কলকাতা: মানুষ মিথ্যা কথা কেন বলে? কেউ হয়তো পরিস্থিতির শিকার হয়ে মিথ্যা বলেন। আবার কেউ অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিথ্যা বলেন। কেউ কেউ প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে মিথ্যা বলেই যান। কারও স্বভাব মিথ্যা বলা। কেউ আবার অভাবে মিথ্যা বলেন। তবে শিশুদের মিথ্যা বলা সাধারণ সমস্যা। শিশুরা কল্পনাপ্রবণ হয় এবং চার বা পাঁচ বছর বয়সের আগে শিশু সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে পারে না। তাই কল্পনার বশবর্তী হয়ে মিথ্যা বলতে পারে কিংবা যেকোনো ঘটনাকে একটু বাড়িয়ে বা অতিরঞ্জিত করে বলতে পারে। প্রথম প্রথম হয়তো খুব হালকাভাবে শিশু মিথ্যা কথা বলা শুরু করলেও একটা সময় পর এটা অভ্যাসে পরিণত হয়।
মনোবিদদের মতে, বকুনি খাওয়ার ভয়ে মিথ্যা বলা দিয়েই এই অভ্যাস বাসা বাঁধে শিশুদের স্বভাবে। কোনও কোনও সময়ে মা-বাবা এই স্বভাবকে অবহেলা করে গেলেও তা পরে বড়সড় আকার ধারণ করে। শুধু তা-ই নয়, কথায় কথায় মিথ্যা বলার এই স্বভাব শিশুর জীবনেও নানা ক্ষতি করে, ছোট থেকেই তা রুখে না দিলে এই অভ্যাস খুব বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ সন্তান একবার যদি মিথ্যার ফাঁদে জড়িয়ে যায় সেখান থেকে তাকে বের করে নিয়ে আসাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়। এক্ষেত্রে এই কয়েকটি কৌশলেই সমস্যার সমাধান করে ফেলুন। দেখে নিন কী কী করবেন-
১) নীতি শিক্ষার বিকল্প নেই- ছোটদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব বাবা-মায়ের। তাই একদম ছোট বয়স থেকেই সন্তানকে নীতির পাঠ দিন। নীতিকথার বই কিনে তার হাতে তুলে দিন। এই বই থেকেই সে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার পথ শিখতে পারবে। এমনকী তার মিথ্যে বলার প্রবণতাও ধীরে ধীরে কমে যাবে। তবে সমস্যা একটাই, প্রথম প্রথম বাচ্চারা নিজের ইচ্ছায় এই ধরনের বই নাও পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকেই দায়িত্ব নিয়ে তাকে গল্প পড়ে শোনাতে হবে। এর মাধ্যমেই শিশু মনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
২) নিজেদের বদলে ফেলুন- ছোটরা তাদের চারিপাশে যা দেখে, যা শোনে তাই শেখে। তাই ছোটদের সামনে মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস আপনাদের ত্যাগ করতে হবে। কারণ বাবা-মায়ের এই কুঅভ্যাসই বাচ্চাকে মিথ্যে বলার মতো কাজে সাহস জোগায়। তাই সবার আগে নিজেদের আচরণে বদল আনার চেষ্টা করুন। এই কাজ করতে পারলে সন্তানের পাশাপাশি নিজেরও উপকার হবে।
৩) বুঝিয়ে বলতে হবে- সন্তান কথায় কথায় মিথ্যা কথা বললে খুব রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে এই পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে চিৎকার না করে বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। তাই এখন থেকেই সন্তানকে মিথ্যা বলার খারাপ দিকগুলি সম্পর্কে অবগত করার চেষ্টা করুন। নিয়মিত মিথ্যা কথা বললে তাকে সকলেই অবিশ্বাসের নজরে দেখবে, এটা তার মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হবে। তাহলেই দেখবেন সন্তানের মিথ্যা বলার প্রবণতা কমেছে।
৪) পুরস্কারের টোপ দিতে হবে- ছোটরা পুরষ্কার বা উপহার পেতে খুব ভালোবাসে। আর তাঁদের এই প্রবৃত্তিকেই সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে তাকে বলতে হবে, তুমি যদি আজ সারাদিন একটাও মিথ্যা কথা বলবে না। তাহলে তোমায় একটা বড় চকোলেট দেব। দেখবেন চকোলেট বা তার পছন্দ মতো কোনও জিনিস উপহার হিসাবে পাওয়ার জন্য সন্তান সারাদিন সত্যি কথাই বলবে। আর এই কৌশলে ধীরে ধীরে তার মিথ্যে বলার প্রবণতাও কমে যাবে।
বিপদের নাম এডিএইচডি- এডিএইচডি একটি মানসিক সমস্যা। এক্ষেত্রে আক্রান্ত শিশু কথায় কথায় মিথ্যা বলে। এমনকী এদের মেজাজও সবসময়ই থাকে সপ্তমে। তাই শিশুর মধ্যে এই ধরনের কোনও লক্ষণ দেখা দিলে যত শীঘ্রই সম্ভব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনিই আপনাকে এই সমস্যা থেকে বেরনোর রাস্তা দেখাবেন। এক্ষেত্রে কয়েকদফা কাউন্সেলিং ও বিহেভিয়ারাল থেরাপি করলেই সুফল মিলবে।