এর আগের কিস্তিতে বলেছিলাম যে সাংবাদিক, সংবাদকর্মী, সংবাদমাধ্যমের মালিক সম্পাদক এখন রাষ্ট্রের কাছে এক ভয়ঙ্কর বিপদ। তাঁরা বিপজ্জনক বলেই দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন না, তাঁদের প্রশ্নের মুখোমুখি তো হনই না, আবার এমনও নয় যে তাঁদের তিনি অগ্রাহ্য করেন, না ইগনোর করার মতোও ক্ষমতা তাঁর নেই। ক্ষমতা আছে, অতএব ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাঁদেরকে জেলে পুরছেন, আসলে হয় মাথা নোয়াও নাহলে জেলে পচে মরো। এই সহজ সরল সত্যটা তিনি বোঝাতে চান যা পৃথিবীর সর্বত্র স্বৈরতন্ত্রীরা করে থাকেন।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কররে লোপাট (পর্ব-৩)
হিটলার ক্ষমতায় আসার পরেই প্রায় সব খবরের কাগজ হয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল না হলে তারা বশ্যতা স্বীকার করেছিল, এটা ইতিহাস। স্তালিনের আমলে কোনও স্বাধীন খবরের কাগজ ছিল নাকি? নরেন্দ্র মোদির আমলেই বা থাকবে কেন? উমবের্তো একো মুসোলিনির আমলে জন্মেছেন ইতালিতে, তিনি ফ্যাসিজমের ১৪টা লক্ষণের কথা বলেছেন, সারা বিশ্ব ফ্যাসিজমকে বোঝা যায় এই ১৪ টা লক্ষণ দিয়ে। তার ৪ নম্বরেই আছে নো অ্যানালিটিক্যাল ক্রিটিসিজম, সমালোচনা নয়, ফ্যাসিস্টরা প্রশ্ন শুনতে পছন্দ করে না। মোদিজিও পছন্দ করেন না, তাই সাংবাদিক, সংবাদকর্মীরা জেলে, আমাদের সম্পাদক কৌস্তুভ রায়ও জেলে।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কররে লোপাট (পর্ব-২)
চলুন তালিকার দিকে নজর রাখা যাক। সবথেকে ওপরে অবশ্যই থাকবেন প্রবীর পুরকায়স্থ, সম্পাদক নিউজ ক্লিক, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগটা ঠিক কি? সেটা এখনও তাঁকেই জানানো হয়নি, অন্য সব ধারা তো আছেই, সেই সঙ্গে তার ওপরে ইউএপিএ (UAPA) আইনেও তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক ষাটোর্ধ্ব সাংবাদিক নাকি রাষ্ট্রের পক্ষে এত সাংবাদিক যে তাকে জামিনও দেওয়া যায় না। বহুচেষ্টায় জেল থেকে বেরিয়ে গৃহবন্দী হয়ে আছেন সাংবাদিক প্রবন্ধকার গৌতম নভলাখা, গত ৪ বছর ধরে তিনি জেলে, তিনিও এক সাংঘাতিক রাষ্ট্র বিরোধী সাংবাদিক। ২০১০ সালে গ্রেপ্তার করার পরে ২০১২-তে জামিন পেয়েছেন সীমা আজাদ, সম্পাদক, দস্তক, মামলা চলছে। বিশ্ব বিজয়, ইনিও সম্পাদক দস্তক, একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, ২ বছর জেল খাটার পরে জামিনে মুক্ত, মামলা চলছে। কেকে সাহিনা, আউটলুকের সাংবাদিক, অ্যান্টিসিপেটরি বেল নিয়ে বাইরে আছেন, মামলা চলছে। সিদ্দিক কাপ্পন, সাংবাদিক আজিমমুখম, ২০২০ তে এনাকে ইউএপিএ (UAPA)-তে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তিন বছর পরে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। পাওজেল ছাওবা, দ্য ফ্রন্টিয়ার মণিপুর এর মূখ্য সম্পাদক, জামিনে আছেন, ইউএপিএ (UAPA)-র মামলা চলছে। ধীরেন সাদোকপাম, ওই দ্য ফ্রন্টিয়ার মণিপুরের সাংবাদিক, তিনিও আপাতত জামিনে মুক্ত, মামলা চলছে। শ্যাম মীরা সিং, ফ্রি লান্স সাংবাদিক, জামিনে আছেন ইউএপিএ (UAPA)-তে মামলা চলছে। মানান দার, কাশ্মীরের ফোটো জার্নালিস্ট, দু’বছর জেলে থাকার পরে আপাতত জামিনে মুক্ত, মামলা চলছে।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কররে লোপাট (পর্ব-১)
কাশ্মীরের কথা তো বলাই বাহুল্য দু’ডজনের বেশি সাংবাদিক এখনও জেলে, জামিনও হয়নি, সেখানে তো গণতন্ত্রের অন্য খেলা চলছে। সারা দেশে ২০০-র বেশি বিভিন্ন আঞ্চলিক কাগজ বা টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক, সম্পাদক মালিকের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা চলছে। এবং খুব লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার মেসেজ, মাথাটা ঝোঁকাও, মামলা উঠে যাবে, পক্ষে থাকলে লাড্ডুও পাবে। আমাদের সম্পাদক মাথা ঝোঁকাননি, লাডডুও খাননি, তিনি জেলে, জামিনের জন্য আইনি লড়াই চলছে।
দেখুন ভিডিও: