কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এই তেরো পার্বণেরই অন্যতম হল নীল ষষ্ঠীর (Nil Sashthi) ব্রত। সন্তানের মঙ্গল কামনায় পালিত হয় এই ব্রত। এতে মা- ষষ্ঠীর পুজোর পাশাপাশি নিবেদন করা হয় মহাদেবকে। সারাদিন নির্জলা উপোস রেখে সন্ধের পর শিবলিঙ্গে জল ঢেলে, মহাদেবের পুজো করে, তাঁর প্রসাদ খেয়ে তবে উপবাস ভঙ্গ করেন। এই বছর নীল ষষ্ঠী পালিত হবে ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে সেদিন ২৯ চৈত্র ১৪২৯। অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির ঠিক আগের দিন পালন করা হয় নীল ষষ্ঠী। তারপরের দিন চৈত্র সংক্রান্তি অর্থাত্ চৈত্র মাসের শেষ দিন। আর তার পরের দিন পয়লা বৈশাখ, অর্থাত্ বাংলা নববর্ষের শুরু।
চৈত্র মাসের নীলষষ্ঠীর ব্রত পালনের রীতি বহুকালের। ব্রতকথায় পুত্রসন্তানের মঙ্গলকামনার কথা বলা হলেও, কন্যা-পুত্র উভয়ের কল্যাণের জন্যই মায়েরা পুজো করে থাকেন। কথিত রয়েছে, একদা এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী ছিলেন। তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। মন দিয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করলেও তাঁদের সব ছেলে-মেয়েগুলি একে একে মারা যায়। এই ঘটনায় ঈশ্বরের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন ব্রাহ্মণী। তাঁরা দুজনে ঘরবাড়ি ছেড়ে মনের দুঃখে কাশীবাসী হন। কাশীতে গিয়ে একদিন গঙ্গায় স্নান সেরে মণিকর্ণিকা ঘাটে বসে আছেন, হঠাত্ই এক বৃদ্ধা ব্রাহ্মণীকে এসে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী ভাবছ মা?’ ব্রাহ্মণী তাঁর সব সন্তানদের অকালে হারানোর দুঃখ প্রকাশ করেন বৃদ্ধার কাছে। এত পুজো-অর্চনা করেও তাঁর সবকিছু বিফলে গেল বলেও শোক করেন তিনি।
আরও পড়ুন:Poyla Baishakh| নববর্ষে কম খরচায় সাজান অন্দরমহল
আসলে ওই বৃদ্ধা আসলে স্বয়ং মা ষষ্ঠী। ষষ্ঠীবুড়ি ব্রাহ্মণীকে বলেন, ‘বারব্রত কখনও নিস্ফল হয় না। ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে ধর্মের পথে অটল থাকলে তার ফল পাবেই।’ ব্রাহ্মণী কখনও নীল ষষ্ঠীর পুজো করেছেন কিনা, তা জানতে চান তিনি। ষষ্ঠীবুড়ি বলেন, ‘চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নির্জলা উপবাস রেখে মহাদেবের পুজো করবে। সেদিন আমিষ ভক্ষণ চলবে না। শরবত খেয়ে উপবাস ভাঙতে হবে। সন্ধেবেলা শিবের ঘরে বাতি দিয়ে তবেই জল খাবে।’ এই কথা বলে মা ষষ্ঠী কোথায় যেন মিলিয়ে গেলেন। তারপর ব্রাহ্মণ- ব্রাহ্মণী বাড়ি ফিরে নীলের ব্রত পালন করল। এরপর তাদের ঘরে এল সন্তান। তারা সুখে সংসার করতে লাগল। সেই থেকেই সন্তানের মঙ্গল কামনা করে নীল ষষ্ঠী পালন করে আসছেন বাঙালি মায়েরা।