মঙ্গলবার দুপুর ২টোয় নারদ মামলার শুনানি শুরু হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। রাজ্যের ৪ নেতা মন্ত্রীর জামিন পুনর্বিবেচনার এই হাইভোল্টেজ মামলা ভার্চুয়াল শুনানি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানির শুরুতেই সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা সওয়াল করেন। তিনি তাঁর সোয়ালে বলেন, ‘নারদ মামলার তদন্তে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’ এর পালটা বিচারপতির প্রশ্ন, ‘করোনার সময় কি অভিযুক্তদের জেলে রাখা প্রয়োজন?’ উত্তরে আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, ‘অভিযুক্তরা জেলে নেই, হাসপাতালে আছেন।’ অন্যদিকে, আইনজীবী তুষার মেহেতাকে হাই কোর্টের বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘তদন্ত চলাকালীন এই চারজন কি তদন্তে সহযোগিতা করেননি, এমন কোনও অভিযোগ আছে কি?’
এরপর অভিযুক্তদের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, ‘না জানিয়ে মামলা করা হল কীভাবে? সিবিআই নানা কৌশলে তাঁদের জেলে ঢোকাতে চাইছে। ৭৫ বছরের বেশি বয়স সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। কোভিডের সময় এভাবে আটকে রাখা যায় না।’ সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা জানান, সেদিনের বিশৃঙ্খলা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ছিল। নিজামে প্রচুর মানুষ এসে ভিড় করেছিলেন। অফিসারদের পক্ষে তাই বাইরে আসা সম্ভব হয়নি। বেআইনি ভাবে ভিড় করে বিক্ষোভ দেখানোয় পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে যায়।’ মুখ্যমন্ত্রীর নিজাম প্যালেসে হাজির হয়ে ‘আমাকেও গ্রেফতার করুন’ মন্তব্যও এদিন আদালতের সামনে তুলে ধরেন আইনজীবী তুষার মেহতা। গ্রেফতার চার প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীর প্রভাবশালী তকমায় এখনও অনড় সিবিআই। এমন নজির আগে দেখা যায়নি বলেও উল্লেখ করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। এর পালটা অভিষেক মনু সিংভি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর জন্য অশান্তি হয়নি। বরং তিনি এবং অন্য বিধায়করা অশান্তির বিরোধিতা করেছেন। দলীয় কর্মীদের বার বার শান্ত থাকতে বলেছেন তাঁরা। কোনও প্ররোচনা দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর সহকর্মীরা গ্রেফতার হওয়ায় তিনি ছুটে গিয়েছিলেন নিজাম প্যালেসে।’ যা নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন অভিষেক মনু সিংভি। অভিষেক মনু সিংভির সওয়ালের উত্তরে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, মুখ্যমন্ত্রী তো অল্প সময়ের জন্য যাননি। ৫-৬ ঘন্টা ছিলেন সেখানে। পাশাপাশি, তাঁদের আরও প্রশ্ন, ‘কেন শুনানি চলাকালীন নিম্ন আদালতে ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী?’
অপর আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আইনমন্ত্রী সেদিন আদালতের ভেতরে ছিলেন না। আমি নিজে আদালতে সওয়াল করেছিলাম। সেই সময় এজলাসের ভেতরে আইনমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। আইনমন্ত্রী এজলাসের বাইরে কোর্ট কম্পাউন্ডে ছিলেন।’ অভিষেক মনু সিংভি বলেন, ‘আইনমন্ত্রী কোর্ট কম্পাউন্ডে উপস্থিত থাকলে সেখানে বিচারকের ওপর কি প্রভাব পড়তে পারে? এটাতো ন্যাচারাল বিষয়!’
বিচারপতি বলেন, ‘মিস্টার সিংভি ইট ইজ নট ন্যাচারাল
পাল্টা অভিষেক মনু সিংভি বলেন, ৪১ নোটিশ দেওয়া হয়নি
বিচারপতিরা প্রশ্ন করেন, লিডাররা কেনো উপস্থিত ছিলেন? মনু সিংভি বলেন, লিডাররা কোনও অবস্ট্রাকশন করেননি। মুখ্যমন্ত্রী এবং যে সব সিনিয়র লিডাররা ছিলেন কিন্তু সকলকে সংযত হবার বার্তা দিয়েছেন। সুতরাং তাঁরা প্রশ্রয় দেননি।
বিচারপতি জানতে চান, বিক্ষোভ নিয়ে কি বলবেন?
মনু সিংভি, আমরা প্রত্যেকেই আইন মেনে আইনি লড়াই করেছি। বিক্ষোভ করেছে। আইন এবং গণতন্ত্র দুটো পাশাপাশি চলে অর্থাৎ মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার মেনে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। দুটো একসঙ্গে চলা উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয় মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন যে কোনো রকম উত্তেজনা সৃষ্টি নয়। উভয় পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর ৫ মিনিটের বিরতি নেন বিচারপতিরা। পরে জানান আজকের মতো শুনানি শেষ। আগামীকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোর সময় ফের শুনানি হবে। আজকেও অভিযুক্ত ৪জনকেই জেলে কাটাতে হবে।
এখন দু পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে আগামীকাল কি রায় দেন বিচারপতিরা তার দিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী।