এই গরমে টানা তিরিশ দিন রমজানের(Ramzan) উপোস রাখা সহজ ব্যাপার নয়। বিশেষ করে যারা ডায়বিটিসের(diabetes) মতো রোগে ভুগছেন তাদের এই সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন। এই তিরিশ দিন উপোস শেষে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকা এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই এই ক’দিন নিয়ম মেনে এই কাজগুলো করলে রমজানের উপোস রক্ষাও হবে আবার শরীর ও খারাপ হবে না। যেমন-
ডায়বিটিস ম্যানেজমেন্ট
ডায়বিটিসে উপোস রাখা অনেকটা সরু দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার মতো পরিস্থিতি কারণ রমজানে একটানা দশ থেকে বারো ঘণ্টার উপোস রাখতে হয় । একটু এদিক-ওদিক হলেই বিপদ। তাই উপোসের এই কটা দিন রক্তে যাতে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে তা নিয়মিত মনিটর(regular monitoring) করতে হবে। দেখতে হবে যাতে গ্লুকোজের মাত্রা(glucose level) নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওঠানামা(fluctuating glucose levels) করলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
আজকাল বাড়িতেই এই মনিটরিংয়ের(monitoring) কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে নানা রকমের গ্লুকোজ মনিটরিং ডিভাইস(glucose monitoring device)। এই সব যন্ত্রের সাহায্যে ২৪ ঘণ্টার গ্লুকোজ প্রোফাইল(24 hours glucose profile) সহজেই পাওয়া যায়।
নিত্যনতুন যে সব যন্ত্র বেরিয়েছে তাতে আর বার বার আঙুল ফুটিয়ে টেস্টের প্রয়োজনে পড়ে না। এগুলি ব্যবহার করলে এই উপোসের শরীরে ব্যাথ্যাও পেতে হবে না। বেশ কিছু ওয়্যারেবলস(wearables) আছে যা রিয়েল টাইম গ্লুকোজ রিডিং দেয়(real time glucose reading)। এগুলোতে গ্লুকোজ মনিটরিংয়ের আগের পদ্ধতির তুলনায় তাড়াতাড়ি রিডিং জানা যায়। সেহরির সময় যাতে গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সুষম আহারের প্রয়োজন
রমজানের সময় অনেক খাবার খাওয়া যায় না তাই ডায়বিটিস রোগীরা ইফতার ও সেহরির সময় কী কী খাবেন আর অসুখের জন্য কোন খাবার তাদের এড়িয়ে যেতে হবে তা নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে হবে যাতে কোনও রকম অনিয়মের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা (glucose level) পরিবর্তন না হয়।
ইফতার ও সেহরির জন্য এই ভাবে পরিকল্পনা করুন
ইফতারের(Iftaar) খাওয়া এমন খাবার দিয়ে শুরু করুন যেগুলিতে প্রচুর পরিমাণে সহজ পাচ্য কার্বোহাইড্রেট(simple carbohydrates) রয়েছে যেমন একটা কিংবা দুটো খেজুর(dates) ও দুধ(milk) খেতে পারেন। এর পর কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট(complex carbohydrates) যেমন ব্রাউন রাইস ও রুটি খেতে পারেন।
সেহরির(Sehri) সময় গোটা শস্য ও সবজি খেতে পারেন। আর যত দেরি করে খেতে পারেন ততই ভাল। চাইলে লিন প্রোটিন(lean protein) যেমন মাছ, টোফু ও বাদাম খেতে পারেন এগুলি শরীরে শক্তি জোগায়।
উপোসের সময় রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ কিংবা ফল খেতে পারেন এর ফলে সকাল পর্যন্ত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যেস থাকলে
ডায়বিটিস রোগীরা শরীর ঠিক রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করে থাকেন। রমজানের সময় এই উপোসের শরীরে শরীরচর্চা একেবারে বন্ধ না করলেও ওয়ার্কআউটের ইনটেনসিটি(reduce workout intensity) কমিয়ে দিতে হবে। আরও ভাল হয় যদি ওয়ার্কআউটের বদলে সকালে বা বিকেলে কিছুক্ষণ হেঁটে নেন। যোগব্যায়াম(yoga) করতে পারেন। শরীর ভাল রাখবে। রমজানের উপোসের সময় শরীরে ক্যালোরির ঘাটতি(calorie deficit) হয় এই সময় শরীরচর্চা করলে এতে মাংশপেশির ক্ষতি হতে পারে।
ঘুমের ধরণ
শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম কম হলে তার প্রভাব পড়ে খিদে নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ওপর। এ রকমটা হলে হাই ক্যালোরি(high calorie) খাবারের দিকে ঝোঁক বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এই খাবার ইচ্ছে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলেই বিপদ। এই ঘুম মেটাবলিক প্রসেস বা পাচনক্রিয়ার জন্য ভীষণ কার্যকরী। পাচনক্রিয়া ভাল হলে রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে যা ডায়বিটিস ম্যানেজমেন্টের অন্যতম একটা দিক।
তবে এর পরও যদি গ্লুকোজ লেভেল অনিয়মিত হয়ে পড়ে তা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন এবং তার পরামর্শ মতো কাজ করুন।