রয়োগ করলে জোর পূর্বক থামাতে হবে। কারণ, সেখানে নাকা চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
অথচ, ভাইরাল হওয়া ভিডিও-তে কৃষক আন্দোলন ভন্ডুল করতে পুলিশকে কৃষকদের মাথায় আঘাত করার নির্দেশ দিচ্ছেন মহকুমা শাসক৷ শনিবার হারিয়ানার কার্নাল জেলার সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে৷ এই সমালোচনা শুধু বিজেপি বিরোধী মানসিকতার লোকজনই করছে এমনটা নয়৷ বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধিও সেই ভিডিও টুইটারে পোস্ট করেছেন৷ একই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, আশা এই ভিডিওটি এডিট করা৷ আর তা যদি না হয়ে থাকে তাহলে আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণ নাগরিক সঙ্গে এমন আচারণ মেনে নেওয়া যায় না৷
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীকে খুনের হুমকি, অভিযুক্ত অধ্যাপককে জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের
শনিবার হরিয়ানায় কৃষক আন্দোলন ভন্ডুল করতে কার্নালের মহকুমা শাসক পুলিশকে লাঠি চার্জের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ নির্দেশে পরে পুলিশের থেকে ‘লাথ মারোগে না’ বলে উত্তর জানতেও চেয়ে ছিলেন৷ সেই নির্দেশ পেয়ে পুলিশ বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষকদের উপর নির্বিচারে লাঠি চার্জ করে৷ বহু কৃষক জখম হয়৷ পরে জানা যায়, পুলিশের লাঠি চার্জে ১০ জন কৃষক গুরুতর জখম হয়েছেন৷ কৃষকদের অপরাধ ছিল যে, মুখ্যমন্ত্রী মনোহার লাল খাট্টার , রাজ্য বিজেপি প্রধান ওম প্রকাশ ধনকড়-সহ অন্যান্য বিজেপি নেতাদের উপস্থিতিতে অবরোধ করেছিল৷
আরও পড়ুন- বাংলার বিজেপি থেকে আরও অনেকেই যোগাযোগ করছেন, ত্রিপুরার বিধায়করাও: ব্রাত্য
ভাইরাল হওয়া ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, কার্নালের মহকুমা শাসক আয়ুশ সিনহা একদল পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন৷ পুলিশরা কী করবে তা নির্দেশ দিচ্ছেন৷ যাতে কোনও ভাবেই কৃষকরা ব্যারিকেডের ওপাশে যেতে না পারেন৷
আরও পড়ুন- বাংলার বিজেপি থেকে আরও অনেকেই যোগাযোগ করছেন, ত্রিপুরার বিধায়করাও: ব্রাত্য
আয়ুশ সিনহা পুলিশদের বলছেন, ‘এটা খুব সহজ সরল ব্যাপার যে কেউই হোক না কেন, তারা কেউই যেন ওখানে পৌঁছতে না পারে৷ যে কোনও মূল্যে কেউই যেন ওখানে যেতে না পারে৷ শুধু আপানারা লাঠি তুলবেন আর পেটাবেন……এটা খুবই পরিষ্কার, এর বাইরে আর কোনও নির্দেশের প্রয়োজন নেই৷ তাদের শুধু কঠোরভাবে আঘাত কর। আমি যদি একজনও বিক্ষোভকারীকেও দেখি, সঙ্গে সঙ্গে আমি দেখতে চাই মাথা-হাত পা গুড়িয়ে গিয়েছে৷’ এখানেই ভিডিও-টি শেষ হয়নি৷ মহকুমা শাসককে আরও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আর কোনও সন্দেহ আছে? প্রত্তুত্যরে পুলিশ দল উত্তর দেয়, না স্যার৷’
আরও পড়ুন- চোর সন্দেহে ট্রাকে বেঁধে খুন, অভিযুক্তদের বাড়িতে বুলডোজার চালাল প্রশাসন
বরুণ গান্ধি ছাড়াও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা৷ তিনি টুইট করে লিখেছেন, খাট্টার সাহেব আপনি আজকে হরিয়ানাবাসীর হৃদয়ে লাঠির বন্যা বইয়েছেন৷ আগামী প্রজন্ম কৃষকদের এই রক্ত ঝরার কথা মনে রাখবে৷ “
স্বারজ ইন্ডিয়ার প্রধান ও কৃষক নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, হরিয়ানা পুলিশের আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে৷ কৃষকরা ওখানে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলের নেতাদের উপস্থিতির বিরোধিতা করছিলেন৷ এটাই হরিয়ানা পুলিশের আসল চেহারা৷”
আরও পড়ুন- প্যান্টের কাপড়ের ভাঁজে সোনাপাচারের অভিনব চেষ্টা, বিমানবন্দরে ধরা পড়ে গেলেন যাত্রী
শনিবার সকালে কার্নাল জেলার গুরুদ্বরা সাহিব অঞ্চলে জমাতের কথা ছিল প্রতিবাদী কৃষকদের৷ কিন্তু, কার্নালের জেলা শাসকের নির্দেশে পুলিশের লাঠিচার্জে তা সম্ভব হয়নি৷ কারণ, স্থানীয় কার্নাল জেলার শাসকের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, আমরা দু’দিন ধরে এখানে আছি৷ ঘুমায়নি৷ যে কোনও ভাবেই জমায়েত বন্ধ করতে হবে৷ এটা ওপেন ওর্ডার৷ মারোগে না লাথ!’ এরপরই পুলিশি তাণ্ডব শুরু হয়৷
আরও পড়ুন- National Sports Day 2021: চারিত্রিক দৃঢ়তা নিয়ে আসে খেলাধুলা
পরে সোনিপাত জেলার জেলার পানিতক-রহতক জাতীয় সড়ক অবরোধ করে ‘কৃষকরা’৷ ধীরে ধীরে পরিস্থিতি জটিল হতে থাকে৷ দিল্লি কার্নাল তাজীয় সড়কের বাস্তারা ডোল প্লাজার কাছে ফের জমায়েত করে কৃষকরা৷ কার্যত কুরুক্ষেত্রে এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে তাঁরা৷ সেখানেও পুলিশের লাঠিচার্জে প্রতিবাদী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়৷