ব্রহ্মপুর (ওড়িশা): দিনে শিক্ষক। রাতে স্টেশনের কুলি। এটাই দিনরাতের জীবনচক্র ওড়িশার গঞ্জাম (Ganjam, Odisha) জেলার নাগেশু পাত্রর (Nageshu Patro)। ৩১ বছরের স্নাতকোত্তর এই যুবক দিনে অতিথি শিক্ষক একটি বেসরকারি কলেজের। সূর্য ডুবে চাঁদ উঠলেই ব্রহ্মপুর (Berhampur) স্টেশনে কুলির কাজ করেন। এই দুই সময়ের ফাঁকে আবার দরিদ্র পড়ুয়াদের জন্য একটি কোচিং ক্লাসও চালান। সেখানে পড়ানো শিক্ষকদের নিজের উপার্জন থেকে মাসিক বেতনও দেন পাত্র। সাদা চোখে আমরা যাকে ‘পাগলা’ বলি, সেই দেশোদ্ধারের খেপামিতেই বেঁচে থাকার অর্থকে যাঁরা অভিধানের পাতায় বদলে দিতে পারেন, সেই গুটিকয় মানুষের একজন পাত্র।
নাগেশুর বাবা রামা পাত্র ও মা করি এখন প্রায় বৃদ্ধ। ছাগল-ভেড়া চরানো তাঁদের পেশা ছিল। এহেন পরিবারের ছেলে হয়ে কারই বা লেখাপড়া হয়! তাই ছোটবেলাতেই বইখাতার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ। ২০০৬ সালে হাইস্কুল পরীক্ষায় বসা হয়নি। ছেলের পড়ার খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য বাবা-মায়ের ছিল না। ফলে তাঁকে গুজরাতের সুরাতে কাজের খোঁজে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: Himachal Pradesh: আজ হিমাচলে মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সুখুর শপথে থাকবেন রাহুল গান্ধী
নাগেশু বলেন, সেখানে পৌঁছে তিনি একটি বস্ত্র কারখানায় কাজ পান। বছর দুয়েক পর বাড়ি ফিরলেও অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে ফের হায়দরাবাদে পাঠানো হয়। সেখানে ২০১১ সালে স্টেশনের কুলি হিসেবে নাম লিপিবদ্ধ করেন। কুলির কাজ করতে করতেই করেসপন্ডেন্স কোর্সে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার মনস্থির করেন। এরপর ব্রহ্মপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাশ করেন। কিন্তু, সন্ধ্যায় কুলির কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন অর্থোপার্জনের জন্য।
পাত্র বলেন, কোভিডের পর থেকে জীবনটা কেমন বদলে যায়। করোনার প্রভাবে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের রুটিরুজি পুরো বন্ধ। তখন বসে থাকার চেয়ে আমি ক্লাস টেনের ছেলেদের পড়াতে শুরু করি। ওড়িয়া ভাষায় এমএ পাশ করা পাত্র আরও বলেন, এরপর একটি কোচিং সেন্টার খুলে ফেলি। যেখানে অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের তিনি হিন্দি ও ওড়িয়া পড়ান। অন্য বিষয়ের জন্য আলাদা শিক্ষক নিয়োগ করেন।
কুলির কাজ করে মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা রোজগার করেন পাত্র। তার বেশিরভাগটাই খরচ করেন কোচিং সেন্টার ও সেখানে পড়ানো শিক্ষকদের জন্য। কোচিংয়ে চারজন শিক্ষক আছেন। তাঁদের প্রত্যেককে ২-৩ হাজার টাকা করে মাসে দেন। নিজের শিক্ষকতা থেকে পাত্র রোজগার করেন প্রায় ৮ হাজার টাকা। কলেজের অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাসপ্রতি ২০০ টাকা সাম্মানিক পান তিনি। তবে সপ্তাহে সর্বাধিক সাতটি ক্লাস পান। তা সত্ত্বেও হাসিমুখে বলেন, আমি পড়িয়ে যেতে চাই। পড়ানোর মধ্যে আমি আলাদা একটা আনন্দ পাই। এইভাবেই কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মকে আদর্শ শিক্ষা দিয়ে চলেছেন ব্রহ্মপুরের নাগেশু পাত্র।