শান্তিনিকেতন: উত্তরপ্রদেশের পাঠ্যসূচিতে বদল। পাঠ্যসূচি থেকে বাদ পড়লেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’র ইংরেজি সংস্করণ ‘দ্য হোম কামিং’ পড়তে হত দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের। এনসিআরটি-র নতুন পাঠ্যসূচি থেকে বাদ পড়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’। তার বদলে আনা হয়েছে রামদেবের ‘যোগ চিকিৎসারহস্য’ ও যোগী আদিত্যনাথের ‘হঠযোগ স্বরূপ এবং সাধনা’।
তবে, শুধু রবি ঠাকুর নয় বাদ পড়েছে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের প্রবন্ধ ‘দ্য উইমেনস এডুকেশন’। মুকুল আনন্দের ‘দ্য লস্ট চাইল্ড’, আর কে নারায়ণের গল্প ‘অ্যান অ্যাস্ট্রোলজার্স ডে’,। পি বি শেলির কবিতাও আর পড়ানো হবে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশে দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে বাদ গিয়েছে সরোজিনী নায়ডুর কবিতা ‘দ্য ভিলেজ সং’ এবং রাজা গোপালাচার্যের রচনা।
পাঠ্যসূচি থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাদ দেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিশ্বভারতী প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজ কলি সেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের থেকে এর থেকে বেশী আর কিছু আশা করা যায় না। তিনি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তাতে আগামী দিনে উত্তরপ্রদেশের পড়ুয়ারা জানতেই পারবে না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে ছিলেন। যদি বা জানতেও পারেন তাহলে এটুকুই জানতে পারবেন, উনি কী নিয়ে লেখার জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। যেখানে কোরিয়া সহ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা পড়ানো হয় সেখানে উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই পদক্ষেপ সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।’
এর পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘যোগ সম্পর্কিত যে বিষয়বস্তু পাঠ্যসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে তা পড়ানোর জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেন বাদ দিতে হবে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো কখনো যোগাসনের বিরোধী ছিলেন না। বরং বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতার বিভিন্ন দিকে চোখ রাখলে এই আসন অথবা ব্যায়াম সম্পর্কে অনেক নজির পাওয়া যাবে।’
তিনি ভোটের সময় বাঙালির আবেগ নিয়ে রাজনীতি করারও বিরোধিতা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হোক অথবা স্বামী বিবেকানন্দের বাণীর একটি লাইন তুলে ধরে বক্তব্য রেখে যেভাবে রাজনীতি করা হয়ে থাকে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
একই ভাবে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উত্তরসূরী সুপ্রিয় ঠাকুর। তিনি জানিয়েছেন, ‘এ ছাড়া ওনারা আর কীইবা করতে পারবেন। ভোটের সময় ব্যবহার করে পরে ছুড়ে দেওয়াই হল এঁদের কাজ।’
অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘উত্তরপ্রদেশ সরকার এনসিআরটি সিলেবাস অনুযায়ী নতুন সিলেবাস তৈরি করেছে বলে জানতে পেরেছি। আর সেই অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটি’ সহ অন্যান্য বেশকিছু লেখকের লেখা বাদ পড়েছে। আর এই জায়গায় আমার প্রশ্ন কেন এনসিআরটির সিলেবাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছিল না এতদিন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো সার্বজনীন। তিনি তো চিরন্তন ভারতবর্ষের কথা বলে গিয়েছেন। এই জায়গায় যদি পরিকল্পিতভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ অন্যান্য যে সকল লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে তা হয়ে থাকে তাহলে তা খুবই নিন্দনীয়।’