কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: পথ চলা শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। ঠিক ছিল, এটা তৈরিতে কোনও ভাবেই বিদেশের কাছে হাত পাতবে না। সাত বছরের বেশি সময়ের সেই লড়াই অবশেষে বাস্তব রূপ পেতে চলেছে। স্বপ্ন সফল হতে চলেছে বাংলা-বাসীদের। আজ শনিবার, ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে চলেছে। ওপারের সাধারণ মানুষ থেকে গণ্যমান্য সক্কলে এক কথায় বলছেন, গৌরব আর আত্মমর্যাদার প্রতীক এই পদ্মা সেতু। সেতু তৈরির টাকা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই ঘোষণা, নিজেদের টাকায়ই পদ্মা সেতু তৈরি হবে। অবশেষে বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, জনগণের টাকায় পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়েছে! আর তাই সেতু উদ্বোধনের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা আওড়ে ওপার বাংলার মানুষজন বলছেন, ‘মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না’।
২০১০ সাল থেকে সেতুটির পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ সরকার। প্রথমে এই সেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্য করার কথা ছিল । শেষ মুহূর্তে বিশ্ব ব্যাঙ্ক বেঁকে বসে। পদ্মা সেতু নিয়ে বাংলাদেশে বড় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। নাম জড়ায় বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। দুর্নীতির কারণ দেখিয়েই বিশ্ব ব্যাঙ্ক জানিয়ে দেয় তারা এই প্রকল্প রূপায়ণের কাজ থেকে সরে আসতে চায়। মাথায় হাত পড়ে । শেষে ২০১৫ সাল থেকে নিজের টাকায় পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে শেখ হাসিনা সরকার। এরই মধ্যে কানাডার ফেডারেল কোর্টের রায়ে বিশ্ব ব্যাঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
পদ্মা সেতুকে জলের মধ্যে ধরে রাখবে ৪০টি পিলার বা স্তম্ভ। প্রত্যেকটিই তৈরি হয়েছে মজবুত ইস্পাত দিয়ে। পাশাপাশি এই পিলারের আর একটি বিশেষত্ব রয়েছে। জলের নীচে ১২২ মিটার পর্যন্ত গভীরে গিয়েছে এই পিলারের ভিত। পৃথিবীর আর কোনও দেশে আর কোনও সেতুর স্তম্ভ এত গভীরে নেই। নিরাপত্তার আর একটি ব্যবস্থা পদ্মা সেতুর মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। পদ্মা সেতুর ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ পৃথিবীর অন্য সব সেতুর চেয়ে অনেক বেশি। প্রায় ১০ হাজার টন। এই ক্ষমতায় এই সেতু রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও অনায়াসে টিকে যাবে।
প্রায় সাড়ে ছয় কিলেমিটার দীর্ঘ সেতু নদীর কাছাকাছি হলেও রেল ব্রিজ থেকে জলের দূরত্ব থাকবে অন্তত ১৮ মিটারের। এটি আসলে দোতলা সেতু। এর একতলায় অর্থাৎ নদীর কাছাকাছি চলবে ট্রেন। সামান্য উপরে চার লেনের চওড়া রাস্তায় চলবে সব রকম গাড়ি। প্রায় ১০ হাজার কোটি বাংলাদেশি মুদ্রা খরচ করে তৈরি হওয়া এই পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি)কে এক ধাক্কায় ১.২ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারবে বলে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তবে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, ২৫শে পদ্মা সেতুর সড়ক পথ খুলে দিলেও রেলব্রিজটি শেষ হতে আরও ক’দিন সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: Arunava Ghosh: আমি জেলে যেতেও রাজি আছি, মন্তব্য অরুণাভ ঘোষের
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে লেখক-আমজনতা সবাই শনিবারের দিনটা নিয়ে মেতে থাকতে চান। স্বপ্নে বিভোর থাকতে চান। কারণ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের উপরে গিয়ে সবার কাছে দিনটা আসলে গর্বের। আর তাই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলছেন, “পদ্মা সেতু আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে অক্ষয় মেলবন্ধন তৈরি করেছে। এই মেলবন্ধন বাংলাদেশের রাজনীতি আর সমাজে সম্ভব না হয়তো। এই সেতু চালু হওয়ার আনন্দে শামিল হতে পারি আমরা সবাই। তাদের নেত্রীকে নিয়ে কটু কথা বলার কারণে পদ্মা সেতুর অনুষ্ঠান বর্জন করেছে বিএনপি। আশা করব তারা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে এবং পদ্মা সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দিত করবে।”