দিনভর মন খারাপের বৃষ্টি, নোংরা জমা জল, কাদা প্যাচপেচে রাস্তা, সব পেরিয়ে বাড়ি ফেরার হাজারো ঝক্কি-ঝামেলার শেষে প্রয়োজন ক্লান্ত শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে নেওয়া। শহর কলকাতার বর্ষাকালের এটা চেনা ছবি। তাই বাড়ি ফিরে খারাপ মন ও ক্লান্ত শরীর চাঙ্গা করতে হাতে তুলে নিন আপনার পছন্দের গরম পানীয়। সঙ্গে থাকুক পছন্দের গান। ফোন বরং দূরেই রাখুন, চোখেরও তো আরাম প্রয়োজন। যে বৃষ্টি সারাদিন আপনাকে এত হয়রান করেছে, এ বার সেই বৃষ্টিকেই উপভোগ করুন প্রতিটি চুমুকে। বৃষ্টি ভেজা সন্ধে উপভোগ করতে ধূমায়িত এক কাপ চা বা কফির কোনও বিকল্প হয় না। তবে চেনা এই স্বাদের হাল্কা বদল হলে কেমন হয়? চেনা কাপের চেনা স্বাদে টুইস্ট আনুন এ ভাবে-
মশালা চা- বর্ষাকালে চিরাচরিত ব্ল্যাক টি বা লিকার চায়ের বদলে এক কাপ মশালা চা মন্দ লাগবে না। মহারাষ্ট্রের জনপ্রিয় এই চা শুধু যে স্বাদে তা নয়, স্বাস্থ্যের পক্ষেও সমান কার্যকরী। এই চা তৈরি করতে লাগবে দারুচিনি, এলাচ, আদা বাটা, কালো মরিচ ও লবঙ্গ। চাইলে এতে দুধ দিতেও পারেন৷ তবে দুধে সমস্যা থাকলে দুধ ছাড়া খেতেও বেশ লাগবে। এক চুমুকেই চনমনে হয়ে উঠবে মন প্রাণ।
চুক্কি কাপ্পি – শুকনো আদা দিয়ে তৈরি এই কফি দক্ষিণে বেশ জনপ্রিয়। বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা লাগলে এই কফি খুবই উপকারী। ডিটক্স ও হজমের ক্ষেত্রেও এটি সমান কার্যকরী। খেজুরের গুড়, ধনে, এলাচ, লবঙ্গ, গোলমরিচ, বড়মরিচ আর শুকনো আদা দিয়ে তৈরি করা হয় এই চুক্কু কাপ্পি। তামিল ভাষায় আদাকে চুক্কু বলা হয়। তাই এই সবকটি উপকরণ মিলে যে কনকাকশনটা তৈরি হয় তাকে বলা হয় চুক্কু কাপ্পি।
কাবা- বিশেষ ধরনের গ্রিন টি-র সঙ্গে এলাচ, জাফরান, দারুচিনি ও দুষ্প্রাপ্য কাশ্মীরি গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি করা হয় কাশ্মীরের এই বিশেষ চা কাবা। কাশ্মীরের অত্যন্ত জনপ্রিয় এই চা। কাবা তৈরি হয়ে গেলে ওপর থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় আমন্ড ও কাঠবাদাম। হাল্কা, সুগন্ধিত এই কাবার এক চুমুকেই জুড়িয়ে যাবে শরীর ও মন।
তুলসী কাপ্পি- চুক্কু কাপ্পির মতই চমকপ্রদ দক্ষিণের এই তুলসী কাপ্পি। শুধু একটা উপকরণ ছাড়া এই দুই কফি বানানোর পদ্ধতি এক। এই কফির প্রধান উপকরণ তুলসী। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই তুলসীর পাতার নির্যাস ও কফির এই মিশেল বেশ উপকারী। তুলসীর অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি, ও অ্যান্টিফাঙ্গাল কার্যকরিতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কফি যদি আপনার অত্যন্ত পছন্দের হয় তা হলে অন্তত একবার এক পেয়ালা তুলসী কাপ্পি বানিয়েই দেখুন কেমন লাগে।
লেমন জিঞ্জার টি- লেবুর ২-৩টি ছোট টুকরো, এক ইঞ্চি আদার টুকরো আর মধু, ব্যাস এই তিনটে হলেই দারুন রিফ্রেশিং লেমন জিঞ্চার টি রেডি। সকালে, অফিসে লাঞ্চ-ব্রেকের পর বা বাড়ি ফিরে এক পেয়ালা গরম লেমন জিঞ্জার টি, সবসময় এই চা পার্ফেক্ট।
লেমনগ্রাস টি- মিষ্টি নয় হালকা তিতকুটে স্বাদের এই লেমনগ্রাস টি যাঁরা দার্জিলিং টি পছন্দ করেন তাঁদের বেশ ভালই লাগবে। বিশেষ ভারী কিছু খাবার পর তা লাঞ্চ বা ডিনারের পর দারুণ কাজে দেয় এই লেমনগ্রাস টি। চাইলে বাড়িতেই এই লেমনগ্রাসের চারা বড় করতে পারেন আপনি।
সিনেমন হট চকোলেট- আহ! এই ভেজা আবহাওয়ায় হট চকোলেট যেন স্বর্গীয় সুখ। তবে বাজার থেকে যতই ইনস্ট্যান্ট হট চকোলেট খান না কেন, হট চকোলেটে খাওয়ার আসল মজা নিজে হাতে তৈরি করে নেওয়া। আর তা ছাড়া কাজটা তেমন কিছু কঠিনও নয়। এক স্কুপ কোকো পাউডার, এক কাপ দুধ, সিনেমন স্টিক বা দারুচিনি, এক চিমটে জায়ফলগুঁড়ো ও ন্যাচারাল সুইটনার, ব্যাস এই কটি উপকরণ দিয়ে বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন এই চকোলেটি ড্রিংক। এই আনন্দ ভাগ করে নিন প্রিয়জনেদের সঙ্গে, জমে উঠুক বৃষ্টির বিকেল।