কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) ছিলেন ডঃ বিধানচন্দ্র রায় (Dr Bidhan Chandra Roy )। প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পর পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীর পদে অভিষিক্ত হন তিনি। বিধান রায় যেমন ছিলেন রাজ্যের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী, তেমনি তিনি একজন সুচিকিৎসকও ছিলেন। যিনি মহাত্মা গান্ধীর চিকিৎসক হিসেবেও স্বনামধন্য ছিলেন। ফলে তাঁর জন্মদিন চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তিনি বিশিষ্ট সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গকে এক সমৃদ্ধশালী রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলেন বিধানচন্দ্র রায়। আজকের নবীন প্রজন্ম হয়তো জানেন না আজকের সল্টলেক তাঁর নিজের হাতে গড়া। চলুন জেনে নেওয়া জাক সেই ইতিহাস।
সবে সবে দেশভাগ হয়েছে। ওপার বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাঁধভাঙ্গা স্রোতের মতো হাজির হচ্ছেন সীমান্ত পেরিয়ে। বনগাঁ, হাবড়া, যাদবপুর, বাঘাযতীনে অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। তবুও বিশাল সংখ্যক শরণার্থী মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে থাকা বিধান রায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ গভীর করে তুলল। একদিন তলব করলেন বিশ্বস্ত সহচর প্রফুল্ল সেনকে। বললেন, পূর্ব কলকাতায় অনেক জলা জমি-ভেড়ি আছে, সেগুলি বুজিয়ে ফেলতে হবে।’ একথা শুনে অবশ্য প্রফুল্ল জানিয়েছিলেন, ‘সেটা কী করে সম্ভব? পুরো জায়গাটাই তো আমাদের হেমদার।’ হেমচন্দ্র নস্কর তখন কংগ্রেসের দাপুটে নেতা এবং বিধান রায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। বিধান রায়ের আদেশ পেয়েই হেমচন্দ্র নস্করের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন প্রফুল্লবাবু। কিন্তু তাঁকে জমি নেওয়ার কথা বলার সাহস পেলেন না। বরং হেম নস্করকে একরকম পাকড়াও করে নিয়ে গেলেন বিধান রায়ের কাছে।
আরও পড়ুন:Dr Bidhan Chandra Roy | ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের স্মরণে কেন ডাক্তার দিবস উদযাপন করা হয়, জানুন আসল কারণ
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢুকেই হেমচন্দ্র বললেন, ‘মাছ লাগবে তো? ঠিক আছে বড় মাছ পাঠিয়ে দেব।’’ বিধান রায় তখন সঙ্কোচ ভেঙ্গে বলেই ফেললেন, ‘না না, মাছের কথা বলছি না। আমরা পূর্ব কলকাতায় একটা নতুন উপনগরী করতে চাইছি। তার জন্য আপনার ওই ভেঁড়িগুলো বুজিয়ে ফেলতে চাই।’ একথা শুনেই আপত্তি জানান হেম নস্কর। কিন্তু বিধান্রায় বলেন, ‘ওই জমি না থাকলেও আপনার দিব্যি চলে যাবে। ওই জমির যা মূল্য তা দেওয়ার মতো টাকা সরকারের কাছে নেই। তবে একেবারে বিনামূল্যে নেব না। এক টাকা দেব।’ যদিও আগে থেকেই সব কিছু গুছিয়ে রেখেছিলেন বিধানবাবু। এরপর ঘরে ঢুকলেন মুখ্যসচিব। হাতে জমি হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। মুখ্যমন্ত্রীর জেদের কাছে হার মেনে সই করতে হল নির্বিরোধী, সজ্জন মানুষ হিসেবে পরিচিত হেমচন্দ্র নস্করকে। সই-সাবুদ হতেই শুরু হয়ে গেল লবন হ্রদ নগরী গড়ে তোলার কাজ। সর্বস্ব হারিয়ে, ভিটে মাটি ছেড়ে ওপার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তু মানুষগুলির মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছিলেন বঙ্গ রাজনীতির মহানায়ক। যদিও জীবদ্দশায় স্বপ্নের লবন হ্রদ নগরী দেখে যেতে পারেননি তিনি। মৃত্যুর পর তাঁর সম্মানে কলকাতার সন্নিকটস্থ উপনগরী সল্টলেকের নামকরণ করা হয় বিধাননগর।