কলকাতা: কথায় বলে বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা যখনই হোক না কেন একটু ছুটি পেলেই হল। ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আর সামনেই দুর্গা পুজো (Durga Puja)। পুজো মানেই একটা লম্বা ছুটি (Holiday)। স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি সব জায়গাতেই ছুটি পুজোর কটা দিনে। তাই অনেকেই ছুটি কাটাতে চলে যান নিজেদের পছন্দমতো জায়গায়। কারও পছন্দ সমুদ্র, কারও পাহাড়, কারও জঙ্গল। কেউ পছন্দ করেন কোলাহল, হই-হট্টগোলের মতো জাঁকজমক কোনও পর্যটনকেন্দ্র। আবার কেউ পছন্দ করেন শান্ত, নিরিবিলি কোনও জায়গা। ডেস্টিনেশন বেছে নেওয়া সহজ হলেও টিকিট, হোটেল বুকিং, ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা—সব প্ল্যান করে তারপর বাড়ির বাইরে পা রাখতে হয়। আর সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তোলে বাজেট। পকেটের কথা ভেবেই বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করতে হয়। চিন্তা নেই, আপনাদের জন্য এমন কয়েকটি জায়গার সন্ধান দেব, যেখানে আপনি ৫০০০ টাকা নিয়েও ঘুরে আসতে পারবেন।
দার্জিলিং- এবছর অক্টোবরের শেষ দিকে পুজো। তাই উত্তুরের হাওয়া গায়ে মাখতে যেতে পারেন বাঙালির অন্যতম পছন্দের জায়গা দার্জিলিং। বার বার গিয়েও যেন পুরনো হয় না। দার্জিলিংয়ের প্রধান আকর্ষণ মূলত তিনটে। যা অন্য কোথাও মিলবে না। এক কাঞ্চনজঙ্ঘা, দুই সব সময় শীতল আমেজ আর তৃতীয় হল টয়ট্রেন। তবে দু’তিন দিন থাকতে গেলে এই তিনটিতে মন ভরবে না। তাই পুজোর চারটি দিন টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ, কাঞ্চনজঙ্ঘা, মল রোড, পাহাড়ি রাস্তা আর চা বাগানে ঘুরে মন্দ কাটবে না।
কী ভাবে যাবেন- দার্জিলিং মেল, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, কামরূপ এক্সপ্রেস, কাঞ্চনকন্যা, শতাব্দী এক্সপ্রেস, তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস— শিয়ালদহ থেকে দার্জিলিং যাওয়ার প্রচুর ট্রেন রয়েছে। টিকিটের দাম ৩৬০ টাকার আশপাশে। তবে যাওয়ার দুদিন আগে কাটলে হবে না। দার্জিলিং যাওয়ার ট্রেন সাধারণত রাতেই থাকে। পরের দিন সকালে ট্রেন পৌঁছবে নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে গাড়ি করে সোজা দার্জিলিং। গাড়িতে মাথাপিছু ভাড়া ২৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন- দার্জিলিং-এ প্রচুর হোম স্টে রয়েছে, আছে হোটেলও। এ ছাড়াও কিছু হস্টেল আছে। সেগুলির ভাড়াও অনেক কম। একা যাচ্ছেন, না কি দলে, তা বুঝে থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে পারেন। একটু পরিকল্পনা করে গেলে অনায়াসে মাথাপিছু ৫ হাজার টাকার মধ্যে দিন দুয়েকের দার্জিলিং ভ্রমণ সেরে আসা যায়।
আরও পড়ুন:কার্টুনের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে সন্তান? এই ৫ কৌশলেই সমস্যার করুন সমাধান
ঘাটশিলা- পাশের রাজ্যেই অবস্থিত পাহাড়-জঙ্গস-নদী-ঝরনায় ঘেরা ঘাটশিলা। পুজোর ছুটিতে তিন-চার দিন অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারেন এখানে। সুর্বণরেখা নদীর হাওয়ায় ধুয়ে যাবে সারা বছরের ক্লান্তি। ঘাটশিলার জনজীবন, নদীর চোরা স্রোত, পাহাড় আর জঙ্গলে মিশে পুজোর দিনগুলি দিব্যি কেটে যাবে। এমনিতে সারা বছরই মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে এখানে। তবে পুজোর সময়ে ফাঁকা পেলেও পেতে পারেন। আর ঘাটশিলায় পা রাখলেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়েলর লেখা আরণ্যক উপন্যাসের কথা মনে পড়ে যায়। যার পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে ঘাটশিলার। এখানে এলে একাধিক জয়গা রয়েছে দেখার। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি, বরুডি লেক, ফুলডুংরি। গালুডি, তামার খনি সবটাই রয়েছে এখানে।
কী ভাবে যাবেন- হাওড়া থেকে ঘাটশিলার উদ্দেশে জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে। এ ছাড়াও রয়েছে হাওড়া ইস্পাত এক্সপ্রেস, স্টিল এক্সপ্রেস, টাটানগর ফেস্টিভ্যাল স্পেশ্যাল। ঘাটশিলা যাওয়ার ট্রেনের ভাড়া ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। ঘাটশিলা স্টেশনে নেমে অটো বা গাড়ি ভাড়া করে নিতে হবে। গাড়ির কোনও নির্দিষ্ট ভাড়া নেই। তবে আগে থেকে বুক করে গেলে সুবিধা হবে। সকাল ১০টার মধ্যে ঘাটশিলা পৌঁছে গেলে সে দিনই সন্ধ্যার ট্রেন ধরে রাতে ফিরে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন- এখানে থাকার জন্য আলাদা খরচ হবে না। শুধু খাওয়ার খরচ। তবে অনেকেই এত ধকল নিতে চান না। ধীরেসুস্থে নতুন জায়গায় কয়েক দিন কাটিয়ে আসতে চান। সে ক্ষেত্রে কিন্তু ঘাটশিলায় বেশ কিছু বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়। সেগুলিরও কোনও একটিতে থাকতে পারেন। হোম স্টেগুলির প্রতি রাতের ভাড়া পড়বে খাওয়াদাওয়া-সহ ১০০০-১২০০ টাকা। দু’দিন থাকলেও সব মিলিয়ে ৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না।
বকখালি- ইট-পাথরের নগরে যদি পুজোর সময় মন না বসে, তা হলে যেতে পারেন সাগরে। পুজোর দিনগুলি বকখালির আনাচকানাচ চষে ফেলতে পারেন। সমুদ্রের উত্তাল হাওয়া আর শরতের সোনা মেঘ আপনার ভ্রমণসঙ্গী হবে। রাত হলেই বকখালির সমুদ্রসৈকত জ্যোৎস্নার আলোয় ভেসে যায়। সৈকত লাগোয় ঝাউবন আর এক দিকে রূপনারায়ণ নদীর মোহনা— বকখালি যেন স্বপ্নের ঠিকানা। প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে পুজোয় বকখালি ভ্রমণ একেবারে জমে যাবে।
কী ভাবে যাবেন- শিয়ালদহ থেকে নামখানা লোকালে চেপে যেতে হবে নামখানা স্টেশনে। তার পর সেখান থেকে টোটো কিংবা অটো করে সোজা বকখালি। শিয়ালদহ থেকে প্রায় প্রতি দিন নামখানা লোকাল ছাড়ে। ভাড়া ৪০-৪৫ টাকা। স্টেশন থেকে বকখালি যাওয়ার যে টোটো ছাড়ে, তার ভাড়াও খুব বেশি হওয়ার কথা নয়।
কোথায় থাকবেন- বকখালিতে নানা দামের হোটেল রয়েছে। দেখেশুনে, পকেট বুঝে পছন্দমতো কোনও একটি বুক করতে পারেন।