নয়াদিল্লি: প্রতিবেশী হিসেবে আফগানিস্তান পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে ভারত। সম্প্রতি সমস্ত ঘটনাবলী গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে নয়াদিল্লি। আজ সোমবার রাষ্ট্রসঙ্ঘ আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এমনটাই জানান বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
পাশাপাশি তিনি জানান অতীতের মতো আফগানিস্তানের নাগরিকদের পাশে সব সময় রয়েছে ভারত। এদিন আফগানিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠকের আয়োজন করে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদেশ মন্ত্রী।
“আফগানিস্তান একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। দেশটির রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্ষেত্রে বিরাট সমুদ্রের মতো পরিবর্তন এসেছে।” জানান বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
আন্তর্জাতিক স্তরে আয়োজিত এই বৈঠকে এস জয়শঙ্কর জানান আফগানিস্তানের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হওয়ায় দেশটির সাম্প্রতিক সমস্ত পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে ভারত।
As an immediate neighbour, India is monitoring developments in Afghanistan with “understandable concerns” : EAM Jaishankar
— Press Trust of India (@PTI_News) September 13, 2021
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম সংগঠনটি তরফের সম্পর্কে জানানো হয় আফগানিস্তানের দারিদ্রতা ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯৭ ছুঁতে চলেছে। আর এই পরিবর্তন আঞ্চলিক স্থিতাবস্থার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে জানান তিনি।
এছাড়াও আফগানিস্তান ছেড়ে যে সমস্ত নাগরিকেরা বিদেশে যেতে চান। তাদের ক্ষেত্রেও যাতে প্রণব বাধার সম্মুখীন হতে না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন জয়শঙ্কর।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান-তালিবান আরও কাছাকাছি, কাবুলে নামল প্রথম পাক যাত্রিবাহী বিমান
তবে আফগানিস্থানে ভারতের ভূমিকা নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। এদিন আন্তর্জাতিক মহলে নয়াদিল্লির অবস্থান নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানান, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। দীর্ঘ কি থেকেই ভারত-আফগানিস্তান পরস্পর পরস্পরের পাশে থেকেছে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। সে দেশের সমস্ত মানবিক চাহিদার জন্য পাশে থাকবে ভারত। তিনি আরো বলেন ভারত আফগানিস্তানের সম্পর্ক প্রতিফলিত হয় সে দেশে ৩৪ টি প্রদেশ চলতে থাকা ভারতীয় প্রজেক্টগুলোর মাধ্যমেই। আজকের এই জটিল পরিস্থিতিতে অতীতের মতোই আফগান নাগরিকদের পাশে থাকবে ভারত। আফগানিস্তানের জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের ভূমিকাকেও বরাবর ভারত সমর্থন করে এসেছে বলেও স্পষ্ট দাবি তাঁর।
আজকের এই কঠিন সময়ে আপনার নাগরিকদের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা এবং মানবিকতা। তাই বিভেদ বৈষম্য না রেখে আফগানদের সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রী জয়শঙ্কর।
পাশাপাশি তিনি জোর দেন ‘রেজোলিউশন ২৫৯৩’র ওপর। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ‘২৫৯৩’ অনুযায়ী আফগানিস্তান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা উচিত গোটা বিশ্বের। উল্লেখ্য গত আগস্টে এবার তার পরিষদের সভাপতি থাকাকালীন ভারত এই প্রস্তাবটি পাস করায়। আফগানিস্তানের মাটি থেকে ভবিষ্যতে যাতে কোন দেশে সন্ত্রাসী হামলা না হয়ে থাকে তা নজর রাখা ও নিশ্চিত করার জন্যই এই প্রস্তাব। যদিও গত ৩০ অগাস্ট রাষ্ট্রসঙ্ঘে পাস হওয়া এই প্রস্তাবে ভোট দিতে বিরত থাকে চীন ও রাশিয়া
শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক স্তরে নয় আফগানিস্তানের তালিবান মোকাবিলায় কূটনীতির পাশাপাশি সামরিক দিক থেকে ও প্রস্তুত থাকতে চাইছে ভারত। সেই জন্য ইতিমধ্যেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে নয়াদিল্লি। সীমান্ত পারের সন্ত্রাস মোকাবেলায় সাজিয়ে তোলা হচ্ছে ইন্টালিজেন্ট ব্যবস্থাকেও।
আরও পড়ুন: তালিবান মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতীয় বাহিনী
এদিকে কাবুল দখলের পর প্রায় এক মাসের ওপর হয়ে গেলে এখনও নয়া সরকার উদ্বোধন করতে পারেনি তালিবান। গত ৯/১১ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের কথা থাকলেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শপথ গ্রহণ করতে বাধ্য হয় তালিবান নেতৃত্ব। পাকিস্তান ইরান চীন ও রাশিয়া ওই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত
থাকলেও শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসে রাশিয়া। নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার ওই দিন তালিবানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেনা তাঁরা। স্পষ্ট জানায় মস্কো। যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হয় মোল্লা আব্দুল গনি বরাদর ও স্তানিকজাইদের। প্রথম থেকেই তালিবান প্রশ্নে দূরত্ব বজায় রেখেছে ভারত। চীন, পাকিস্তান, ইরান স্বীকৃতি দিলেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মানতে নারাজ তালিবানি শাসন।
তাই আগামী দিনে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়া মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি কোন পথে যাবে এবং ভারতের স্বার্থ তাতে কতটা অক্ষুণ্ন থাকবে তা সময়ই বলবে।