একদিকে করোনাভাইরাসের লাগাম ছাড়া সংক্রমণ অন্যদিকে হাড় কাঁপানো শীত। যত নামবে তাপমাত্রার পারদ তত বাড়বে শীতকালের জ্বর, সর্দি ও কাশির সমস্যা। আর বলা বাহুল্য এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই শীতকালে পুষ্টিকর খাওয়া দাওয়ার ব্যপারে বেশি সজাগ হওয়ার প্রয়োজন। এই সময় ভীষণ উপকারী রান্নাঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় এই চারটে মশলা। এগুলো খেলে শরীর গরম থাকে। আর এর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল(antibacterial) ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটারি(anti inflammatory) কার্যকারিতা রয়েছে। এর ফলে ফ্লু(flu), সর্দি কাশির(common cold & cough) মতো শীতকালের নানান সমস্যার থেকে আপনার রক্ষা করতে পারে এই মশলাগুলি। যেমন-
এলাচ(cardamom)
দুরকমের এলাচ পাওয়া যায়, কালো ও সবুজ। আর এই দুটোই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে ভীষণ কার্যকরী। বিশেষ করে কালো লবঙ্গ সর্দি ও কাশি হালকা করতে ও শ্বাসকষ্ট কম করতে ভীষণ কার্যকরী।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
রান্নায় তো ব্যবহার হয়ই। তা ছাড়া সর্দি কাশির সময় এই কালো এলাচ চায়ে দিয়ে খেতে পারেন। আবার চায়ের মধ্যে দিয়ে খেতে ভাল না লাগলে গরম জলে দিয়ে খেতে পারেন। শুধু মুখেও খেতে পারেন। প্রয়োজনে বাজার থেকে এলাচের তেল কিনতে পারেন। এই তেল সর্দি কাশি কম করার পাশাপাশি শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকে নরম ও কোমল ভাব এনে দেয়।
দারুচিনি (Cinnamon)
রোগব্যাধি নিরাময়ে দারুচিনির ব্যবহার নতুন কিছু নয়। চিন ও ভারতে নানা রকম ওষুধের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় দারুচিনির তেল। বেশ কিছু গবেষণায় জানা গেছে দারুচিনিতে এমন বেশ কিছু পদার্থ আছে যা খেলে-
১. ডায়বিটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
২.এগুলোর পাশাপাশি দারুচিনির আরও একটি বড় উপকারিতা হল ঠান্ডা লাগলে এটা ভীষণ কাজের। গলা ব্যথা দ্রুত সারিয়ে তোলে।
৩. এখানেই শেষ নয়। দারুচিনিতে ভাল পরিমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। পলিফোনোল ও প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিন্স নামক যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে সেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
৪. অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যক্টেরিয়াল ও বটেই দারুচিনিতেই অ্যান্টিফাঙ্গল কার্যকারিতাও রয়েছে ।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
গরম জলে দারুচিনি ফুটিয়ে নিন। এবার এই জল ছেঁকে তাতে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে দিন। দিনে দু থেকে তিনবার এই ভাবে জল খেলে দেখবেন আপনার গলা সেরে উঠেছে।
কালো মরিচ (black pepper)
উত্তর থেকে দক্ষিণ কিংবা পূর্ব থেকে পশ্চিম, ভারতীয় রান্নায় কতরকম ভাবে যে এই গোলমরিচের ব্যবহার হয় তা বলে শেষ করা যাবে না। গোল মরিচ গলার জন্য ভীষণ উপকারী। এতে অনেক রকমের পুষ্টিকর পদার্থ রয়েছে যেমন ভিটামিন সি(vitamin C), ফ্লেভোনয়েডস(flavonoids), অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট(antioxidant)। রয়েছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল কার্যকরিতা(antibacterial property)। এই সবকিছুই সর্দি কাশি কমানোর পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে অত্যন্ত কার্যকরী।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
সকালে এক কাপ চায়ে সামান্য কালোমরিচ দিয়ে খেতে পারেন। কিংবা মধুর সঙ্গে কালোমরিচ মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে শীতকালের হাজারো ভাইরাসকে আপনি নিজের থেকে দূরে রাখতে পারবেন।
লবঙ্গ (cloves)
লবঙ্গ হল অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি পদার্থের ভান্ডার। তাই গলা ব্যথা থেকে শুরু করে ঠান্ডা লেগে দাঁত ব্যথা, সর্দি কাশি কিংবা সাইনাস সব সমস্যাতেই লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসিম।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
অনেক লবঙ্গ শুধু মুখে খান। মাউথ ফ্রেশনার হিসেবেও লবঙ্গ দারুণ কাজের। তবে যদি শুধু মুখে খেতে না চান তাহলে গরম জলে মিশিয় সকাল সকাল খেতে পারেন। কিংবা সকালের চায়ে দিয়ে খেতে পারেন। ঠান্ডা লেগে নাক জাম হয়ে গেলে ভীষণ কাজের লবঙ্গ তেল।
তাহলে আর অপেক্ষা কেন? এই শীতে শরীর সুস্থ রাখতে কাজে লাগান দারুণ এই ‘হোম রেমেডি’।