আরএসএস প্রধান (RSS chief) মোহন ভাগবতের (Mohan Bhagwat) মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠককে ঘিরে দেশের অন্য মুসলিম নেতারা দ্বিধাবিভক্ত। সম্প্রতি সরসঙ্ঘ চালক ভাগবত দু দফায় বেশ কয়েকজন মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যাকে কেন্দ্র করে তামাম ভারতীয় মুসলিম সমাজ নড়েচড়ে বসেছে। কেউ কেউ এই পদক্ষেপকে সময়োপযোগী বলে স্বাগত জানিয়েছে।
অন্য পক্ষ আবার ভাগবতের ভ্রাতৃত্ববোধকে লোকদেখানো বলে সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, ভাগবত যাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, তাঁরা যথার্থভাবে মুসলিম সমাজের মাতব্বর নন। যাদের পিছনে গোটা দেশের মুসলিমরা রয়েছেন, যে নেতাদের তাঁরা অনুগামী, তাঁদের সঙ্গে ভাগবত বসেননি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এই ঘটনাকে মোহন ভাগবতের কৌশলী ভূমিকার সাফল্য বলে বর্ণনা করেছেন।
গত মাসে মুসলিম সমাজের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভাগবত। তাঁরা হলেন, প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি, দিল্লির প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জং, আরএলডির সহ সভাপতি শাহিদ সিদ্দিকি, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জামিরউদ্দিন শাহ এবং ব্যবসায়ী সাইদ শেরওয়ানির সঙ্গে বৈঠক করেন আরএসএস প্রধান। যেখানে দু পক্ষ পারস্পরিক উদ্বেগের কথা জানান এবং মাঝেমধ্যেই এরকম বৈঠকের প্রস্তাবে সম্মত হন।
এরপর গত সপ্তাহে তারই অঙ্গ হিসেবে ভাগবত অল ইন্ডিয়া ইমাম সংগঠনের (AIIO) প্রধান ইমাম উমর ইলিয়াসির সঙ্গে এক মসজিদে গিয়ে দেখা করেন। ভাগবতকে যিনি ‘রাষ্ট্রপিতা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ইলিয়াসি ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে বলেছেন, আশা করি এই আলোচনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তুলবে। কিন্তু, এই বৈঠক নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB)।
সংগঠনের কার্যকরী সদস্য কাসিম রসুল ইলিয়াস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, আরএসএস এবং মোহন ভাগবত যদি সত্যিই মুসলিম সমাজের কাছে পৌঁছাতে চান, তাহলে তাদের এমন কারও কাছে যেতে হবে, যাদের এই ধর্মের মানুষের মধ্যে প্রভাব আছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ল বোর্ড, জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দ (Jamiat Ulema-e-Hind) ও জামাত-ই-ইসলামির (Jamaat-e-Islami) নাম করেন।
ইলিয়াস বলেন, গত ২০ বছরে ভাগবত একবারের জন্যও আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেননি। মুসলিম সমাজের নাম করে যাঁরা ভাগবতের সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁরা আদপেই কতটুকু অংশ প্রশ্ন ইলিয়াসের। তিনি আরও বলেন, মোদি সরকারের (Modi Government) গত ৮ বছরে দেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে, ঘৃণাভাষণ দেওয়া হয়েছে তখন আরএসএস বা ভাগবতরা কোথায় ছিলেন! প্রকাশ্যে মুসলিম নিধনের ডাক, মুসলিম নারীদের ধর্ষণের হুমকি, হিজাব বিতর্ক (hijab) বা জ্ঞানবাপী (Gyanvapi) মসজিদ ইস্যুর সময় ভাগবত বা বিজেপি (BJP) চুপ ছিল কেন, প্রশ্ন তাঁর। ভাগবত কোনওদিন এসব নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি। আরএসএস একটিবারের জন্যও বলেনি, মুসলিমদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কাজ-প্রচার বন্ধ হোক। সরকারকেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেনি সঙ্ঘ। ফলে এখন ভ্রাতৃত্ববোধের কথা ওদের মুখে মানায় না। এসব বোকা বানানোর কৌশল, বলেন ইলিয়াস।