কলকাতা: কথায় বলে বাঙালি ভ্রমণপিপাসু। দীর্ঘ কর্মব্যস্ততার মাঝে একটু ছুটি পেলেই বেরিয়ে পোড়েন কোনও অজানার উদ্দেশে। সে পাহাড় হোক ব সমুদ্র অথবা জঙ্গল। আর সমুদ্র হলে তো কোনও কথাই নেই। প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দিঘা-পুরীর সমুদ্রের কোথা। যতদূর চোখ যায়, ঠিক যেখানে জল আর আকাশ একসঙ্গে মিশে গিয়েছে সেই জায়গায় অন্ধকার সরিয়ে প্রথম ভোর হয়। আর বর্ষার সময় তো সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। হোটেল পাওয়া বেশ মুশকিলের হয়ে দাঁড়ায়। যদিও এখন দিঘার পাশাপাশি মন্দারমণি, তাজপুর, জনপুটের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে। এগুলি ছাড়া আরও একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে পরিবারের সঙ্গে নিরিবিলিতে একটা উইকএন্ড কাটাতে পারবেন। ঘুরে আসুন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাঁকিপুট সমুদ্র সৈকত থেকে। গুগলে যদি ‘ভার্জিন বিচ অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ লিখে সার্চ করেন, তখন উঠে আসবে এই বাঁকিপুটের নাম।
বাঁকিপুট সমুদ্র সৈকত নতুন কোনও সি বিচ নয়। কিন্তু তেমন ভিড় হয় না বাঁকিপুটে। জুনপুট থেকে ৩ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে এই সমুদ্র সৈকত। বাঁকিপুটের নির্জনতা আর সৌন্দর্যর টানেই আজকাল পর্যটকরা এখানে ভিড় করেন। পূর্ব মেদিনীপুরের স্বল্প পরিচিত এই সমুদ্র সৈকত হতে পারে আপনার মনসুন ডেস্টিনেশন। সারিবদ্ধ ঝাউবন, সেখানে পাখির ডাক আর শান্ত সমুদ্রতট। কান পাতলে সমুদ্রের ঢেউ আর ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া সেরকম কিছু শোনা যায় না। আর বালুচর জুড়ে রয়েছে লাল কাঁকড়ার ভিড়। বঙ্গোপসাগরের তীরে এমন নিরিবিলি সমুদ্রতট রয়েছে, বাঁকিপুট না গেলে তা বিশ্বাস করা কঠিন। বাঁকিপুটে একবার ঢুকে পড়লে আপনি শহুরে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। আর এ কারণেই বাঁকিপুট ‘ভার্জিন বিচ’।
মোহনার খুব কাছেই বাঁকিপুট অবস্থিত। তাই জোয়ার এলেই ফুলে ফেঁপে ওঠে সমুদ্রে জল। ভাঁটা থাকলে বাঁকিপুট খুব একটা ভাল লাগবে না। তখন সমুদ্রের জল সৈকত থেকে অনেকটাই সরে যায়। ফলে সৈকত বেশ খানিকটা কাদা কাদা হয়ে থাকে। খালি পায়ে এখানে হাঁটলে ছোটবেলার স্মৃতিতে ডুব দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন:The Kerala Story | বক্সঅফিসে সুপারহিট,অথচ ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-তে আগ্রহী নয় কোনও ওটিটি
এসব ছাড়াও বাঁকিপুটে রয়েছে প্রাচীন বাতিঘর। বাঁকিপুট থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন ব্রিটিশ আমলে তৈরি দরিয়াপুরের ৯৬ ফুট বাতিঘর। বিকেলে সেই বাতিঘরে উঠে আপনি উপভোগ করতে পারবেন বাঁকিপুটের সৌন্দর্য। এছাড়া বাঁকিপুট থেকে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত কপালকুন্ডলা মন্দির। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের এই মন্দির ভগ্নদশায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু পুরনো ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে ঘুরে আসতে পারেন এখান থেকে।
কীভাবে যাবেন- কলকাতা থেকে ৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে যেতে হবে বাঁকিপুট। দিঘা, কাঁথি পেরিয়ে বাঁকিপুট। কাঁথি থেকে বাঁকিপুট প্রায় ১৩ কিলোমিটারের পথ। ট্রেনে গেলে আপনাকে নামতে হবে কাঁথিতে৷ সেখান থেকে রিকশা বা টোটোয় চেপে পৌঁছে যান বাঁকিপুট। বাঁকিপুটে রাত কাটার জন্য ট্যুরিস্ট লজ, হোটেল পেয়ে যাবেন। সেখানে ঘরভাড়া ১,২০০টাকা থেকে শুরু। রয়েছে খাওয়ার ব্যবস্থাও।