নয়াদিল্লি: বিহারের গ্যাংস্টার-নেতা আনন্দ মোহন সিংকে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই মুক্তি দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিহার সরকারকে নোটিস দিল সুপ্রিম কোর্ট। আনন্দ মোহনের মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে একটি আবেদনের ভিত্তিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৪ সালে বিহারের গোপালগঞ্জের জেলাশাসক জি কৃষ্ণাইয়াকে গণপ্রহারে খুন করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন আরজেডি-র প্রাক্তন এমপি আনন্দ মোহন। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং জে কে মাহেশ্বরীর বেঞ্চ একজন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসারেরও অন্য একটি আবেদন গ্রহণ করে।
সুপ্রিম কোর্টে মূল আবেদনটি করেন উমা কৃষ্ণাইয়া। তিনি নিহত জেলাশাসকের স্ত্রী। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশে খুশি উমা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় আমরা খুশি। বিহার সরকার ও অন্যান্য ব্যক্তিকে নোটিস দিয়েছে আদালত। ২ সপ্তাহের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আমরা আশা করি সুপ্রিম কোর্টে সুবিচার পাব, বলেন উমা।
আরও পড়ুন: Anubrata- Sukanya Tihar | ঈশ্বর যেন মেয়েটাকে জামিন দেন, কাতর প্রার্থনা কেষ্টর
জেলাশাসক খুনের দায়ে আনন্দ মোহনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেয় আদালত। ১৪ বছর জেল খাটার পর গত ২৪ এপ্রিল বিহার সরকার আইন বদল করে তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করে। হই-হট্টগোল এড়াতে গোপনে দিনের আলো ফোটার আগেই জেল (Jail) থেকে মুক্তি দেওয়া হয় কুখ্যাত গ্যাংস্টার (Gangster) থেকে রাজনীতিক হওয়া বন্দি আনন্দ মোহন সিংকে (Anand Mohan Singh)। যদিও বিধায়ক-পুত্র চেতন আনন্দের (MLA Chetan Anand) আংটি বদল অনুষ্ঠান উপলক্ষে ৬৯ বছর বয়সি প্রাক্তন লোকসভা সদস্য (Former MP) আনন্দ প্যারোলে (Parole) মুক্তই ছিলেন তখন। তা সত্ত্বেও সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও হুড়োহুড়ি এবং লোকচক্ষুর নজর এড়াতে ভোররাতে তাঁকে সরকারিভাবে মুক্তি দেওয়া হয়।
বহু ওজরআপত্তি সত্ত্বেও আনন্দ মোহনকে মুক্তি দিতে আইন বদল করে বিহারের জেডিইউ-আরজেডি সরকার (Bihar Government)। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ফের সক্রিয় রাজনীতিতে পা দিতে চলেছেন আনন্দ মোহন।
১৯৯৪ সালে গোপালগঞ্জের জেলাশাসক জি কৃষ্ণাইয়াকে (Gopalganj DM G Krishnaiah) একদল দুষ্কৃতী খুন করে। তিনিও ওই খুনে জড়িত ছিলেন বলে ২০০৭ সালে দোষী সাব্যস্ত হন আনন্দ মোহন। তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পাটনা হাইকোর্টেও (Patna High Court) তাঁর সাজা বহাল থাকে। এবছরের ১০ এপ্রিল বিহার সরকার কারা আইনে সংশোধন এনে তাঁর সাজা মকুবের পথ প্রশস্ত করে। যুক্তি হিসেবে বলা হয় ১৪ বছর সাজা কাটানো বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এর আগে এই আইনে ২০ বছর পর্যন্ত জেলের মেয়াদ ছিল।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সহর্ষের পাচগাছিয়ায় পৈতৃকবাড়িতে ফেরেন আনন্দ মোহন। সেখান থেকে তিনি বলেছিলেন, কৃষ্ণাইয়া এবং তাঁর পরিবার এই দুঃখজনক ঘটনার শিকার হয়েছিলেন জনরোষের ফলে। একইসঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ফের সক্রিয় রাজনীতিতে ব্যাট হাতে নামতে চলেছেন। তাঁর কথায়, ভবিষ্যতে কী করব, তার জন্য পুরনো বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে বসে ঠিক করব। তিনি আরও বলেন, আমি ইতিমধ্যেই আমার পরিকল্পনা জানিয়েছি। অদৃষ্টের লিখনে সাড়ে ১৫ বছর জেল কাটিয়েছি। তা সত্ত্বেও আমি হিম্মত হারাইনি। জেলে বসেই আমি ৬টি বই লিখেছি।
তিনি প্যারোলে মুক্ত থাকলেও সরকারিভাবে মুক্তি পাওয়ার জন্য জেলে চলে আসেন। কাগজপত্রে সই করেই বেরিয়ে যান তিনি। মোহনের মুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই তাঁর অনুগামীরা জেলের সামনে এসে স্লোগান দিতে থাকেন। কিন্তু, তাঁরা যখন জানতে পারেন মোহন ইতিমধ্যেই মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন, তখন তাঁরা গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। সহর্ষ শহরে আনন্দ মোহনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির লাইন পড়ে যায়। পুলিশও এসকর্ট করার জন্য প্রচুর গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।