নয়াদিল্লি: গণতন্ত্র বলতে এখন যেটুকু আছে তার থেকে অনেক বেশি প্রয়োজন দেশের৷ গণতন্ত্র মানে শুধু ভোটদান প্রক্রিয়া বোঝায় না৷ নিজের মতবাদকে আরও খোলা মনে বলতে পারা বা তর্ক করার স্বাধীনতাই হচ্ছে গণতন্ত্র৷ এক সংবাদমাধ্যম আয়োজিত আলোচনা সভায় এমনটাই জানান নোবেলজয়ী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন৷ গণতন্ত্র ছাড়া, কোভিড, শান্তিনিকেতন, ভার্চুয়াল পড়াশোনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি৷
প্রশ্ন: অতিমারী আপনার জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে?
উত্তর: আমি সামনা সামনি কথা বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করি৷ কিন্তু কোভিডের জন্য আমায় জুমে কাজ চালাতে হয়েছে৷ এটা আমি পছন্দ করি না৷ আমি চাই ছাত্রদের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে এবং শেখাতে৷ এটা নিয়ে আমি বেশি ভাবছি না৷ সেপ্টেম্বরে পরের সেশন রয়েছে৷ আশা রাখি পরিস্থিতি বদলে যাবে৷ ভার্চুয়ালি পড়াতে হবে না৷ আমি ম্যাসাচুসেটসের বাড়িতে পড়ে আছি৷ কোথাও যেতে পারছি না৷ আমি চাইছি শান্তিনিকেতনের ছোট বাড়িতে যেতে চাইছি৷
প্রশ্ন: আপনার বই পড়ে বোঝা যায় আপনি প্রচুর জায়গায় গেছেন, নদীর কথা রবীন্দ্রনাথের কথা আছে আপনার বইতে৷ শান্তিনিকেতনের প্রভাব আপনার পরবর্তী জীবনে কতটা?
উত্তর: আমার জীবনচর্চা, জীবনধারা সব কিছুর মধ্যে শান্তিনিকেতন এবং রবীন্দ্রনাথ৷ শুধু মাত্র রবীন্দ্রনাথের ভাবনা বা চর্চা নয়৷ ঢাকায় স্কুলে যখন পড়তাম তখন সেখানে কে কতটা নম্বর পেল তাতেই ছাত্রদের মান তৈরি হত৷ শান্তিনিকেতন আমাকে এই ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার থেকে মুক্তি দেয়৷ অন্যরকম করে ভাবনা-চিন্তা করতে শেখায়৷ এখানে এসে আমার পড়াশোনা অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল৷ শান্তিনিকেতনের লাইব্রেরি আমার পছন্দের ছিল৷ খোলামেলা লাইব্রেরি ছিল৷ দরজা জানালা ছিল না৷ যেখানে খুশি যাও পড়াশোনা কর৷
প্রশ্ন: যুক্তি ও স্বাধীনতা শান্তিনিকেত দিয়েছে৷ আর এখন উপাচার্য শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি লিখে আধা সেনা মোতায়েনের জন্য বলছে৷ হঠাৎ করে কী হল ওখানে?
উত্তর: বাংলা বিশেষ করে শান্তিনিকেতন তো ছিল মননশীল মানুষদের রাজধানী৷ আমি মনে করি না বাংলার সেই জায়গাটা রয়েছে৷ কিন্তু অন্য রাজ্যের মতো বাংলারও নিজস্বতা রয়েছে৷ শান্তিনিকেতনের যা পরিবেশ সেখানে শিক্ষকরা ছাত্রদের কথা বলার স্বাধীনতা দেন৷ কিন্তু শান্তিনিকেতন যখন আমলাতন্ত্রের আওতায় চলে গেল তখন মাথার উপর বসলেন প্রধানমন্ত্রী৷ তিনিই হলেন প্রতিষ্ঠানের আচার্য৷ এতে অসুবিধার কিছু নেই৷ যদি প্রধানমন্ত্রী বাকস্বাধীনতাকে উৎসাহ দেন তখন এখানে অসুবিধার কিছু নেই৷ কিন্তু সেটা হচ্ছে না৷ তার বদলে সংকীর্ণ মনের মানসিকতাকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷