কলকাতা: জীবনে যে সবকিছু আপনার মনের মতোই হবে এরকমটা নয়। কোনও সময় ভাল যাবে আবার কোনও সময় খারাপ যাবে। এই খারাপ-ভালকে সঙ্গে করেই এগিয়ে যেতে হবে। ধরুন, আপনি মানুষ চিনতে ভুল করেছেন, ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেই সময় আপনার মনে হয়েছে যে, সে আপনার জন্য সঠিক মানুষ নয়। এবার আপনি যখন বুঝতে পারলেন সম্পর্কে থাকা ঠিক হচ্ছে না, তখন আপনি বেরিয়ে এসেছেন। এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু মুশকিল হল সবকিছু বোঝার পরও আপনি একাকীত্বে ভোগেন। জেনে নিন একাকীত্ব থেকে কীভাবে নিজেকে দূরে রাখবেন-
১) এমন কিছু করুন যাতে মনোযোগ সরে যায়- একাকীত্ব একটি অস্থায়ী অনুভূতি। জীবনের বিভিন্ন সময়ে আমরা একাকী বোধ করি। সেটা হতে পারে নতুন কলেজ জীবন শুরু করা বা সম্পূর্ণ নতুন কোন স্থানে বসবাস শুরু করা। বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ একাকীত্বের কষ্ট থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাকীত্ব বোধ ফিকে হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এমন কোন কাজ করুন যেটা আপনি পছন্দ করেন। বিশেষ করে সেই কাজটি, যেটা আপনার মনোযোগ এতোটাই কেড়ে নেবে যে সময় কিভাবে কাটছে আপনি ভুলে যাবেন। সেটা হতে পারে বই পড়া, কোন শখের চর্চা বা পছন্দের কোন কাজ করা। এই কাজগুলো আপনার শরীর ও মন দুই-ই ভাল রাখবে।
২) সামাজিক কাজে যোগ দেওয়া- যদি আপনার একাকীত্বের কারণ আপনার আশেপাশে লোকজনদের সঙ্গে দেখা না করার জন্য হয় তবে এটি আপনার জন্য ভাল সমাধান হতে পারে। তবে, অচেনা কোনও স্থানে অচেনা কোনও মানুষের সঙ্গে হঠাত্ কথা বলা শুরু করা খুব একটা সহজ নয়। এই কারণে একাকীত্বে ভোগা মানুষের জন্য এই উপায়টিকে জরিপের সর্বনিম্ন সহায়ক পরামর্শগুলোর একটি ধরা হয়। যদি অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি আপনাকে ভীত বা অপ্রস্তুত করে তাহলে, এমন একটি সংগঠন বেছে নিন যেখানে আপনি কাজের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক বা সৃজনশীল কিছু করতে পারবেন।
৩) ভাবনায় বদল আনুন- এই সমীক্ষায় মানুষের সহানুভূতির মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, যাঁরা নিজেদের একাকী দাবি করেন, তারা সমাজের অন্য মানুষের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থাকেন। বিশেষ করে তাঁদের প্রতি যাঁরা কোনও কষ্টকর সময় পার করছেন। সামাজিক দক্ষতা পরিমাপ করে দেখে গিয়েছে, একজন একাকী মানুষ আর দশটা মানুষের মতোই দক্ষ ও সামর্থ্যবান। তবে তাঁরা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া বা মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতে পারেন। এটা তাদের জন্য সহায়ক হবে।
৪) কথোপকথন শুরু করুন- অপরিচিতদের কারো সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করার জন্য এক ধরণের মানসিক শক্তির প্রয়োজন। কিন্তু এজন্য আপনাকে শুরুতেই গভীর কোন কথা বলতে হবে, এমনটা নয়। তবে এ উপায়টি কারো সঙ্গে গাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজ করবে না। এটা আপনাকে শুধুমাত্র অন্য মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। প্রতিবার যখন আমরা কারো সঙ্গে কথা বলি, সেটা যদি অপ্রাসঙ্গিকও হয় তারপরও আমরা এটা বুঝতে পারি যে আমরা সবাই একই বিশ্বে পাশাপাশি থাকছি।
৫) অনুভূতি বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে শেয়ার- এই সমাধানটির কথা সাধারণত তারাই বলেন যারা একাকীত্ব বোধ করেননা। এতে বোঝা যায় যে, এ ধরণের সমাধান দেওয়া যতোটা সহজ, বাস্তবে করা ততোটা সহজ না। বিশেষ করে যারা তীব্র মাত্রায় একাকীত্বে ভোগে তাদের ক্ষেত্রে এই সমাধান মূল্যহীন। এখনও এমন অনেকে আছেন যাদের একাকীত্বকে ঘিরে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। তবে ভাল খবর হল যে এখন অনেকেই নিজেদের একাকীত্বের বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হচ্ছেন। আপনার ব্যাপারে অন্যের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, এ নিয়ে আপনি হয়তো উদ্বিগ্ন হতে পারেন। কিন্তু জরিপে দেখা গিয়েছে যে, মানুষ সাধারণত একাকীত্বে আক্রান্তদের ব্যাপারে খারাপ কিছু ভাবেন না। যারা একাকী নন, তাদেরকেও একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান খুঁজতে এই জরিপে সময় ব্যয় করতে দেখা গিয়েছে।
৬) প্রতিটি মানুষের ইতিবাচক দিকটি দেখার চেষ্টা করুন- গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা একাকীত্ব ভোগেন, তাদের অন্যের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিটা খুবই নড়বড়ে। তাই এই সমাধানটির মূল বিষয়বস্তু হল, মানুষের ভেতর থেকে এমন ভাল কিছু খুঁজে বের করা যেন তার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।আপনি যদি মনে করেন যে কেউ আপনাকে তিরস্কার করেছে বা কটু কথা বলেছে। তাহলে ভেঙে পড়বেন না। সমস্তটা ইতিবাচক-ভাবে ভাবুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার বিরুদ্ধে তার কথাগুলো সত্যি কিনা। সে ব্যাপারে কোনও প্রমাণ আছে কিনা। না হলে ভিন্নভাবে ভাবুন। সম্ভবত তাঁরা ব্যস্ত বা ক্লান্ত ছিল অথবা তাঁদের মন খারাপ বা মানসিক চাপের মধ্যে ছিল।
৭) আপনি কেন একাকীত্ব বোধ করেন সে ব্যাপারে জানুন- প্রতিটি মানুষের একাকীত্বের কারণ আলাদা। কেউ হয়তো শারীরিকভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন, আবার কেউ হয়তো শিকার হয়েছেন বৈষম্যের, কারও পক্ষে অন্যকে বিশ্বাস করা কঠিন, আবার অনেকেই জানেন না নিজের মন মানসিকতার সঙ্গে মিল আছে এমন মানুষ কোথায় পাবেন। একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান বের করার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হল, কেন একাকীত্ব অনুভব করছেন সেটা আগে জানা। এক্ষেত্রে আপনার সমাধান যদি কাজ না করে তাহলে অন্য কিছু চেষ্টা করুন।
৮) অপেক্ষা করুন- আমরা জানি যে একাকীত্বের এই অনুভূতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্থায়ী, তাই এটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হয়তো কাজ করবে। তবে যারা দীর্ঘস্থায়ী একাকীত্বে ভুগছেন তাঁদের জন্য হয়তো অন্য কোন সমাধান কার্যকর হতে পারে। যাঁরা একাকীত্বে ভুগছেন তাঁদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন, যে একাকীত্বের এই অনুভূতি সময়ের সাথে চলে যায়। তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা তাঁদের ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে। জরিপে দেখা গিয়েছে, যে একাকীত্বের অনুভূতি সময়ের সাথে অদৃশ্য হয়ে যায়।
৯) প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় কাটিয়ে উঠুন- মানুষকে আপনার সাথে কোন কাজ করতে বলা, বা সাহায্য চাওয়া ভাল অভ্যাস। প্রত্যেকেই এটা ভাবতে চান যে তাদের মতো হয়তো অন্যরাও কোনও কাজের প্রতি সাড়া পেলে খুশি হয়। কিন্তু তাঁদের থেকে কখনও কখনও উত্তর ‘না’ আসতে পারে। আপনাকে এই ‘না’ শোনার ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে। কেউ যদি বলেন, যে সেদিন তিনি ব্যস্ত আছেন, তাহলে আসলেই হয়তো তিনি ব্যস্ত আছেন। তাই হুট করে এটা ভেবে বসবেন না যে তারা আপনাকে এড়িয়ে চলছেন। এটা ঠিক যে, সব সমাধান সবার জন্য কাজ করবে না। একাকীত্বে আক্রান্তদের একেকজন একেকভাবে নিজেদের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন।