কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভাও চুপ। প্রফেট মহম্মদ নিয়ে নূপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের পর বিতর্কের ঝড় সম্ভবত চুপ করিয়ে দিয়েছে। পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ধাক্কা খেয়েছে। কাতার, কুয়েত, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর সঙ্গে মঙ্গলবার যুক্ত হয়েছে মালয়েশিয়ার নাম। ভারতের হাই কমিশনারকে তলব করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে মালয়েশিয়ার অবস্থান। ইসলামোফোবিয়া ভারতকে দাঁড় করিয়েছে এক অবিশ্বাসের মুখোমুখি। কিন্তু কেন?
‘সুপার স্প্রেডার’ শব্দটি শোনা গিয়েছিল অতিমারীর একেবারে শুরুর দিকে। রটে গেল দিল্লির ‘তবলিঘি জামাত’-এর জমায়েত থেকে কোভিড সুনামির মত সংক্রামিত হয়েছে গোটা দেশে। শোনা গেল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ শাক-সবজি, ফলের গায়ে নাকি লালরস মাখিয়ে বিক্রি করছেন। ইসলামোফোবিয়ার এক চূড়ান্ত নজির। ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের সরকার তবলিঘি জামাতকে ‘সুপার স্প্রেডার ইভেন্ট’ হিসেবে ছাপ্পা মেরে দিল।
প্রতিদিন টিভিতে প্রাইম টাইমে, তর্কবিতর্কে ইসলামোফবিয়ার হ্যাশট্যাগ, মিম, এক তরফা আক্রমণ। সোশাল মিডিয়ার নজিরবিহীন ট্রোল। সংবাদের শিরোনামে, ‘করোনা জিহাদ থেকে দেশকে রক্ষা করুন।’
কম করে হাজার জনেরও বেশি সংখ্যালঘুকে কোভিড ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। অতিমারি আইন লঙ্ঘন মামলা শুরু হয়। বেশিরভাগ তীর্থযাত্রীই এসেছিলেন ইন্দোনেশিয়া থেকে। ইন্দোনেশিয়া যে দেশ ভারতের অন্যতম বাণিজ্য-বন্ধু। মনে রাখতে হবে নূপুর শর্মার বক্তব্যে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইন্দোনেশিয়াও। শুধু তাই নয়, এর আগেও আঞ্চলিক সম্মেলনে তবলিঘি জামাত নিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
দু’বছর আগে ২০১৫ সালের একটি টুইট মুছে ফেলতে বাধ্য হন বিজেপি নেতা তেজস্বী সূর্য। আরব মহিলাদের নিয়ে করা আপত্তিকর ওই টুইট ভেসে ওঠে ২০২০ সালে। বিতর্কের ঝড় বয়ে যায়। দুবাই এবং কুয়েতের সামনের সারির ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সমাজকর্মীরা নিন্দা, সমালোচনায় সোচ্চার হন। বিজেপি নেতা টুইট মোছেন।
আরও পড়ুন- Nupur Sharma: প্রফেট মহম্মদ ইস্যুতে এবার নিন্দা মালয়েশিয়ার, ডেকে পাঠাল ভারতীয় হাই কমিশনারকে
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগের বছর। বিজেপি’র জনসভায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উইপোকা বলে সম্মোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্। প্রতিবেশী বাংলাদেশে তার খারাপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। বিজেপি শাসনে গত কয়েক বছর ধরে দেশ ডুবে গিয়েছে ঘৃণাভাষণের সুনামিতে। কখনও লাভ জিহাদ, কখনও গো-হত্যা, কখনও সংখ্যালঘু মহিলাদের অনলাইনে নিলাম, কখনও জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করিয়ে একমেরুকরণের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে বিজেপি। যার শেষতম সংযোজন নূপুর শর্মা।
একটা পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। পশ্চিম এশিয়ার ছ’টি দেশে সবমিলিয়ে ৮৫ লক্ষ ভারতীয় পেশাদার হিসেবে কাজ করে থাকেন। এই দেশগুলি ‘গাল্ফ কর্পোরেশন কাউন্সিল’-এর অন্তর্ভূক্ত। ভারতীয়রা প্রতি বছর উপার্জনের ৩ হাজার ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার ভারতে তাঁদের পরিবারকে সাহায্য করে থাকে। যে অর্থে দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষের সংসার খরচ চলে। গাল্ফ কর্পোরেশনের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের আর্থিক লেনদেন ৮ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের। ইরাক, ভারতকে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি সরবরাহ করে থাকে। প্রাকৃতিক গ্যাসের যা চাহিদা ভারতে রয়েছে, তার ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে কাতার।
আরও পড়ুন- India-Pakistan: ভারত ও পাকিস্তান দু’ভাই দু’পথে হাঁটছে
পরিস্থিতি অনুকূল নয় বুঝতে পেরেই দেশের শাসক দল বিজেপি নূপূর শর্মার বক্তব্যকে ঝেড়ে ফেলেছে। সাসপেন্ড করেছে। ধর্ম সহিষ্ণুতার বিবৃতি দিতে হয়েছে। বলতে হয়েছে ‘ফ্রিন্জ এলিমেন্ট’। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বিদেশনীতির স্বার্থে দু’পা হয়তবা পিছিয়ে এসেছে কেন্দ্র। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলির কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারবে তো নরেন্দ্র মোদির সরকার?